অর্থভুবন ডেস্ক
রবিউল আউয়াল মাস চলছে। এ মাসে মহানবী (সা.)-এর জন্ম ও মৃত্যু হয়। ফলে রবিউল আউয়াল এলে নবীজির আলোচনা হয় সর্বত্র। কেবল আলোচনা করলেই হবে না, তাঁর আদর্শ অনুসরণই হবে প্রকৃত কাজ। ইসলামের নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর পুরো জীবনই মানুষের জন্য উত্তম অনুসরণীয়। আমাদের জন্য তাঁর আদর্শ অনুসরণ করা সুন্নত। নবীজির সুন্নত যারা চর্চা করবেন এবং অন্যদের মাঝে এর প্রসার ঘটাবেন তাদের জন্য রয়েছে মহা পুরস্কার। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘উম্মাহর অস্থিরতার সময় যে আমার সুন্নতকে ধারণ করবে, সে একশ শহিদের মর্যাদা লাভ করবে’ (ইবনে মাজা : ২/৩২৭)। আমাদের দৈনন্দিন জীবনের সঙ্গে সম্পৃক্ত কিছু সুন্নতের আলোচনা তুলে ধরা হলো।
জুতা পরিধান ও খোলার সুন্নত : জুতা পরার সময় ডান পায়ে আগে পরা এবং খোলার সময় বাম পা থেকে আগে খোলা সুন্নত। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যখন তোমাদের কেউ জুতা পরিধান করবে, তখন প্রথমে ডান পায়ে পরিধান করবে। আর যখন জুতা খুলবে, তখন বাম পা থেকে আগে খুলবে। যাতে ডান দিকটা পরিধানের সময় প্রথম হয় এবং খোলার সময় শেষ হয়।’ (বুখারি : ৫৮৫৫)
পানি পানের সুন্নত : বসে পানি পান করা সুন্নত। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের কেউ যেন দাঁড়িয়ে পান না করে। কেউ ভুলে পান করলে সে যেন তা বমি করে ফেলে’ (মুসলিম : ২০২৬)। পান করার সময় পাত্রের বাইরে নিঃশ্বাস ফেলা এবং তিনবারে পান করা সুন্নত। আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) পান করার সময় তিনবার শ্বাস গ্রহণ করতেন এবং বলতেন, এতে উত্তমরূপে তৃপ্তি লাভ হয়, পিপাসার ক্লেশ দ্রুত দূর হয় এবং অতি সহজে গলাধঃকরণ হয়।’ (মুসলিম : ২০২৮)
সালাম দেওয়া : পরিচিত অপরিচিত সবাইকে সালাম দেওয়া সুন্নত। আবদুল্লাহ বিন আমর (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক লোক রাসুল (সা.)-এর কাছে জানতে চাইল, ইসলামের কোন কাজ সবচাইতে উত্তম? রাসুল (সা.) বললেনÑতুমি লোকদের আহার করাবে এবং পরিচিত-অপরিচিত সবাইকে সালাম দেবে।’ (বুখারি : ১২)
ঘরের নফল আদায় : নফল নামাজ ঘরে আদায় করা সুন্নত। ইবনে উমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা তোমাদের ঘরেও কিছু নামাজ আদায় করো। ঘরকে কবরে পরিণত করো না’ (বুখারি : ৪৩২)। অন্য হাদিসে রাসুল (সা.) বলেছেন, তোমরা তোমাদের ঘরেও নামাজ আদায় করো। কারণ, ফরজ নামাজ ব্যতীত অন্য নামাজ ঘরে আদায় করা উত্তম।’ (বুখারি : ৭৩১)
ঘুমানোর আগে বিছানা পরিষ্কার : ঘুমানোর আগে বিছানা ঝেড়ে নেওয়া সুন্নত। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী করীম (সা.) বলেছেন, যখন তোমাদের কেউ শয্যা গ্রহণ করতে যায়, সে যেন কাপড়ের কিছু অংশ দিয়ে বিছানা ঝেড়ে নেয়। কারণ, তার অগোচরে বিছানায় কষ্টদায়ক কোনো কিছু থাকতে পারে।’ (বুখারি : ৬৩২০)
সুরমা ব্যবহার :ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, তোমাদের জন্য উত্তম সুরমা হলো ইসমিদ। নিশ্চয়ই এতে চোখের দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি পায় এবং পলকের পশম উৎপন্ন হয়’ (নাসায়ি : ৫১১৩)। অন্য হাদিসে এসেছে, রাসুল (সা.) বলেছেন, ঘুমানোর আগে তোমাদের সুরমা ব্যবহার করা উচিত। কেননা তা চোখকে পরিষ্কার করে এবং চোখের ভ্রু বৃদ্ধি করে।’ (আবু দাউদ : ৩৮৭৮)
ওজু করে ঘুমানো : ইবনে উমর (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি ওজু অবস্থায় রাতে নিদ্রা যায়, একজন ফেরেশতা তার সঙ্গে অবস্থান করে। অতঃপর যখনই সে ঘুম থেকে জাগ্রত হয় তখনই ফেরেশতা তার জন্য দোয়া করে, হে আল্লাহ! তুমি তোমার এই বান্দাকে ক্ষমা করে দাও। কেননা সে ওজু অবস্থায় ঘুমিয়েছে।’ (ইবনে হিব্বান : ৩/৩২৭)
নিয়মিত মিসওয়াক : মিসওয়াক করা সুন্নত। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, যদি আমার উম্মত বা মানুষের জন্য কষ্টকর না হতো, তবে আমি প্রত্যেক নামাজের সময় মিসওয়াক করার আদেশ দিতাম’ (বুখারি : ৮৮৭)। অন্য হাদিসে আছে, মিসওয়াক মুখের জন্য পরিচ্ছন্নতা এবং রবের সন্তুষ্টির মাধ্যম।’ (মুসলিম : ২৬১)
আসুন, দৈনন্দিন চর্চিত এই সুন্নতগুলো আমরা গুরুত্বে সঙ্গে পালন করার চেষ্টা করি। আল্লাহ আমাদের সহায় হোন। আমিন।