চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীতে নির্মিত বঙ্গবন্ধু টানেল শনিবার উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। চীনে গিয়ে দেশটির সরকারের কাছে প্রধানমন্ত্রী যখন টানেল নির্মাণের প্রস্তাব দেন, তখন সেখানে সফরসঙ্গী হিসেবে উপস্থিত ছিলেন তৎকালীন সেতু বিভাগের সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম। পরবর্তী সময়ে তিনি মন্ত্রিপরিষদ সচিবের দায়িত্ব পালন করেন। টানেলের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত নিজের নানা সম্পৃক্ততার কথা সম্প্রতি তিনি শুনিয়েছেন অর্থভুবনকে
২০১৪ সালের জুনের প্রথম সপ্তাহে চীন সরকারের পক্ষ থেকে বাংলাদেশকে কর্ণফুলী নদীর নিচে টানেল নির্মাণের প্রস্তাব দেয় চীন। ওই মাসের মাঝামাঝিতে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী চীন সফরকালে চুক্তি সই হওয়ার কথা ছিল।
কিন্তু ঠিক আগমুহূর্তে এসে তৎকালীন পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হককে জানানো হয়, অনিবার্য কারণে টানেলের চুক্তি সই হবে না। এতে করে আমাদের মধ্যে চরম বিস্ময় ও ক্ষোভ সৃষ্টি হয়। পররাষ্ট্র সচিব ও আমি বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করি। স্বাভাবিকভাবে তিনিও চুক্তি স্থগিতের কারণে বিস্মিত হন। এই চুক্তি না হলে জনগণের মধ্যে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। মানুষ ভাববে- চীনের সঙ্গে আমাদের কূটনৈতিক সম্পর্কের অবনতি ঘটেছে এবং প্রধানমন্ত্রীর সফর ব্যর্থ হয়েছে। এ নিয়ে রাত দেড়টা পর্যন্ত চীনা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করেও লাভ হয়নি। পর দিন সকালে বলা হয় চুক্তি হবে। কিন্তু দুপুরে বলা হয়, চুক্তিটি এখন করা যাবে না। আগের সিদ্ধান্ত বাতিল। এর পরের দিন বিকাল ৪টায় আবার বিষয়টি উপস্থাপন করা হলে চীনের প্রধানমন্ত্রী বিনয়ের সঙ্গে তা প্রত্যাখ্যান করেন। দ্বিপক্ষীয় সভাশেষে বেশ কয়েকটি চুক্তি সই হলেও কারও মুখে হাসি ফোটাতে পারেনি। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর মাথায় তখনো ভিন্ন চিন্তা। রাষ্ট্রীয় ভোজসভায় তিনি আবার তুলে ধরলেন। ডিনার শুরুর সঙ্গে সঙ্গে চিফ সিকিউরিটি অফিসার বললেন, দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী আমাকে ডাকছেন। তখন আমাদের প্রধানমন্ত্রী বললেন, কাজ হয়েছে। আমি চীনা প্রধানমন্ত্রীকে বললাম, আপনারা সম্মতি দেওয়ায় সেতু সচিবকে সফরসঙ্গী করা হয়েছে। বিষয়টি কূটনৈতিক, প্রেস, জনগণসহ সবাইকে উভয় দেশ অবহিত করেছে। বিশেষ করে বাংলাদেশের জনগণ এ চুক্তির দিকে আগ্রহ নিয়ে তাকিয়ে আছে। এখন তা না হলে দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের অবনিত হয়েছে বলে ধারণার সৃষ্টি হবে। এগুলো জানার পর চীনের প্রধানমন্ত্রী লজ্জিত হন এবং সংশ্লিষ্টদের চুক্তি সইয়ের আদেশ দেন। কিন্তু বিষয়টি সময়সাপেক্ষ বলে তিন-চার দিন সময় চাওয়া হয়। তখন আমাদের প্রধানমন্ত্রীর প্রচেষ্টায় ওই রাতেই চুক্তি সইয়ের ব্যবস্থা করা হয়। সেতু সচিব হিসেবে আমি আগেই পেনড্রাইভে চুক্তির খসড়া রেখে দিয়েছিলাম। সত্যিই- এ যেন স্বপ্নের বিজয়।
চীনের তিন মন্ত্রী এবং আমরা দুজন সচিব প্রস্থানের আগে আমাদের প্রধানমন্ত্রী চীনা প্রধানমন্ত্রীকে বলেছিলেন- চুক্তিটি রাতের বেলায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবনে তার অফিসকক্ষে সম্পন্ন করতে। এতে সম্মতি মেলে। চীনের মন্ত্রীদের সঙ্গে আমি ও পররাষ্ট্র সচিব রাত ১২টার দিকে চুক্তি চূড়ান্ত করি। ওদিকে আমাদের প্রধানমন্ত্রী ডিনারের পর ঘরে গিয়ে ড্রয়িংরুমে কয়েক ঘণ্টা বসে টেলিফোনে বিষয়টি তদারকি করতে থাকেন। তার পর রাত সাড়ে ১২টার পর আমরা কাক্সিক্ষত চুক্তিটি প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে স্বাক্ষর করি।