সম্পাদকীয়
আপনাদের মনে হতেই পারে যে এই লোকটা তৃতীয় বিশ্ব থেকে উঠে এসেছে, গল্প লেখার মতো মানসিক শান্তি এ পেল কোথায়? আপনাদের এই মনে হওয়া যথার্থ। আমি এমন এক বিশ্ব থেকে এসেছি, যা ঋণের ভারে নুইয়ে রয়েছে। সেই ঋণ চোকাতে গিয়ে দেশবাসীকে প্রায় অনাহারের মুখোমুখি দাঁড়াতে হচ্ছে। এশিয়ায় কিছু মানুষ ভেসে যাচ্ছে বন্যায়, আফ্রিকার দুর্ভিক্ষে মারা যাচ্ছে অনেকে।
দক্ষিণ আফ্রিকায় লাখ লাখ মানুষ বৈষম্যের শিকার হচ্ছে আজকের মানবাধিকার রক্ষার যুগেও। কারণ, তাদের মানব বলে গণ্যই করা হয় না। পশ্চিম তীর ও গাজায় অনেক মানুষ হারিয়ে যাচ্ছে, যদিও সেটা তাদেরই জমি। তাদের বাপ-ঠাকুরদা সেখানেই বসবাস করে এসেছেন যুগ যুগ ধরে। আদিম মানবেরা যেমন প্রথমেই তাদের একটি অধিকার সুরক্ষিত করেছিল, ঠিক সে রকমই আজ গাজাবাসী তাদের মৌলিক অধিকারটুকুর জন্য আওয়াজ তুলেছে। সেটা হলো, নিজেদের জন্য একটি ভূখণ্ড, যাকে অন্যরাও স্বীকৃতি দেবে তাদের নিজস্ব বলে। এই সংগত দাবির জবাবে তাদের হাড়গোড় ভেঙে দেওয়া হয়েছে, গুলিবর্ষণ হয়েছে বাচ্চা-বুড়ো-নারী-পুরুষনির্বিশেষে। আস্তানা ধ্বংস করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বন্দিশিবিরে। দেড় কোটি আরব ঘিরে থেকেছে তাদের। এরপর শুধুই ক্ষোভ আর যন্ত্রণা।
অতএব যেটা বলছিলাম, তৃতীয় বিশ্ব থেকে আসা একজন মানুষ কীভাবে গল্প লেখার মতো মানসিক প্রশান্তি খুঁজে পাবে? আমাদের সৌভাগ্য যে শিল্প অত্যন্ত সহানুভূতিসম্পন্ন এবং উদার। সে যেমন সুখী মানুষের সঙ্গী, তেমনি সে দুর্দশাগ্রস্তকেও ছেড়ে যায় না। দুই ক্ষেত্রেই সে সুবিধাজনক শর্ত দেয় ভেতরে জমে থাকা কথা প্রকাশের।
সভ্যতার ইতিহাসের এই মুহূর্তে পৌঁছে আজ এটা কিছুতেই মেনে নেওয়া যায় না যে মানবাত্মার যন্ত্রণার স্বর শূন্যেই মিলিয়ে যাবে। এ ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই যে, মানবজাতি সময়ের বহু ঝড়ঝাপটা কাটিয়ে এসেছে এবং আজকের আমাদের এই সময়ে দাঁড়িয়ে আশা তৈরি হয়েছে, বিশ্বের বৃহৎ শক্তিগুলো নিজেদের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সমঝোতা বজায় রাখবে।
মিসরীয় সাহিত্যিক নাগিব মাহফুজ ১৯৮৮ সালে নোবেল পুরস্কার পান।