Tuesday, January 14, 2025

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার আর খুব বেশি দিন বাকি নেই। ইতিমধ্যে বেশির ভাগ শিক্ষার্থী নিজেদের মতো করে প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করেছ, তবে যারা এখনো পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতি কীভাবে নিলে সর্বোচ্চ ফলাফল পাওয়া যাবে, সেটি নিয়ে দ্বিধায় ভুগছ, তাদের জন্য আমার ভর্তি পরীক্ষার আলোকে এবং বিগত বছরগুলোর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি ইচ্ছুক প্রার্থীদের পড়ানোর অভিজ্ঞতার আলোকে কিছু কথা শেয়ার করব তোমাদের সঙ্গে। 

 

মান বণ্টন আগের মতোই
এ বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কলা বিভাগ এবং বিভাগ পরিবর্তন, অর্থাৎ সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের পরীক্ষা প্রথমবারের মতো একসঙ্গে হবে। তবে উভয় অনুষদেই যেহেতু বাংলা, ইংরেজি ও সাধারণ জ্ঞানের পরীক্ষাই নেওয়া হয়ে থাকে, তাই প্রশ্নপত্রে খুব বেশি পরিবর্তন হয়তো আসবে না। মান বণ্টন বিগত বছরগুলোর মতোই আছে; অর্থাৎ ৬০ মার্কের এমসিকিউ পরীক্ষা এবং ৪০ মার্কের লিখিত পরীক্ষা হবে, বাকি ২০ পরীক্ষার ফলাফলের ওপরে। তবে এমসিকিউ পরীক্ষায় নির্দিষ্ট পরিমাণ একটি মার্ক পেলে তবেই সেই শিক্ষার্থীর লিখিত খাতা মূল্যায়ন করা হয়। তাই ভর্তি পরীক্ষায় এমসিকিউ অংশে ভালো করাটা প্রথম শর্ত। দ্বিতীয়ত, ভালো সাবজেক্ট পেতে গেলে বাংলা ও ইংরেজিতে বেশ ভালো নম্বর পেতে হয়। লিখিত অংশে ভালো করাটা জরুরি হয়ে ওঠে মেধাতালিকায় এগিয়ে থাকার জন্য, কারণ শিক্ষার্থীদের পছন্দের তালিকার প্রথম দিকের সাবজেক্টগুলো খুব দ্রুতই শেষ হয়ে যায়। 

 

বহুনির্বাচনি পরীক্ষার প্রস্তুতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিগত তিন থেকে চার বছরের প্রশ্ন বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, পাঠ্যবইভিত্তিক প্রশ্ন অনেক বেশি আসছে। যেমন ইংরেজিতে গ্রামারের চেয়ে পাঠ্যবইয়ের ভেতরের প্রশ্নকে অনেক বেশি প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে। তাই শিক্ষার্থীদের বলব, বাংলা ও ইংরেজি পাঠ্যবই লাইন বাই লাইন পড়তে, গুরুত্বপূর্ণ শব্দগুলো দাগিয়ে রাখতে। কারণ শর্ট সিলেবাস হওয়ার কারণে শিক্ষার্থীরা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পড়ছে কি না, সেটি বিগত কয়েক বছরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশ্নপত্রে অনুসন্ধান করা হচ্ছে। প্রথমেই বলি ইংরেজির কথা। ইংরেজি পাঠ্যবইয়ের সিলেবাসের চাপ্টারগুলোর শব্দার্থ এবং সেগুলোর পার্টস অব স্পিচ, এমনকি গ্রামাটিক্যাল প্রশ্ন বইয়ের ভেতর থেকে করার প্রবণতা লক্ষ করা যাচ্ছে। গ্রামারের মধ্যে Identification of Parts of Speech, Voice, Narration, right form of verbs, subject verb agreement এগুলোর ওপরে খুবই ভালো দখল থাকতে হবে। এগুলো থেকে যেকোনো ধরনের প্রশ্ন এলে সমাধান করার দক্ষতা যেন শিক্ষার্থীর থাকে। একটা বিষয় মাথায় রাখতে হবে, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় কত কম সময়ে কত বেশি প্রশ্নের উত্তর করতে পারছ, মূলত সেটিই ঠিক করে দেয় ভর্তি পরীক্ষায় তোমার অবস্থান। তাই যে টপিক পড়বে, সে বিষয়ের বিগত বছরের প্রশ্নগুলো তুমি কত দ্রুত সময়ে সলভ করতে পারছ, সেটি ঘড়ি ধরে নিজে মূল্যায়ন করবে। সাধারণ জ্ঞানে আমরা দেখছি মানবিকের মৌলিক বিষয়গুলো থেকে অনেক বেশি প্রশ্ন আসছে, যেমন—অর্থনীতি ও পৌরনীতির পাঠ্যবই থেকে বিগত বছরের পরীক্ষায় অনেকগুলো প্রশ্ন এসেছে, যা মূলত আগের বছরগুলোতে দেখা যায়নি। তাই বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক বিষয়াবলির বিষয়গুলো, সাম্প্রতিকের তথ্য পড়ার পাশাপাশি মৌলিক বিষয়গুলোর ওপর গুরুত্ব দেওয়াটা খুবই জরুরি। 

লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতি
লিখিত পরীক্ষা নিয়ে শিক্ষার্থীদের সবচেয়ে বড় বিভ্রান্তি যেটি থাকে সেটি হচ্ছে, পরীক্ষায় বোধ হয় পূর্ণাঙ্গ মার্কস পাওয়া সম্ভব না। লিখিত পরীক্ষায় সবচেয়ে বেশি চ্যালেঞ্জিং বিষয়টি হচ্ছে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে শেষ করে আসতে পারা।

বিগত বছরগুলোতে আমরা দেখেছি, শিক্ষার্থীরা প্রশ্ন কমন পাওয়ার পরেও সব লিখে আসতে পারেনি শুধু সময়ের অভাবে। তাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার অফিশিয়াল সার্কুলার অনুযায়ী ইংরেজি ও বাংলার লিখিত অংশগুলো টপিক ধরে ধরে প্রতিদিন বেশ সময় নিয়ে প্র্যাকটিস করা উচিত এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় লিখিতর জন্য যতটুকু জায়গা বরাদ্দ দেওয়া হয় এবং যতটুকু সময় দেওয়া হয়, সেটিকেই মডেল হিসেবে ধরে নিয়ে প্র্যাকটিস করলে লিখিত পরীক্ষায় পূর্ণাঙ্গ মার্কস অর্জন অবশ্যই সম্ভব।

তুমি পরিকল্পনা অনুযায়ী পরিশ্রম করলে পরীক্ষার হলে ভালো না করার কোনো কারণই নেই। যারা নিজেদের স্বপ্নের পেছনে শক্তভাবে লেগে থাকে, বিজয়ীদের দলে তাদের অবস্থান সুনিশ্চিত

ইংরেজি অংশের ক্ষেত্রে ট্রান্সলেশন, সেনটেন্স মেকিং, প্যারাগ্রাফ রাইটিং—এগুলো বেশি আসতে দেখা গেছে। পাশাপাশি কম্প্রিহেনশন, এক্সপ্লানেশন, রি-এরেঞ্জিং এবং ট্রান্সফরমেশন অব সেনটেন্সের ওপরে প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে হবে।

বাংলা লিখিতর ক্ষেত্রে বানান শুদ্ধি ও প্রমিতকরণ, মূলভাব লিখন, কবিতার উদ্ধৃতি ব্যাখ্যা, অনুবাদ, সংক্ষিপ্ত অনুচ্ছেদ লেখন, মিলকরণ ইত্যাদি পড়ে যাওয়া জরুরি। 

