অর্থভুবন ডেস্ক
আজ বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস। মানসিক স্বাস্থ্যের বিভিন্ন ধরন ও স্তরের ঝুঁকি বিশ্বে বড় সমস্যা হয়ে দেখা দিয়েছে। প্রযুক্তির উৎকর্ষের সঙ্গে মানসিকভাবে আমরা একাকী ও বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছি। এ থেকে মুক্তি পেতে প্রযুক্তিই পারে বড় ধরনের ভূমিকা রাখতে। এর সঠিক ও যথাযথ ব্যবহারে মানসিকভাবে শক্তিশালী থাকা এবং সুস্থতা বজায় রাখা সম্ভব।
ডিজিটাল থেরাপি
মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখার জন্য প্রযুক্তিকে ব্যবহার করা যায় ইতিবাচকভাবে। এর একটি রূপ ডিজিটাল থেরাপি নামে পরিচিত। মূলত এগুলো মোবাইল ফোনভিত্তিক অ্যাপ্লিকেশন বা অ্যাপ। প্লেস্টোর বা অ্যাপ স্টোর থেকে এগুলো ডাউনলোড করে নেওয়া যায়। আবার এই অ্যাপগুলোর কোনো কোনোটি ডেস্কটপ কম্পিউটার কিংবা ল্যাপটপ অথবা ট্যাবেও কাজ করে। এই ডিজিটাল থেরাপি প্ল্যাটফর্মগুলো সহজলভ্য ও কার্যকরী বিকল্প হিসেবে যেকোনো সময় ব্যবহার করা যায়। ডিজিটাল থেরাপি সেশনে সংকটকালীন যেকোনো মানসিক অবস্থা সম্পর্কে পরামর্শ নেওয়া সম্ভব।
যেকোনো সময় এই অ্যাপগুলোর মাধ্যমে থেরাপিস্টের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায় কিংবা নির্দিষ্ট কোনো বিষয় নিয়ে পড়া বা অডিও-ভিডিও দেখা ও শোনা যায়। এসব কনটেন্ট বিভিন্নভাবে মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সহায়তা করে। যাঁরা এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় চলাচল করতে পারেন না, তাঁদের জন্য ডিজিটাল থেরাপি জীবন রক্ষাকারী হিসেবে ভূমিকা রাখতে পারে।
এ রকম বেশ কিছু অ্যাপ আছে। যেমন মেন্টাভিও, মায়ো বা মেয়ো টেক, গুরুমিন্দ, এয়ার পারসন, ব্যাটারহেল্প, টকস্পেস, সানভেলো, কাম, টকস্পেস, হ্যাপিফাই, অরি ওয়াচ ইত্যাদি। এ বিষয়ে ছোটদের আলাদা অ্যাপ আছে। যেমন ব্রিদ, থিংক, ডু উইদ সিসেমি ইত্যাদি।
মননশীলতা ও মেডিটেশন অ্যাপ
মানসিক স্বাস্থ্যে মননশীলতা হচ্ছে অতীত ও ভবিষ্যৎ চিন্তা বাদ দিয়ে বর্তমানে মনোনিবেশ করা। এর নিয়মিত চর্চা মানসিক চাপ কমানোর পাশাপাশি রক্তচাপও কমায়। অন্যদিকে মেডিটেশন বা ধ্যান স্থিতিশীলতা ও মানসিক শান্তি নিয়ে আসে এবং স্পষ্টভাবে চিন্তা করতে সাহায্য করে।
অনেক অ্যাপে মেডিটেশন সেশন আছে। হাজার ব্যস্ততার মাঝেও সময় বেঁধে মেডিটেশন করা সম্ভব সেসব অ্যাপের মাধ্যমে। এ ছাড়া মননশীলতার ধারাবাহিক ব্যায়াম নিয়েও বেশ কিছু অ্যাপ রয়েছে। অ্যাপগুলোর মাধ্যমে যেকোনো সময় এবং যখন প্রয়োজন, ঠিক তখন সময় নির্ধারণ করে সেশনে অংশ নেওয়া যায়। এ রকম কিছু অ্যাপ হলো—হেডস্পেস, ইনসাইট টাইমার, মেডিটোপিয়া।
