অর্থভুবন প্রতিবেদক
বাংলাদেশের শীর্ষ পর্যায়ের ক্লাব ফুটবলে সর্বোচ্চ ছয়জন করে বিদেশী। এর এক থেকে দু’জনই স্ট্রাইকার। ক্লাব ফুটবল থেকে দেশী স্ট্রাইকাররা আরো আগেই সাইড বেঞ্চে। এই স্ট্রাইকারদের শেষ ভরসা ছিল জাতীয় দল। ক্লাব ফুটবলে চান্স না পেলেও তারা জাতীয় দলে খেলার সুযোগ পেতেন। সেখানেও তাদের গোল মিসের কাহিনী যেমন ছিল তেমনি গোল করার পর প্রশংসায়ও ভেসেছেন। তবে বর্তমান কোচ হাভিয়ার কাবরেরার নতুন ফরমেশনে দেশী স্ট্রাইকারদের সেই স্থানও বেদখল হয়ে গেছে। মতিন মিয়া, সুমন রেজাদের নিয়মিত ঠাঁই এখন সাইড বেঞ্চে। তবে বাংলাদেশ দল সাফল্য পাওয়ায় এখন স্ট্রাইকার মূল নম্বর নাইন পজিশনে কে খেলল বা না খেলল তার আর আলোচনায় নেই। কোচ কাবরেররাও বিষয়টি আমলে নিচ্ছেন না। মালদ্বীপের বিপক্ষে ফিফা বিশ্বকাপ বাছাই প্লে-পর্ব উতরানোর পর সংবাদ সম্মেলনে এই প্রসঙ্গে এই স্প্যানিশ কোচের জবাব ছিল, দল তো গোল পাচ্ছে। সুতরাং স্পেশালিস্ট স্ট্রাইকার পজিশন নিয়ে কোনো আমার কোনো টেনশন নেই।
ক্লাব ফুটবলে বিদেশীদের দাপটে দেশী স্ট্রাইকারদের কখনো মিডফিল্ডে কখনো ডিফেন্সে খেলতে হচ্ছে। জুনিয়র ডিভিশন ফুটবলে সর্বোচ্চ গোলদাতা হওয়া রিমন এখন ক্লাব ও জাতীয় দলের রাইট ব্যাক। জাতীয় দল থেকে বাদ পড়া সুফিলকেও নিচে নেমে খেলতে হয়েছে ক্লাবে। বয়সভিত্তিক জাতীয় দলের মূল স্ট্রাইকার ফয়সাল আহমেদ ফাহিম এখন ক্লাব ও জাতীয় দলের উইংগার। সাদউদ্দিন বহু আগেই লাল-সবুজ জার্সিতে রক্ষণকর্মী।
কাবরেরা বাংলাদেশ দলের দায়িত্ব নেয়ার পর জীবন, সাজ্জাদ, সুফিলদের স্ট্রাইকার হিসেবে খেলিয়েছেন। এরা এখন বাতিলের খাতায়। এরপর সজীব, সুমন রেজাদের দলে নিলেও তারা আস্থার প্রতিদান দিতে পারেননি। ফলে সাফের পর বাদ দেয়া সজীবকে বাদ দেয়া হলেও সর্বশেষ জাতীয় দলে সুমন রেজার সাথে স্ট্রাইকার হিসেবে ছিলেন মতিন মিয়া। তবে আফগানিস্তানের সাথে দুই ফিফা প্রীতিম্যাচ ও মালদ্বীপের বিপক্ষে বিশ্বকাপ বাছাই প্লে-অফ কোনো ম্যাচেই সুমন, মতিনদের মাঠে নামানো হয়নি।
কাবরেরার ৪-২-৩-১ ফরমেশনে উপরে দারুণ খেলছেন রাকিব হোসেন ও ফয়সাল আহমেদ ফাহিম। শেখ মোরসালিন মদ কেলেঙ্কারিতে বাদ পড়ার পর ফাহিম একাদশে জায়গা পান। মালদ্বীপের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে একাধিক গোল মিস করলেও হোমে জয়সূচক গোল করে ফাহিম এখন স্থান পোক্ত করেছেন। ফাহিম, মোরসালিন ও রাকিবরা গোল পাওয়ায় মতিন, সুমনদের এখন সাইড বেঞ্চই আশ্রয়। বাংলাদেশ দলের ম্যানেজার আমের খানের মতে, ‘কোচের ফরমেশনে আক্রমণভাগে রাকিব, ফাহিম ও মোরসালিনদের মতো ফুটবলাররাই যোগ্য।
জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক ও স্ট্রাইকার এবং মোহামেডানের কোচ আলফাজ আহমেদ এভাবে বারবার স্ট্রাইকার ছাড়া খেলাকে মোটেই ইতিবাচক মনে করছেন না। তার মতে, এভাবে পজিশন ছাড়া খেলোয়াড় নিয়ে খেলা ঠিক না। এতে দীর্ঘমেয়াদে একসময় সমস্যায় পড়তেই হবে।’ তার পরামর্শ, ‘অবশ্যই জাতীয় দলে খেলার মতো স্ট্রাইকার খুঁজে বের করতে হবে। এ জন্য ক্লাব ও বাফুফের উভয়ের সমন্বয় জরুরি।’ আলফাজ দেশী স্ট্রাইকার তৈরি হওয়ার একটি উপায়ও বাতলে দিয়েছেন। তার মতে, নব্বইয়ের দশকে যেমন নবীন ফুটবলার কোটায় বেশ কিছু উঠতি খেলোয়াড় বের হয়েছিল, তেমনি এখন বিপিএলে দেশী স্ট্রাইকার খেলানোর জন্য ম্যাচে নির্দিষ্ট সময় নির্ধারণ করা জরুরি।