অর্থভুবন প্রতিবেদক
শরতের বেলা শেষে স্বজন, সুহৃদ, অনুরাগী, সঙ্গী ও সহযোগী কাছের মানুষকে নিয়ে অনুষ্ঠিত হলো প্রীতিসম্মিলনী। উপলক্ষ কবি, প্রাবন্ধিক, অনুবাদক প্রথম আলোর নির্বাহী সম্পাদক সাজ্জাদ শরিফের ৬০তম জন্মদিন। দেশের কাব্য, সাহিত্য, সংগীত, শিল্প, সংস্কৃতি, সাংবাদিকতার অঙ্গন আলোকিত করা প্রবীণ ও নবীন প্রতিভাবানদের সমাগমে, শুভেচ্ছায়, কল্যাণ কামনায় আনন্দময় হয়ে উঠেছিল অনুষ্ঠান।
আজ শনিবার সন্ধ্যায় বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র মিলনায়তনে ‘প্রাণে জ্বলে ওঠে আরও প্রাণ’ শীর্ষক এই আয়োজন শুরু হয়েছিল আনন্দের গান দিয়েই। মালা পারভেজ গেয়েছেন ‘আনন্দধারা বহিছে ভুবনে’। অনাড়ম্বর, তবে আন্তরিকতায় উষ্ণ অনুষ্ঠানের শুরুতে কবি সাজ্জাদ শরিফকে নিয়ে নির্মিত একটি প্রামাণ্যচিত্র দেখানো হয়। ১৯৬৩ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর কবির জন্ম। জন্মদিনের আগের দিনের এই আয়োজনে ছিল স্মৃতিচারণা, আলোচনা আর তাঁর কাজের মূল্যায়ন।
শুরুতেই কবি সাজ্জাদ শরিফের শৈশব ও তাঁর বেড়ে ওঠা নিয়ে অল্প কথায় অনেক কথা বলে গেলেন বড় ভাই কবি ফরিদ কবির। পুরান ঢাকার জিন্দাবাহার লেনে এমন পরিবেশে ও পরিবারে তাঁদের জন্ম ও বেড় ওঠা, যেখানে শিল্প–সাহিত্যচর্চার কোনো ঐতিহ্যই ছিল না। এক জন্মদিনে উপহার পাওয়া তিনটি বই বদলে দিয়েছিল তাঁদের জীবনের পথ। সেই বই পড়ে দুই ভাইয়ের আগ্রহ জন্মায় পাঠে। তারপর ক্রমেই বাড়ল পাঠানুরাগ, তারপর লেখালেখি। সেখান থেকে ধীরে ধীরে বর্তমান পর্যায়। বড় ভাই কৃতী ছোট ভাইকে এই বলে শেষ করলেন, ‘আজ বাবা-মা এই আয়োজন দেখলে আনন্দিত হতেন। তবে আমার এটা বলতে ভালো লাগছে, সাজ্জাদ আমার ছোট ভাই।’ আর বাবাকে নিয়ে নিজের অনুভবের কথা বলেছে কবির পুত্র শরণ্য শিখর।
অসুস্থতা সত্ত্বেও বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের সভাপতি অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ অনুষ্ঠানে এসেছিলেন কবি সাজ্জাদ শরিফকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাতে। তিনি বলেন, একটা সময় তরুণ বয়সে সাজ্জাদ শরিফ ও তাঁর বন্ধুরা বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে শিল্প-সাহিত্য নিয়ে দিনরাত তুমুল আড্ডায় মেতেছেন। তাঁর যে ৬০ বছর হলো, এটা অবিশ্বাস্য বলে মনে হয়। তিনি বলেন, মানুষকে নিজেকে গড়ে তুলতে হয়। মানুষ হয়ে উঠতে হয়। অন্যের এই দায় থাকে না। মানুষ এভাবে নিজেকে গড়ে তোলার ভেতর দিয়ে সমাজ–সংস্কৃতিতে তাঁর ভূমিকা রাখে। যদিও এখন এককেন্দ্রিক পৃথিবীতে অর্থই প্রধান নিয়ন্ত্রকের ভূমিকা নিয়েছে, তবু মানুষকে মানবিকতার দায়বোধ থেকে সরে যাওয়া চলবে না।
বিদেশে অবস্থান করায় অনুষ্ঠানে ভিডিও বার্তায় শুভেচ্ছা জানান অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম। তিনি বলেন, সাজ্জাদ শরিফের কবিতা বুদ্ধিদীপ্ত, শাণিত, সংহত, গভীর অন্তর্দৃষ্টিতে উদ্ভাসিত। প্রবন্ধ চিন্তার নতুন দুয়ার খুলে দেয়। কবির বয়স হয়তো বাড়বে, কিন্তু কবিতার বয়স বাড়বে না।
ভিডিও বার্তায় আরও শুভেচ্ছা জানান কলকাতার কবি মৃদুল দাশগুপ্ত ও গৌতম চৌধুরী।
সাজ্জাদ শরিফের কবিতা ও প্রবন্ধের মূল্যায়ন করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মোহাম্মদ আজম বলেন, তিনি কাব্যে পরিমিত আবেগ ও প্রবন্ধে আধুনিক ও ধ্রুপদি রীতির সমন্বয়ে রচনায় নিজস্ব ধরন সৃষ্টি করতে পেরেছেন।নিজেদের বন্ধুত্ব নিয়ে বললেন শিল্পী দিলারা বেগম জলি। আশির দশকের কবিতার নতুন ধারার আন্দোলন ও সাহিত্যের ছোট পত্রিকা গাণ্ডিব প্রকাশের দিনগুলোর স্মৃতিচারণা করেন কবি শান্তনু চৌধুরী।
কবি সাজ্জাদ শরিফ নিজের কয়েকটি কবিতা পড়ে শোনান। জিন্দাবাহার থেকে তাঁর সাহিত্য-সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে উঠে আসার দিনগুলো স্মৃতিচারণা করেন। অনুষ্ঠানে আসা ও তাঁকে শুভেচ্ছা জানানোর জন্য সমবেত সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন ও ধন্যবাদ জানান। সঞ্চালনা করেন কবি জাফর আহমদ রাশেদ। আলোচনার মাঝে সাজ্জাদ শরিফের কবিতা থেকে গান গেয়েছেন ওয়ার্দা আশরাফ। অনুষ্ঠান শেষ হয় তাঁর গাওয়া সাজ্জাদ শরিফের অনূদিত জোয়ান বায়েজের গান ‘বাংলাদেশ বাংলাদেশ’ গানটি দিয়ে।