ঋতু বদলের কারণে শ্বাসকষ্ট, হাঁপানি, নিউমোনিয়া, ব্রংকিওলাইটিস, সর্দি-জ্বরের মতো মৌসুমি রোগে আক্রান্ত হচ্ছে অনেকে। এর মধ্যে শিশু ও বয়স্কদের সংখ্যা বেশি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ও ঢাকা শিশু হাসপাতালের চিকিৎসক, রোগী ও তাদের স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
চিকিৎসকরা বলছেন, দিন ও রাতের তাপমাত্রার তারতম্যের কারণে ঠাণ্ডাজনিত রোগ বাড়ছে।
বাতাসে আর্দ্রতা কমে শুষ্কতার কারণে ব্যাকটেরিয়া বা জীবাণু শ্বাসনালি ও ফুসফুসে সংক্রমণ ঘটাচ্ছে। এ জন্য বেশি করে পানি পান ও পুষ্টিকর খাবার খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তাঁরা।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের রেসপিরেটরি মেডিসিন বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান ডা. এ কে এম মোশাররফ হোসেন বলেন, এ সময়ে ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া ও ছত্রাক সংক্রমণের কারণে ফুসফুসের নানা রোগ হয়ে থাকে। বিশেষ করে বয়স্ক, শিশু ও দীর্ঘদিন ধরে পুরনো রোগে ভোগা ব্যক্তিদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকে।
এ জন্য এ মৌসুমে তারা ঠাণ্ডাজনিত রোগে বেশি আক্রান্ত হয়।
অধ্যাপক ডা. এ কে এম মোশাররফ হোসেন বলেন, বাতাসের সঙ্গে শুধু অক্সিজেনই নয়, রোগজীবাণু ও ধুলাবালি শ্বাসনালি ও ফুসফুসে প্রবেশ করে। এ মৌসুমে এ দুটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গে আর্দ্রতা কমে যায়। এতে ফুসফুসে সংক্রমণসহ নিউমোনিয়া, ব্রংকিওলাইটিস, হাঁপানিও শ্বাসকষ্টের রোগ বাড়ে।
এ সময় বেশি করে পানি পান করতে হবে। তাহলে শ্বাসনালিতে আর্দ্রতা কমবে না এবং রোগজীবাণু শরীর থেকে বের হয়ে যাবে।
তিনি বলেন, এ সময় টাটকা ফলমূলও খেতে হবে। প্রতিদিন অন্তত আধাঘণ্টা কায়িক শ্রম দিতে হবে। বিশেষ করে যাদের শ্বাসতন্ত্রের রোগ আছে, হার্ট বা কিডনি রোগে ভুগছে, তাদের ইনফ্লুয়েঞ্জা ও নিউমোনিয়া প্রতিষেধক টিকা নিতে হবে।
হাসপাতালসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলেন, অক্টোবরের শেষ সপ্তাহে ঠাণ্ডার রোগী বেড়েছে। গত সোমবার সকাল ১০টার দিকে ঢাকা শিশু হাসপাতালের জরুরি বিভাগে গিয়ে রোগীর স্বজনদের দীর্ঘ লাইন দেখা যায়।
জরুরি বিভাগের এ-১৩৫ নম্বর কক্ষে গিয়ে দেখা যায়, তিন চিকিৎসক ও একজন নার্স মিলে ১৬ দিনের মাহমুদ হাসানকে নিয়ে ব্যস্ত। শিশুটির বুকে ঘড় ঘড় শব্দ হচ্ছে। কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. মো. আমজাদ পরীক্ষা শেষে জানান, শিশুটির বুকে কফ জমে সংক্রমণ দেখা দিয়েছে।
সাভারের বলিয়ারপুর থেকে আসা শিশুটির মা বিলকিস আক্তার জানান, তিন দিন ধরে ছেলের ঠাণ্ডা। তিনি বলেন, ‘আজ (গতকাল) থেকে বুকের দুধ খাওয়া ছেড়ে দিয়েছে। অবস্থা বেগতিক দেখে আর দেরি করিনি।’
ডা. মো. আমজাদ বলেন, ‘ঋতু পরিবর্তনের ফলে এক মাসের কম বয়সী শিশুদের সমস্যা অনেক বেশি। তাপমাত্রার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে তাদের কষ্ট হচ্ছে। এ ছাড়া পরিবেশের কারণে ভাইরাল দূষণ অনেক বেড়ে গেছে। অনেক বেশি মৌসুমি ফ্লু পাচ্ছি।’
হাসপাতালের ইমার্জেন্সি অবজারভেশন অ্যান্ড রেফারেল ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা যায়, সব কটি বিছানা শিশু রোগীতে পূর্ণ। চিকিৎসক-নার্সরা জানান, ভর্তি বেশির ভাগ শিশু ঠাণ্ডাজনিত রোগ নিয়ে এসেছে।
ঢাকা শিশু হাসপাতালের পরিচালক ডা. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, শিশুদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকায় তাদের ধুলাবালিমুুক্ত পরিবেশে রাখতে হবে। পোশাক আরামদায়ক হতে হবে। ঠাণ্ডা যেমন লাগানো যাবে না, তেমনি গরমে যেন শিশু ঘেমে না যায়, সেটাও খেয়াল করতে হবে। বেশি করে পুষ্টিকর খাবার খাওয়াতে হবে। এর সঙ্গে পানি খাওয়াতে হবে।
দুপুরে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বহির্বিভাগে গিয়ে দেখা যায়, টিকিট হাতে লাইনে দাঁড়িয়ে অন্তত ৪০ জন। বেশির ভাগই ঠাণ্ডা, সর্দি-জ্বর ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে এসেছে।
হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা. সাহেদ আব্দুল্লাহ বলেন, প্রতিদিন গড়ে ২৫০ জন রোগী আসছে। সপ্তাহখানেক আগেও রোগী ছিল ১৫০ জনের মতো। শীতের শুরুতে এ ধরনের রোগী প্রতিবার বাড়ে। তিনি বলেন, বেশির ভাগই বয়স্ক রোগী, যাঁরা দীর্ঘদিন ধরে নানা রোগে ভুগছেন। যারা বয়স্ক এবং যাদের অক্সিজেনের মাত্রা কম, শ্বাসকষ্ট বেশি, তাদের ভর্তি করাতে হচ্ছে।