কেমন হবে পরীক্ষার রুটিন
পরীক্ষার রুটিন করার আগে মূলত নিজের কোন বিষয়ে দক্ষতা বেশি আর কোন বিষয়ে দক্ষতা কম, সেটি নিজেই অ্যানালাইসিস করা জরুরি। সেই অনুযায়ী যে বিষয়ে দুর্বলতা বেশি, সেটির জন্য রুটিনে বেশি সময় বরাদ্দ রাখতে হবে। যেমন ইংরেজি প্রশ্নপত্র যেহেতু মার্ক ওঠানোর ক্ষেত্রে সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং বলে বিবেচিত হয়, এ ক্ষেত্রে দিনে দুই থেকে তিন ঘণ্টা ইংরেজিতে সময় দেওয়া খুবই জরুরি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০-১৫ বছরের প্রশ্ন পড়লে প্রশ্নের প্যাটার্ন সম্পর্কেও দ্বিধাদ্বন্দ্ব অনেকটা দূর হয়ে যায়; বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয় কোন কোন টপিক থেকে কোন প্রশ্ন বেশি করে থাকে, সেটি নিজেই তুমি অনুধাবন করতে পারবে। তাই বেশ কয়েকবার প্রশ্ন ব্যাংক সমাধান করাটা জরুরি। সবশেষে বলব, প্রস্তুতি যখন একটা মোটামুটি জায়গায় চলে আসবে, তখন একটা মডেল টেস্টের বই কিনে নিজে নিজে পরীক্ষা দাও ঘড়ি ধরে। কারণ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় সময় সবচেয়ে বড় ফ্যাক্টর হিসেবে কাজ করে। শিক্ষার্থীদের মনে রাখতে হবে, অন্যের প্রস্তুতির সঙ্গে তুলনা করা খুব বেশি সুবিধাজনক কিছু বয়ে নিয়ে আসে না, কারণ একেকজনের একেক বিষয়ে দক্ষতার স্তর একেক রকম হয়। তাই নিজের শক্তি এবং দুর্বলতাগুলো বিশ্লেষণ করে সেখানে নিয়মিত সময় দিতে পারলেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আর অধরা থাকবে না।

নিজের সঙ্গে নিজের যুদ্ধে জয়!
বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষায় মানসিক চাপ থাকে অনেক। এ সময় শিক্ষার্থীদের খুব কম সময়ে অনেক বেশি পড়াশোনা করতে হয় এবং অনেক মানুষের প্রত্যাশার চাপ তাদের জন্য অনেক সময় বোঝা হয়ে দাঁড়ায়। মনে রাখতে হবে, এই সময় নিজেকে মানসিকভাবে সতেজ রাখাটা অনেক বেশি জরুরি। তুমি পরিকল্পনা অনুযায়ী পরিশ্রম করলে পরীক্ষার হলে ভালো না করার কোনো কারণই নেই। কারণ দিনান্তে যারা নিজেদের স্বপ্নের পেছনে শক্তভাবে লেগে থাকে, বিজয়ীদের দলে তাদের অবস্থান সুনিশ্চিত। 

আব্দুল্লাহ সাদমান জামী, ২য় স্থান, ডি ইউনিট, ঢাবি (২০১৭-১৮)

 

spot_imgspot_img

ছবিটা তুলে রাখুন ঐতিহাসিক হয়ে থাকবে : ড. ইউনূস

গ্রামীণ টেলিকমের শ্রমিক-কর্মচারীদের কল্যাণ তহবিলের ২৫ কোটি টাকা আত্মসাৎ এবং পাচারের অভিযোগে করা মামলায় জামিন পেয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান ও নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস।...

মায়ের ঘুমপাড়ানি সুর শান্তিধারা

আমাদের জোনাকজ্বলা গ্রাম বিদ্যুৎ তখনও দেখেনি। সন্ধ্যার কাছে বিকেল নতজানু হতেই সবুজ পাহাড়েরা মিশকালো হয়ে যায়। ফলে- আমরা চালের ফুটো দিয়ে চাঁদ দেখি, আর...

মাহবুবা ফারজানা নতুন তথ্য সচিব

তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের নতুন সচিব হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন বেগম মাহবুবা ফারজানা। তিনি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) ছিলেন। তাকে সচিব পদে পদোন্নতি...

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here