জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বিশে^র দেশগুলোর মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে বাংলাদেশ। এর ফলে খাদ্য নিরাপত্তায় নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি হয়েছে। কারণ সামনে কৃষি ক্ষেত্রের জন্য অপরিহার্য উপাদান পানির চাহিদা বাড়বে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বৃষ্টিপাত বাড়ার পাশাপাশি তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাবে। এতে করে যেমন খরা দেখা দেবে, তেমনি বন্যা সমস্যাও দেখা দেবে। উপকূলীয় অঞ্চলে লবণাক্ততা আরও তীব্র হবে। শহরাঞ্চলেও বাড়বে পানির চাহিদা।
গত সোমবার বিশ্ব খাদ্য দিবস উপলক্ষে রাজধানীর ফার্মগেটে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের মিলনায়তনে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এসব তথ্য তুলে ধরেন গবেষক ও কৃষি খাত-সংশ্লিষ্টরা
এবার দিবসটির প্রতিপাদ্য ছিল ‘পানি জীবন, পানিই খাদ্য; কেউ থাকবে না পিছিয়ে’। সকাল সাড়ে ১০টায় খাদ্য দিবসের উদ্বোধন অনুষ্ঠান হয়। এরপর দুপুরে হয় টেকনিক্যাল সেশন। সেখানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পানি ও বন্যা ব্যবস্থাপনা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. এম শাহজাহান মণ্ডল।
তিনি বলেন, ‘কৃষির ৮৭ শতাংশই নির্ভর করে অফ-স্ট্রিম ওয়াটারের ওপর। প্রোটিনের ৬০ শতাংশ চাহিদা পূরণ করে মাছ। বিশুদ্ধ পানি প্রাণিজসম্পদের জন্য অত্যন্ত জরুরি। ধানের উৎপাদন পুরোটাই সেচের ওপর নির্ভর করে। যেখানে দেশের ৭৫ শতাংশ জমিতে ধান উৎপাদন করা হয়। আর আবাদি জমির ৮০ শতাংশে ধানের উৎপাদন হয়। ক্যালরির ৬৭ শতাংশ এখনো ভাত থেকে আসে। প্রোটিনেরও ৫০ শতাংশ জোগান দেয় ভাত। কৃষির ৫০ শতাংশ জিডিপি নির্ভর করে ধানের ওপর। পাশাপাশি ৪৮ শতাংশ মানুষের কর্মসংস্থান জড়িত আছে ধান চাষের ওপর।’
তিনি জানান, জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে মানুষের পানির চাহিদা বাড়বে। এর জোগান দিতে খাল ও নদীর পলিমাটি সরাতে আবার খনন করতে হবে।
এর আগে অনুষ্ঠানের উদ্বোধনী সেশনে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেন, ‘আমরা পানির সদ্ব্যবহার শিখিনি, অনেক সময় ট্যাপ ছেড়ে রেখে দিই, কিন্তু মনে রাখতে হবে পানি ছাড়া ফসল হবে না, ফসল না হলে আমরা খেতে পারব না। দিন দিন নানা কারণে জমি কমে যাচ্ছে, কিন্তু জনসংখ্যা বাড়ছে। ফুড ডাইভার্সিটি তৈরিতে সরকার কাজ করছে। দেশি গবেষকরাই নতুন নতুন ধানের বীজ তৈরি করছে। প্রতি বিঘায় ৩০-৩৫ মণ ধান উৎপাদন হচ্ছে। জলবায়ুর প্রভাবে বা প্রকৃতি আঘাত না হানলে এবার আমনের বাম্পার ফলন হবে।’
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে খাদ্য সচিব মো. ইসমাইল হোসেন বলেন, খাদ্য থাকলে হবে না, খাদ্যের অ্যাকসেস থাকতে হবে, না হলে খাদ্য নিরাপত্তা নষ্ট হবে। এগ্রিকালচার প্রোডাকশন ভালো হচ্ছে মানে এই না যে, বছরের পর বছর ভালো হবে। সামনে যেকোনো সংকট মোকাবিলার প্রস্তুতি নিতে হবে।