মুফতি হিদায়াতুল্লাহ রাহমানী
খাবার মানুষের জীবনধারণে অনিবার্য প্রয়োজন। সুস্থ্য-সচল থাকতে নিয়মিত সুষম খাবার গ্রহণের বিকল্প নেই। তবে অনেক সময় দেখা যায়, প্রচুর খাদ্য গ্রহণ সত্ত্বেও তৃপ্তি আসে না। যেন পেট ভরে না, ক্ষুধা মিটে না। আবার কখনো এর ব্যতিক্রম হয়। এটা মূলত খাবার থেকে বরকত উঠে যাওয়ার আলামত। হাদিস থেকে জানা যায়, দুটি কাজ খাবারে বরকত আনে-১. একসঙ্গে এক প্লেটে খাবার খেলে খাবারে বরকত আসে। একসঙ্গে খাবার খেলে পরস্পর সহানুভূতি, ভালোবাসা, মমত্ববোধ বৃদ্ধি পায়। এতে খাদ্যের পাশাপাশি পরিবারেও বরকত হয়। ২. বিসমিল্লাহ বলে খাবার আরম্ভ করলে খাদ্যে বরকত হয়।
সাহাবি ওয়াহশি ইবনে হারব (রা.) জানান, সাহাবিরা নবীজি (সা.)-এর কাছে অভিযোগ করলেন, হে আল্লাহর রাসুল, মাঝেমধ্যে আমরা অনেক খাই, কিন্তু তৃপ্ত হই না। নবীজি (সা.) বললেন, হয়তো তোমরা আলাদা খাও। সাহাবিরা জবাব দিলেন, জি। নবীজি (সা.) বললেন, তোমরা একসঙ্গে খাবার খাও এবং খাওয়ার আগে বিসমিল্লাহ পড়ো, তা হলে তোমাদের খাদ্যে বরকত দেওয়া হবে (ইবনে মাজা : ২৬৭৪)। পৃথক খাওয়া নাজায়েজ নয়। কুরআনে আছে, ‘তোমরা একসঙ্গে বা পৃথকভাবে খেতে কোনো অসুবিধা নেই’ (সুরা : ৬)। একসঙ্গে খেতে অসুবিধা হলে আল্লাহ আলাদা খাবার গ্রহণ জায়েজ করেন, তবে সম্মিলিত খাবার গ্রহণে বরকত রেখেছেন।
এমনিতেও মুসলমানরা সাধারণত যেকোনো কাজ বিসমিল্লাহ বলে শুরু করে। কারণ হাদিসে এসেছে, ‘প্রত্যেক এমন গুরুত্বপূর্ণ কাজ যার শুরুতে বিসমিল্লাহ পড়া হয়নি তা অসম্পূর্ণ থেকে যায়’ (মুসনাদে আহমাদ : ১৪/৩২৯)। মুমিন বান্দার সুস্বাস্থ্য, শক্তি অর্জন ও ইবাদতের জন্য খাবার গ্রহণ একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ। অতএব খাবার শুরু করার আগে অবশ্যই বিসমিল্লাহ পড়া উচিত। খাবারের শুরুতে বিসমিল্লাহ না পড়লে সেই খাবারে শয়তান অংশগ্রহণ করে। আর বিসমিল্লাহ পড়লে শয়তান পরাজিত হয়, সেই খাবারে অংশগ্রহণ করতে পারে না। নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘শয়তান সেই খাদ্যকে নিজের জন্য হালাল করে নেয়, যে খাদ্যের ওপর বিসমিল্লাহ বলা হয় না’ (মুসলিম : ২০১৭)। অপর হাদিসে রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে খাবারে বিসমিল্লাহ পড়া হয় না, সেই খাবার মানুষের সঙ্গে শয়তানও ভক্ষণ করে।’ (মুসলিম : ৫৩৭৬)
বিসমিল্লাহর সারমর্ম হচ্ছে, আল্লাহর নামে শুরু করা। বিসমিল্লাহ পাঠ করলে আল্লাহর নামের বরকতে বরকত, কল্যাণ ও প্রবৃদ্ধি হয়। পূর্ণতা আসে। সুন্দরভাবে কাজের পরিসমাপ্তি হয়। আমলনামায় সওয়াব লেখা হয়। এ ছাড়া ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম’ পবিত্র কুরআনের একটি আয়াতও বটে। সেই হিসেবে পড়লে প্রতি হরফের বিনিময়ে ১০টি করে নেকি হবে। বিসমিল্লাহর মধ্যে ১৯টি হরফ আছে। পবিত্র কুরআনের ১১৪টি সুরার মধ্যে ১১৩টি সুরার শুরুতেই ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম’ আছে।
হজরত জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ (রা.) বর্ণনা করেন, ‘যখন বিসমিল্লাহ নাজিল হয় তখন মেঘমালা পূর্বদিকে দৌড়াতে শুরু করেছিল, সাগরগুলো উত্তাল অবস্থায় ছিল, সব প্রাণী নিস্তব্ধভাবে তা শুনছিল। শয়তানকে দূরে বিতাড়িত করা হয়েছিল। তখন আল্লাহ তায়ালা নিজ ইজ্জত ও জালালিয়াতের কসম খেয়ে বলেছিলেন, যে জিনিসের ওপর বিসমিল্লাহ পড়া হবে, সেই জিনিসে আমি অবশ্যই বরকত দান করব’ (তাফসিরে তাবারি : ১/৫০)। খাবার খাওয়ার পরও ক্ষুধা দূর না হওয়া একটা রোগ। এ রোগ দূর হতে পারে একত্রে খাবার গ্রহণ ও খাওয়ার আগে বিসমিল্লাহ পাঠের বরকতে। মহান আল্লাহ আমাদের বরকতময় খাদ্য গ্রহণের তওফিক দিন।