Friday, January 17, 2025

৪৮ বছর ধরে ধাত্রীসেবা

মাত্র ১৩ বছর বয়সেই বিয়ে হয়েছে মাদারীপুরের আনোয়ারা রাজ্জাক আনু চৌধুরীর। এরপর অপ্রাপ্তবয়সে মা হতে হয় তাঁকে। পরপর চার ছেলেসন্তানের মা হয়েও থেমে থাকেননি। অনেক সংগ্রাম ও মেধা দিয়ে মানুষ ও সমাজের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন আনোয়ারা রাজ্জাক। দীর্ঘ ৪৮ বছর ধরে ধাত্রীসেবার কাজ করে যাচ্ছেন তিনি। তিন হাজারের বেশি মাকে ধাত্রীসেবা দিয়েছেন, যা সমাজের জন্য এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।

১৯৭৫ সাল থেকে এখন পর্যন্ত অস্ত্রোপচার ছাড়াই ধাত্রীর সেবা দেওয়া নেশায় পরিণত হয়েছে তাঁর। যদিও বার্ধক্যের কারণে এখন আর তেমন একটা এ সেবা দিতে পারেন না। তবু অনেকে তাঁকে ডেকে নিয়ে যান।
 

মাদারীপুর সদর উপজেলার ঝাউদি, হোগলপাতিয়া, দুধখালী, পাঁচখোলা, রাস্তি, লক্ষ্মীগঞ্জ, মাদ্রা, টুবিয়া, ছয়না, চরমুগরিয়া, হাজীর হাওয়া, এওজ, কালীর বাজারসহ নানা গ্রামের মানুষ এই সংগ্রামী নারীর কাছে আসতেন। বর্তমানে তিনি মাদারীপুর শহরের পানিছত্র এলাকায় বাড়ি করে বাস করছেন।

মাদারীপুর শহরের শকুনী এলাকার গৃহবধূ ফারজানা আক্তার মুন্নি বলেন, ‘তিনি শুধু প্রসবকালীন সেবাই নয়, নারীদের যেকোনো নির্যাতনের ব্যাপারে এগিয়ে আসেন। তাঁর হাতেই আমার প্রথম সন্তান হয়েছে।’

পানিছত্র এলাকার আরজু বেগম বলেন, ‘আমার তিন সন্তান আনোয়ারা রাজ্জাকের হাতেই হয়েছে। কোনো অপারেশন লাগেনি। এ জন্য তাঁর কাছে আমি কৃতজ্ঞ।’

১৯৫২ সালের ৩ জুন মাদারীপুর শহরের ৪ নম্বর শকুনী এলাকায় জন্ম আনোয়ারা রাজ্জাক আনু চৌধুরীর। বাবা মরহুম চৌধুরী আতাহার উদ্দীন, মা সেতারা বেগম। অষ্টম শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় মো. আব্দুর রাজ্জাক মিয়ার সঙ্গে বিয়ে হয় তাঁর। বিয়ের পরও তিনি স্বামীর উৎসাহ ও সহযোগিতায় পড়াশোনা চালিয়ে যান।

স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে এসএসসি ও ১৯৭৪ সালে এইচএসসি পাস করেন আনোয়ারা রাজ্জাক। তখন স্বামী পৌরসভায় চাকরি করতেন। তিনিও সংসার সামলে একটি বেসরকারি সংস্থায় চাকরি নেন। সেই সময় থেকে তিনি নারীদের নিয়ে কাজ করা শুরু করেন।

বিভিন্ন নির্যাতিত নারীর পাশে থেকে সহযোগিতা করে আসছেন। দীর্ঘ সাত বছর ঝাউদি ইউনিয়ন পরিষদের মহিলা সদস্য হয়ে সমাজের জন্য আরও বেশি কাজ করার সুযোগ পান আনোয়ারা।

সংসার, চার সন্তান মানুষ করাসহ সামাজিক কাজের পাশাপাশি সাহিত্যচর্চাও করে যাচ্ছেন এই বহু প্রতিভাধর নারী। এরই মধ্যে তাঁর চারটি কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। সাহিত্য ও চিকিৎসার জন্য তিনি পেয়েছেন অনেক সম্মাননা।

ধাত্রী ও সমাজসেবক আনোয়ারা রাজ্জাক আনু চৌধুরী বলেন, ‘আমার শাশুড়ি বলতেন, বিনা টাকায় ১০১টা মায়ের সন্তান প্রসবে সহযোগিতা করলে তাঁর আর কবরের আজাব হবে না। ধর্মীয় এ চিন্তা থেকেই ধাত্রীর কাজ শুরু করি।’

মাদারীপুরের জাগো মানবতা উন্নয়ন সংস্থার সাধারণ সম্পাদক ফারজানা আক্তার বলেন, ‘আমি আনোয়ারা রাজ্জাককে চিনি ও জানি। তাঁর কাছে গেলে তিনি নারীদের প্রয়োজন অনুযায়ী সহযোগিতা করে থাকেন।’

মাদারীপুর মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তরের উপপরিচালকের কার্যালয়ের অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত উপপরিচালক মাহমুদা আক্তার কণা বলেন, ‘আনোয়ারা রাজ্জাক অনেক বছর ধরে ধাত্রীসেবা দিয়ে আসছেন। বিশেষ করে তিনি সব সময় অসহায় নারীদের পাশে থেকে তাঁর সাধ্যমতো সহযোগিতা করেছেন।  জেলাজুড়ে তাঁর অনেক সুনাম আছে।’ 

spot_imgspot_img

ছবিটা তুলে রাখুন ঐতিহাসিক হয়ে থাকবে : ড. ইউনূস

গ্রামীণ টেলিকমের শ্রমিক-কর্মচারীদের কল্যাণ তহবিলের ২৫ কোটি টাকা আত্মসাৎ এবং পাচারের অভিযোগে করা মামলায় জামিন পেয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান ও নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস।...

মায়ের ঘুমপাড়ানি সুর শান্তিধারা

আমাদের জোনাকজ্বলা গ্রাম বিদ্যুৎ তখনও দেখেনি। সন্ধ্যার কাছে বিকেল নতজানু হতেই সবুজ পাহাড়েরা মিশকালো হয়ে যায়। ফলে- আমরা চালের ফুটো দিয়ে চাঁদ দেখি, আর...

মাহবুবা ফারজানা নতুন তথ্য সচিব

তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের নতুন সচিব হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন বেগম মাহবুবা ফারজানা। তিনি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) ছিলেন। তাকে সচিব পদে পদোন্নতি...

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here