অর্থভুবন প্রতিবেদক
বৃদ্ধ বয়সে দৈহিক পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে মানসিক পরিবর্তনও ঘটে। এ পরিবর্তনগুলোর সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়ার জন্য সঠিক খাদ্যব্যবস্থাপনা এবং জীবনযাপনের পরিবর্তন বা পরিমার্জন করা প্রয়োজন।
▶ বৃদ্ধ বয়সে মৗল বিপাকের হার কমে যায়, তাই শক্তি চাহিদাও হ্রাস পায়। এজন্য এ বয়সে সম্পৃক্ত চর্বি, যেমন-ঘন সর যুক্ত দুধ, ঘি, মাখন বা এ জাতীয় খাবার খাওয়া উচিত নয়। আবার বেশি মিষ্টি বা মিষ্টি জাতীয় খাবারও গ্রহণ করা ঠিক নয়।
▶ বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রক্তস্বল্পতা বা হজমের ব্যাঘাত ঘটে। তাই আয়রনের পরিশোষণ কিছুটা কমে যায়। আয়রনসমৃদ্ধ খাবার, যেমন-কলিজা, মাছ, মাংস (মুরগির মাংস), ডিম, কচি সবুজ শাকপাতা, বেদানা, কিশমিশ, খেজুর এগুলো খেয়ে এরপরে লেবুর রস, আমলকী, পাকা পেয়ারা অর্থাৎ ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া উচিত।
▶ হাড় থেকে ক্যালসিয়াম কমে যাওয়া দাঁতের ক্ষয় হওয়া, মহিলাদের মেরুদণ্ডের হাড় বেঁকে যাওয়া বা ক্ষয় হয়ে যাওয়া ইত্যাদি সাধারণ সমস্যা। সাধারণত হাড়ের দুর্বলতা ভিটামিন ডি-এর অভাবেও হয়ে থাকে। তাই প্রতিদিন সূর্যালোকে ১৫ থেকে ২০ মিনিট সহনশীল মাত্রায় থাকা উচিত। ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ ছোট মাছ, বাদামের গুঁড়া, দুধ, ছানা, পনির অল্প পরিমাণে গ্রহণ করা উচিত।
▶ হৃৎপিণ্ডের পাম্প করার ক্ষমতা কমে আসে এ বয়সে। তাই ক্যালরি খরচ হওয়ার ক্ষমতাও কমে যায়। অতিরিক্ত খাবার গ্রহণ, বেশি ক্যালরিযুক্ত, বেশি চর্বিযুক্ত খাবার গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
▶ বয়স্ক মহিলাদের প্রধান সমস্যা ইউরিন ইনফেকশন। মূলত বয়স্কদের রেচনতন্ত্রের ক্ষমতা হ্রাস পায়। তাই কিডনি রোগ না থাকলে প্রচুর পরিমাণে বিশুদ্ধ পানি ও তরল জাতীয় পানীয় পান করা উচিত। তবে কোমল পানীয় ও বাইরের ফলের রস, ক্যানের জুস যেগুলোতে প্রিজারভেটিভ আছে, এ ধরনের পানীয় গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকতে হবে। দেহে যদি পানি জমে, তাহলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
▶ কোষ্ঠকাঠিন্য, দুর্বলতা ইত্যাদি বয়স্ক মানুষের শারীরিক সমস্যা। এ সময় সহজপাচ্য খাবার গ্রহণ করতে হবে। নরম ভাত, নরম শাকপাতা, রসালো নরম পাকা ফল; যেমন- পাকা কলা, পাকা পেঁপে, পেয়ারা; যে কোনো মৌসুমি ফল গ্রহণ করা যেতে পারে। পরিমিত, কিন্তু পর্যাপ্ত পানি ও পাতলা দুধ একটু অর্গানিক হলুদের গুঁড়া দিয়ে এবং গোলমরিচের গুঁড়া দিয়ে খাওয়া, তুলসী পাতার পানি, মেথি গুঁড়ার পানি ইত্যাদি খাওয়া যেতে পারে; যদি তার অন্য কোনো বিশেষ রোগ যেমন- কিডনি রোগ না থাকে।
▶ খুব বেশি প্রোটিন বা ফ্যাট সমৃদ্ধ খাবার দেওয়া যাবে না, এতে হজমের গোলযোগ দেখা যেতে পারে।
▶ ভিটামিন এবং মিনারেলের অভাব দেখা যায়। তাজা, কচি শাকসবজি এবং মৌসুমি ফল গ্রহণ করতে হবে।
▶ ক্যালসিয়াম এবং লৌহের অভাব বেশি দেখা যায়। দুধের তৈরি খাবারে যদি সমস্যা হয়, তাহলে দই, ছানা, পনির এবং লৌহের জন্য সপ্তাহে বা ১৫ দিনে একদিন কলিজা দেওয়া যেতে পারে। ডাক্তারের পরামর্শে সাপ্লিমেন্ট দেওয়া যেতে পারে।
▶ বৃদ্ধ বয়সে মানুষ শিশুর মতো হয়ে যায়। তাই তাদের খাবারের পছন্দ-অপছন্দ বিবেচনা করে, মানসিক আনন্দ নিয়ে যাতে খেতে পারে, সেজন্য পাঁচমিশালি, হজম উপযোগী, দেখতে আকর্ষণীয় সেরকম সুষম খাবার দেওয়া উচিত।
লেখক : নিউট্রিশন এবং ডায়েট কনসালটেন্ট, মেরিন হেলথকেয়ার, খিলক্ষেত, ঢাকা।