অনলাইন সহায়তা
মানসিক স্বাস্থ্যসম্পর্কিত সমস্যায় পড়লে একাকী সমাধান করা প্রায় অসম্ভব। অভ্যাস না থাকলেও এ সময় বন্ধুবান্ধব ও পরিবারের কাছাকাছি থাকা খুব জরুরি। তবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অনেক গ্রুপ এবং অনেক ওয়েবসাইটকে কাজে লাগিয়ে মানসিক বিষয়ে বিভিন্ন বিশেষজ্ঞের যোগাযোগ, পরামর্শ ও সহায়তা পাওয়া যায়। এসব গ্রুপে সদস্যদের মানসিক স্বাস্থ্যের অবস্থা ও গল্প যে কাউকে উদ্বুদ্ধ করতে পারে। একসময় উপলব্ধি আসতে পারে যে আপনি একা নন, এমন অনেক মানুষ আছে, যাঁরা মানসিকভাবে সংকটে আছেন। মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যার একটি বড় দিক হলো বিচ্ছিন্ন ও একাকিত্ব বোধ করা। অনলাইনে ঘরে বসেই নিজের যখন প্রয়োজন, তখন কোনো প্রকার বাছবিচার ছাড়াই সব নির্দ্বিধায় বলে ফেলা সম্ভব। অনুভূতি ও মানসিক অবস্থা শুনে ব্যক্তি অভিজ্ঞতা থেকে অনেকে বিভিন্ন থেরাপি ও পরামর্শ দিতে এগিয়ে আসেন।
টেলিহেলথ
টেলিহেলথ বা টেলিমেডিসিনের মাধ্যমে দূর থেকে স্বাস্থ্যসেবা দেওয়া হয়। এর অর্থ হলো বাসায় বসে চিকিৎসক ও বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলে চিকিৎসার জন্য সঠিক পরামর্শ নেওয়া। অনেক সময় ব্যস্ততা ও দূরত্বের জন্য চিকিৎসকের কাছে যাওয়া হয়ে ওঠে না। এ ক্ষেত্রে ফোনের মাধ্যমে কথা বলে রোগীর সঠিক চিকিৎসা করা সম্ভব।
শরীর ও মন একে অপরের সঙ্গে সম্পর্কিত। ব্যথা ও শারীরিক সমস্যা থাকলে সেটা মানসিক স্বাস্থ্যেও প্রভাব ফেলে। চাপ, অস্থিরতা ও
ঘুমে ব্যাঘাত ঘটে। এ ধরনের অবস্থায় সঠিক ওষুধ সেবন করতে হবে। শুধু থেরাপি নিয়েই মানসিক অবস্থার উন্নয়ন ঘটানো সম্ভব নয়।
শরীর ও মন সুস্থ রাখতে টেলিমেডিসিন কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে।
পরিধানযোগ্য ডিভাইস
আপনি কতটুকু হাঁটছেন বা হৃৎকম্প কত—সবকিছু সঠিকভাবে পরিমাপ করতে পারে পরিধানযোগ্য বিভিন্ন ডিভাইস। এর মাধ্যমে মানসিক স্বাস্থ্যের পাশাপাশি শারীরিক স্বাস্থ্যের বিষয়ে নজর রাখা সম্ভব।
উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, অ্যাপল ওয়াচের সেন্সর, প্যারামিটার ও স্বাস্থ্য অ্যাপ হৃৎকম্প, স্ট্রেস লেবেল ও অন্যান্য অনুভূতি পরিমাপ করতে পারে। খারাপ সময় এড়িয়ে যেতে নির্দিষ্ট সেটআপ করলে আগে থেকেই সতর্ক হওয়া যায়। কিছু ডিভাইস ঘুমের ধরন পর্যবেক্ষণ করতে পারে। কখন বিশ্রাম নিতে হবে, শারীরিক কার্যক্রম ও মননশীলতার চর্চা করতে হবে—সব জানা যায় এসব ডিভাইসের মাধ্যমে।
সূত্র: ফোর্বস, অ্যাপল ম্যাগাজিন