অর্থভুবন প্রতিবেদক
ঘরোয়া পরিবেশে অনেক গৃহিণী পরিবার সামলানোর পাশাপাশি হয়েছেন সফল উদ্যোক্তা। তাদেরই একজন টুঙ্গিপাড়ার নুসরাত জাহান তানিয়া। তানিয়া যশোর সদরের ঘোপ নওয়াপাড়া এলাকার মেয়ে। স্বামীর চাকরির সুবাদে বসবাস করছেন টুঙ্গিপাড়ার পাটগাতী এলাকায়। করোনাকালীন পরিস্থিতিই তাকে উদ্যোক্তা হতে উদ্বুদ্ধ করে। ২০১৬ সালে যশোরের এমএম কলেজ থেকে হিসাববিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর শেষ করে তানিয়া চাকরির প্রস্তুতিও কম নেননি। কিন্তু সন্তানকে সময় দিতে চাকরির চিন্তা বাদ দিয়ে উদ্যোক্তা হওয়ার প্রচেষ্টা শুরু করেন।
উচ্চশিক্ষিত এ নারী ঘরে থাকা অলস সময় আর নিজের ইচ্ছাশক্তিকে পুঁজি করে অনলাইনভিত্তিক রাঁধুনি কোর্স সম্পন্ন করে ঘরে বসেই শুরু করেন ফাস্টফুডের ব্যবসা। তৈরিকৃত ফাস্টফুড ফেসবুক পেজের মাধ্যমে অর্ডারের ভিত্তিতে পৌঁছে দিতেন ক্রেতাদের দোরগোড়ায়। তার বানানো বার্গার, চিকেন ফ্রাই, শর্মা, মোমো, পিৎজাসহ রকমারি খাবার দিনদিন জায়গা করে নেয় তাদের হৃদয়ে। পারিবারিক ব্যস্ততা আর এতসব খাবারের অর্ডার এক ধরনের চাপ হয়ে যায় তানিয়ার ওপর। কিছুদিন এভাবে চলার পর তিনি শুরু করেন কেকের ব্যবসা।
শাশুড়ির ২৫ বছর আগের ফেলে রাখা ওভেন আর ঘরোয়া কেক বানানোর জন্য রাখা সব উপকরণ নিয়ে শুরু হয় তার এ যাত্রা। চকলেট, স্পেশাল চকলেট, ভ্যানিলা আর স্পেশাল ভ্যানিলা কেক নিয়ে ভোক্তা মহলে নতুন করে হাজির হন তানিয়া। শুরুর দিকে হাতেগোনা কয়েকটি কেক বিক্রি হলেও দমে যাননি ৩২ বছর বয়সি এ নারী উদ্যোক্তা। ফেসবুক প্রচারণা আর মানসম্মত কেক সরবরাহের মাত্র তিন মাস শেষে গোপালগঞ্জ জেলার ঘরোয়া কেক বানানোর প্রথম সফল উদ্যোক্তা হিসাবে পরিচিতি পান। কদিন বাদেই শুরু হয় ভোক্তামহলে অর্ডারের হিড়িক। সে সময় বাইরের ক্ষতিকর ডালডামিশ্রিত ক্রিম থেকে ভোক্তাদের তিনি পরিচয় করিয়ে দেন খাঁটি দুধ থেকে ঘরে বানানো হুইপড ক্রিমের সঙ্গে। একে একে যোগ করেন স্ট্রবেরি, অরেঞ্জ, লেমন, ব্যানানাসহ বিভিন্ন ফ্লেভারের কেক। এ ছাড়া কেকের ফ্লেভারভেদে নামমাত্র মূল্যে বিক্রি করায় এলাকায় তার ব্যাপক সুনাম ছড়িয়ে পড়ে। ইতোমধ্যে ৮০০-এর বেশি কেক টুঙ্গিপাড়া, গোপালগঞ্জ ও বাগেরহাটের বিভিন্ন এলাকার ক্রেতারা সংগ্রহ করেছেন। এমনকি ২০২১ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্মদিনে টুঙ্গিপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের উদ্যোগে তার বানানো ৩৬ পাউন্ড
ওজনের কেক কাটা হয়।
তানিয়ার কেকের নিয়মিত গ্রাহক শেখ তিসা বলেন, ‘আপুর ঘরে বানানো কেকের তুলনা হয় না। আপুর প্রাকৃতিক উপকরণে বানানো কেক প্রশংসার দাবি রাখে।’
শুধু এ কেক বিক্রি করে ঘরে বসে তানিয়ার বর্তমানে মাসিক আয় গড়ে বিশ হাজার টাকা। কখনো কখনো তা উৎসবভেদে পৌঁছে যায় অর্ধলাখের ঘরে। একই সঙ্গে তানিয়া নিজের স্বপ্ন ছড়িয়ে দিচ্ছেন অন্য নারীদের মাঝেও। যারা উদ্যোক্তা হতে চান, নিজের পায়ে দাঁড়াতে চান তাদের জন্য তানিয়া এখন অনুকরণীয় এক নাম।
নিজের সফলতার গল্প শোনাতে গিয়ে নুসরাত জাহান তানিয়া বলেন, ‘আমি জানি, যে কোনো কাজে লেগে থাকলে সফলতা আসবেই। আমার পরিশ্রম আমাকে ঠকায়নি। একজন নারী হিসাবে প্রায়ই সাইবার বুলিংয়ের শিকার হতে হয়। এতে কখনোই আমি দমে যাইনি বরং মানসম্মত কেকের ক্রেতারা তাদের সমালোচনার জবাব দিয়ে দেন।’
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে এ নারী উদ্যোক্তা বলেন, ‘ভবিষ্যতে ঢাকায় গিয়ে রাঁধুনি কোর্সের একজন প্রশিক্ষক হিসাবে কাজ করতে চাই। কেননা একজন নারী রাঁধুনি হিসাবে আমি চাই আরও নারী তাদের অলস সময়কে কাজে লাগিয়ে সংসারের বোঝা না হয়ে উপার্জনক্ষম হোক।’
উদ্যোক্তা হতে ইচ্ছুক নারীদের উদ্দেশে তিনি আরও বলেন, ‘সমাজে নারীদের পদে পদে বাধা। এসব বাধা পেরিয়ে নারীরা নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারলে শেষ পর্যন্ত সবাই প্রশংসাই করেন। ঘরে বসেই এখন বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদান রেখে আমরা নারীরা পরিবারের সহায়ক হতে পারি।’