ইসলামী ডেস্ক,অর্থভুবন
পবিত্র কোরআন ও হাদিসের বিশাল অংশজুড়ে যেসব নানা মন্দ বিষয়ের সম্পর্কে মানুষকে অত্যন্ত জোরালোভাবে সতর্ক করা হয়েছে, এর অন্যতম একটি হলো অভিশাপ। এখানে হাদিসে উল্লেখকৃত তিনটি অভিশপ্ত বিষয়ের কথা আলোচনা করা হলো
মানুষ চলাচলের রাস্তায় মলমূত্র ত্যাগ : দৈনন্দিন জীবনে নানান প্রয়োজনে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যাওয়ার মাধ্যম হলো রাস্তা। মানুষ চলাচলের রাস্তা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও নিরাপদ রাখার জন্য ইসলাম জোর নির্দেশ দিয়েছে। তা ছাড়া পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা মানুষের স্বভাবজাত একটি বিষয়। হাদিসে হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘ইমানের শাখা সত্তরটিরও বেশি, অথবা ষাটের কিছু বেশি। ইমানের সর্বোচ্চ শাখা হলো ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ (আল্লাহ ছাড়া কোনো মাবুদ নেই) এ কথা স্বীকার করা। আর সর্বনিম্ন শাখা হলো রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক জিনিস সরিয়ে দেওয়া।’ সহিহ মুসলিম : ৬০
এভাবে অনেক হাদিসে রাস্তা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও নিরাপদ রাখার জন্য নির্দেশ ও ফজিলতের কথা বর্ণিত হয়েছে। এর বিপরীতে যারা মানুষ চলাচলের রাস্তায় মলমূত্র ত্যাগ করে অপরিচ্ছন্ন ও নোংরা করে রাখে, তাদের ব্যাপারে হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, ওই লোকদের ওপর আল্লাহর লানত (অভিশাপ)। এ ব্যাপারে হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা অভিশপ্ত দুটি কাজ থেকে বেঁচে থাকো, সাহাবিরা জিজ্ঞাসা করলেন, অভিশপ্ত কাজ দুটি কী হে আল্লাহর রাসুল! রাসুল (সা.) বললেন, মানুষের চলাচলের পথে অথবা ছায়াবিশিষ্ট স্থানে মলমূত্র ত্যাগ করা।’ সুনানে আবু দাউদ : ২৫
মুমিনদের কষ্ট দেওয়া : মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব। তারা পরস্পরে একে অন্যের সঙ্গে ভালোবাসা, সম্মান, শ্রদ্ধা, স্নেহ ও ভ্রাতৃত্ববোধের আচরণ-উচ্চারণ করবে, এটাই স্বাভাবিক ও যুক্তিযুক্ত বিষয়। এর বিপরীতে যারা মুমিনদের কষ্ট দেবে তাদের ওপর আল্লাহর অভিশাপ। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘যারা মুমিন নর-নারীদের বিনা অপরাধে কষ্টদান করে, তারা অপবাদ ও স্পষ্ট পাপের বোঝা বহন করে।’ সুরা আহজাব : ৫৮
এ ব্যাপারে হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো মুমিনের ক্ষতি করে, অথবা তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে সে অভিশপ্ত।’ সুনানে তিরমিজি : ১৯৪১
দুনিয়ার মোহ : আল্লাহতায়ালা নানা ধরনের নেয়ামত ও বিলাসীয় উপায়-উপকরণ দ্বারা সাজিয়েছেন এই দুনিয়া। যে কারণে মানুষ শয়তানের ধোঁকায়, নফসের প্ররোচনায়, পরিবেশের তাড়নায়, খুব সহজে সব চিত্তাকর্ষক জিনিসের ফাঁদে পড়ে। ফলে দুনিয়ার জীবন পরকালীন জীবনের অনুগামী না করে, পরকালের ওপর দুনিয়াকে প্রাধান্য দিয়ে উভয় জগতে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়। তাই তো হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) কঠোর ভাষায় হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, ‘দুনিয়া ও তার মাঝের সবকিছুই অভিশপ্ত, কিন্তু আল্লাহর জিকির ও তার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ অন্যান্য আমল, আলেম ও ইলম অন্বেষণকারী এর ব্যতিক্রম।’ ইবনে মাজা : ৪১১২
দৈনন্দিন জীবনের চর্চিত এই অভিশপ্ত বিষয়গুলো বর্জন করে, চিরস্থায়ী পরকালীন জীবনের সুখ-শান্তির ব্যাপারে সচেতন ও সচেষ্ট হই। আল্লাহ আমাদের সহায় হোন।