যেসব রপ্তানিকারক দেশের বাজার থেকে কাঁচামাল সংগ্রহ করে এবং বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করে তারা ৩০ দিনের সীমাবদ্ধতার আওতায় পড়বে না। চাইলে তারা অন্য ব্যাংকে ডলার স্থানান্তরও করতে পারে। আবার যেসব গ্রাহক ব্যাক টু ব্যাক এলসি ছাড়া সাধারণ এলসির মাধ্যমে কাঁচামাল আমদানি করে। সেই কাঁচামাল থেকে তৈরি পণ্য বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করে তারাও ৩০ দিনের মধ্যে ডলার ভাঙিয়ে ফেলা বা ভিন্ন ব্যাংকে ডলার স্থানান্তর নীতিমালার বাইরে থাকবে। গতকাল রবিবার বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রা ও নীতি বিভাগ থেকে এ সংক্রান্ত একটি স্পষ্টীকরণ প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।
দেশে কার্যরত সব ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় ও এডি শাখা বরাবর পাঠানো ওই প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ব্যাক টু ব্যাক এলসির মাধ্যমে অর্জিত বৈদেশিক মুদ্রা ব্যবহারে ৩০ দিনের একটি বাধ্যবাধকতা রয়েছে। কোনো গ্রাহক চাইলেও সেই ম্দ্রুা ৩০ দিনের বেশি সংরক্ষণ করতে পারবে না। এমনকি অন্য ব্যাংকেও স্থানান্তর করতে পারবে না। রপ্তানি আয়ের ওই ডলার নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আমদানির দায় পরিশোধ করতে হবে অথবা টাকায় রূপান্তর করতে হবে।
তবে যেসব রপ্তানিকারক দেশের বাজার থেকে কাঁচামাল সংগ্রহের পর রপ্তানি করে এবং যেসব গ্রাহক ব্যাক টু ব্যাক এলসি ছাড়া সাধারণ এলসির মাধ্যমে কাঁচামাল আমদানি করে, তারা ৩০ দিনের সীমাবদ্ধতার আওতায় পড়বে না। চাইলে তারা অন্য ব্যাংকে ডলার স্থানান্তরও করতে পারবে।
এর আগে গত ৪ সেপ্টেম্বর রপ্তানি আয় অন্য ব্যাংকে স্থানান্তরের যে সুযোগ, তা বাতিল করে প্রজ্ঞাপন জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংক। ওই প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, যে ব্যাংকের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানি হবে ওই ব্যাংকের মাধ্যমে আসা রপ্তানি আয় দিয়ে ইডিএফ ও আমদানি দায় পরিশোধ শেষে অবশিষ্ট বৈদেশিক মুদ্রা টাকায় রূপান্তর করে নিতে হবে। কোনো অবস্থাতেই বৈদেশিক মুদ্রা অন্য ব্যাংকে নেওয়া যাবে না।
আমদানি ব্যয়ের তুলনায় রপ্তানি ও রেমিট্যান্স বৃদ্ধি সেভাবে না হওয়ায় কভিড-১৯-পরবর্তী সময় থেকে শুরু হওয়া ডলার সংকট এখনো কাটেনি। অনেক ব্যাংকই ডলার সংকটে ভুগতে থাকায় বৈদেশিক মুদ্রা বাজার স্থিতিশীল করতে গত বছর আগস্ট মাসে রপ্তানি আয় অন্য ব্যাংকে নিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। কিন্তু প্রজ্ঞাপন জারির ২২ দিনের মাথায় একই বছরের সেপ্টেম্বর মাসে রপ্তানিকারকদের চাপে রপ্তানি আয় অন্য ব্যাংকে নেওয়ার সুযোগ করে দিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক।
ওই সময়ে রপ্তানিকারকদের যুক্তি ছিল, এক ব্যাংক থেকে রপ্তানি আয় হিসেবে আসা বৈদেশিক মুদ্রা টাকায় রূপান্তর করে অন্য ব্যাংকের আমদানি দায় পরিশোধ করতে পুনরায় বৈদেশিক মুদ্রা ক্রয় করতে হয়। এতে মুদ্রা বিনিময়জনিত লোকসান হয়।
এর এক বছর পর ফের আগের সিদ্ধান্তে ফিরে যাওয়ার ব্যাখ্যায় বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, বৈদেশিক মুদ্রার লেনদেনে শৃঙ্খলা বাজায় রাখতে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের মাধ্যমে শুধু রপ্তানিকারকের রপ্তানি আয় থেকে আমদানি দায় মেটানো যাবে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিমালা অনুযায়ী, রপ্তানি হওয়া পণ্য মূল্যের মধ্যে মূল্য সংযোজিত (ভ্যালু অ্যাডেড) অংশের বৈদেশিক মুদ্রা দিয়ে রপ্তানিকৃত পণ্যের জন্য আমদানি করা কাঁচামালের দায় পরিশোধ করতে পারেন রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান।