শামছুল হক
পদ্মা রেল সংযোগ প্রকল্পের আংশিক পথ চালু হচ্ছে । আমার ভাবনা অবশ্য পুরো পথ নিয়ে। আমাদের বড় ও বহুমুখী অর্থনীতির জন্য বহুমাত্রিক যোগাযোগ ব্যবস্থার একটা মেরুদণ্ড দরকার। এটা এত দিন আমাদের ছিল না।
এই রেল সংযোগ টেকসই যোগাযোগের মেরুদণ্ড তৈরি করবে। সড়কব্যবস্থা কিছুদিনের জন্য সক্ষম থাকে। কিন্তু এটা টেকসই হয় না।
দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে সরাসরি যাত্রী ও পণ্য পরিবহনের দ্বার উন্মোচন হতে যাচ্ছে। একটা সময় দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে, বিশেষ করে খুলনার উন্নত শিল্পাঞ্চল ছিল। বিভিন্ন বাস্তবতায় সেটা পিছিয়ে যায়।
আরেকটি বিষয় লক্ষণীয়, চীন বা অন্য যারা কৌশলী দেশ তারা রাজধানীর ওপর চাপ কমাতে কৌশলগত নানা উদ্যোগ নেয়। আমরা যদি আমাদের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে এই করিডরের মাধ্যমে ওখানেই কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করে দিই, তাহলে ঢাকার ওপর চাপ কমবে। অনেককেই আর ঢাকায় এসে চাকরি করতে হবে না।
খেয়াল রাখতে হবে, এই অবকাঠামো শুধু শিল্পাঞ্চল বা অর্থনৈতিক ব্যবহারের জন্যই থাকবে না, পাশাপাশি ওই অঞ্চলের পর্যটককেন্দ্রে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। সুন্দরবন, কুয়াকাটাভিত্তিক পর্যটন এলাকাগুলো যোগাযোগ ভালো না থাকার কারণে পিছিয়ে ছিল। এখন একটা সম্ভাবনা তৈরি হচ্ছে। পাশাপাশি আমাদের পায়রা বন্দর হচ্ছে, যেটা কিনা মোংলা বন্দরের বিকল্প হবে। এ ক্ষেত্রে বন্দর, অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং রেল সংযোগ দারুণভাবে নতুন সম্ভাবনা তৈরি করবে। বরিশাল অঞ্চলের যারা কখনো রেল দেখেনি, যারা নৌপথের ওপর নির্ভরশীল ছিল, তারা সড়কের সঙ্গে রেল পেলে যোগাযোগে বিকল্প খুঁজে পাবে।
দেশে ভারসাম্যপূর্ণ উন্নয়নের যে আকাঙ্ক্ষা, এই সংযোগের মাধ্যমে তারও সুযোগ তৈরি হলো। সুযোগ আমরা কিভাবে কাজে লাগাব এখন সেটা ভাবতে হবে। শুধু অবকাঠামো উন্নয়ন করলেই হবে না, এর উপযোগিতা তৈরি করতে হবে। আমাদের ভূমি ব্যবহারকেও সমন্বিত করতে হবে। আমাদের ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে যে সম্ভাবনা আছে সে সুযোগটাকেও কাজে লাগাতে হবে।
আমাদের মনে রাখতে হবে, এই রেলপথ ট্রান্স এশিয়ান হাইওয়ের সঙ্গে সমন্বয় করে করা হয়েছে। বাংলাদেশে এই প্রথম কোনো রেলে ধারণক্ষমতা ২৫ টন ধরা হয়েছে। এটা কিন্তু অন্য কোনো রেলপথে নেই। বিবেচনাটা হলো, অন্য দেশ থেকে যে ভারী বাহনগুলো আসবে সেগুলোও এই পথে নেওয়া যাবে।
ভারতের যে ল্যান্ডলক (স্থলঘেরা) এলাকাগুলো রয়েছে, বিশেষ করে সেভেন সিস্টার, তাদের এখন কলকাতা থেকে আগরতলা যেতে যে দূরত্ব ও সময় লাগে তার অর্ধেক কমে যাবে এই পথে যাতায়াত করলে। এই পথ ব্যবহার করে তারা যাত্রী ও পণ্য দুই-ই পরিবহন করতে পারবে। অর্থাত্ অন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক সংযোগেও আমরা যুক্ত হলাম এবং এখান থেকে আমরা আয় করতে পারব।
শামছুল হক : অবকাঠামো ও যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ; অধ্যাপক, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট)।