অর্থভুবন প্রতিবেদক
সেই ছোটবেলা থেকে দেখে আসছি, ৫০ টাকার নোটে একটি মসজিদের ছবি। বড় হয়ে যখন বুঝলাম, এটি বাঘা মসজিদের ছবি, সঙ্গে সঙ্গে ঠিক করে ফেললাম, দেখতে যাব।রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুবাদে বাঘায় কিছু বন্ধুবান্ধবও আছে। তাদেরই একজন শিশির। তার কাঁধে ভর করে এক শুক্রবার রাজশাহী থেকে প্রায় ৪৫ কিলোমিটার দূরে বাঘায় গিয়ে উপস্থিত হলাম। প্রায় লাল ইটের প্রাচীন এই স্থাপনা চোখের সামনে দেখে তাজ্জব বনে গেলাম।
খুব বড় নয়। উইকিপিডিয়া জানাচ্ছে, মসজিদটির দৈর্ঘ্য ৭৫ ফুট এবং প্রস্থ ৪২ ফুট, উচ্চতা ২৪ ফুট ৬ ইঞ্চি। দেয়ালের পুরুত্ব ৮ ফুট! যেখানে এখনকার যেকোনো বাড়ির দেয়ালের পুরুত্ব ৫ থেকে ১০ কিংবা খুব বেশি হলে ১৫ ইঞ্চি। সেই ১৫২৩ সালে রাজশাহীর প্রত্যন্ত বাঘা নামের জনপদে এই দৃষ্টিনন্দন মসজিদ প্রতিষ্ঠা করেন সুলতান নাসিরউদ্দিন নুসরাত শাহ। এটি শুধু মসজিদই নয়, বলা চলে এক দারুণ ক্যানভাসও বটে। পুরো মসজিদের দেয়ালে রয়েছে টেরাকোটার প্ল্যাক। এ রকম প্ল্যাক দেখেছি বাঘার পাশের পুঠিয়া রাজবাড়ির মন্দিরের গায়ে। সেগুলো দেখতে মসজিদের দিকে এগিয়ে গেলাম। যতই এগিয়ে যাচ্ছি, ততই মন খারাপ হচ্ছে। কারণ, টেরাকোটাগুলো ক্ষয়ে যাচ্ছে রোদ-বৃষ্টিতে। বিষয়টি প্রাকৃতিক। কিন্তু দেখে খারাপ লাগছে যে প্রাচীন স্মৃতি বহন করে চলা এই মসজিদের সৌন্দর্য দিন দিন ম্লান হয়ে যাচ্ছে।
যাহোক, পুরো মসজিদ ঘুরলাম। বেশ খুঁটিয়ে দেখলাম টেরাকোটা। এখানকার টেরাকোটাগুলোতে মানুষের ফিগার নেই। আছে জ্যামিতিক আর ফুল, ফল, লতাপাতার নকশা। আমের মোটিফ দেখে ভালো লাগল। সেই প্রাচীনকালেও বাঘা এলাকায় আমের প্রাচুর্য ছিল।
সেই ছোটবেলা থেকে ৫০ টাকার নোটে দেখা এক প্রাচীন স্থাপনা চাক্ষুষ করে মনটা ভালো হয়ে গেল।