ফরিদপুরের ভাঙ্গা থেকে বরিশাল-পায়রা বন্দর হয়ে কুয়াকাটা পর্যন্ত রেললাইন নির্মাণের সম্ভাব্যতা সমীক্ষা শেষ হয়েছে ২০২১ সালের জুলাইয়ে। এরপর মেগা এ প্রকল্পের আর কোনো অগ্রগতি হয়নি। তবে পদ্মা সেতু দিয়ে ভাঙ্গা পর্যন্ত আগামী ১ নভেম্বর থেকে রেল চলাচল শুরুর খবরে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ ফের স্বপ্ন বুনতে শুরু করেছেন। তাঁরা দাবি জানিয়েছেন দ্রুত রেলপথ নির্মাণকাজ শুরু কারার। তবে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, অর্থ বরাদ্দের অভাবে আটকে আছে প্রকল্পটি। এদিকে ২০১৯ সালে জমি অধিগ্রহণের জন্য বাড়িঘর, গাছপালার সংখ্যা জরিপ করে লাল চিহ্ন দিয়ে গেছে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান। এর পর থেকে বরিশালের ওই সব স্থানে ঘরবাড়ি নির্মাণ কিংবা জমি কেনাবেচা করতে গিয়ে ঝামেলায় পড়ছে অনেক পরিবার। বরিশাল নগরের ২৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাশিপুরের চৌহুদপুর এলাকার মোক্তার বাড়ির জায়গায় হবে রেলস্টেশন। ওই বাড়ির বাসিন্দা মামুন মোক্তার বলেন, ‘বহু দিন আগে রেলপথের সীমানা নির্ধারণ করে গেছে। এর পর থেকে একধরনের অস্বস্তি এবং অস্থিরতা কাজ করছে। আমরা বসতবাড়ি নির্মাণকাজ করতে পারি না।’
নগরীর দক্ষিণ সাগরদী ফকির বাড়ি স্কুলসংলগ্ন বাসিন্দা দেওয়ান আবদুর রশিদ নীলু বলেন, ‘আমার বাড়িসহ আশপাশের ২০১৯ সালে জরিপ করে গাছগাছালি গুনে লাল চিহ্নিত নম্বর দিয়ে যায় একটি প্রতিষ্ঠান। ওই সময়ে ঘরের সংস্কার না করতে বলা হয়। তিনি টিনশেড বিল্ডিংয়ের কাজ করাতে পারছেন না। সম্ভাব্য রেললাইনের মধ্যে বাড়ি পড়েছে।’ তিনি জানান, তাঁর প্রতিবেশী নির্মাণশ্রমিক আব্দুর রহিম অসুস্থ অবস্থায় জমি বিক্রির চেষ্টা করেও পারেননি।
প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, নগরীর ২২, ২৩, ২৫, ২৮ ও ৩০ নম্বর ওয়ার্ডের শত শত ঘরবাড়ি পড়েছে সম্ভাব্য রেলপথের আওতায়। ওই সব স্থানে এখন ঘরবাড়ি নির্মাণ কিংবা জমি কেনাবেচা কঠিন হয়ে পড়েছে বলে জানিয়েছেন ২৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর এনামুল হক বাহার। পার্শ্ববর্তী ২৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সাইদুর রহমান জাকির জানান, তাঁর এলাকার দুর্গাপুর পুলের পাশ দিয়ে কয়েক একর জমির ওপর সম্ভাব্য রেললাইন যাওয়ার কথা রয়েছে। এ জন্য সেখানে জমি কেনাবেচায় সমস্যা হচ্ছে।
জানতে চাইলে বরিশাল রেললাইন বাস্তবায়ন কমিটির সদস্যসচিব মহসিন উল ইসলাম হাবুল বলেন, ‘ভাঙ্গা থেকে বরিশাল হয়ে কুয়াকাটা রেল সংযোগ সৃষ্টির জন্য আমরা বরিশালস্থ ঢাকায় বসবাসকারী আমলাদের নিয়ে বৈঠকও করেছি। যে সরকার ক্ষমতায় থাকুক না কেন বরিশালে রেল যোগাযোগ আমাদের প্রাণের দাবি। ভাঙ্গা পর্যন্ত যেহেতু রেললাইন চালু হয়েছে, সেহেতু কুয়াকাটা পর্যন্ত এই রেললাইন চালু হলে এ অঞ্চলে ব্যাপক অর্থনৈতিক পরিবর্তন আসবে।’
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ভাঙ্গা-কুয়াকাটা রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পের ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছে ৪১ হাজার ৭৯৭ কোটি টাকা। নতুন রেলপথসহ প্রয়োজনীয় অবকাঠামোর নির্মাণকাল ধরা হয়েছে ২০২২-২৯ সাল পর্যন্ত। এ রেলপথের দৈর্ঘ্য প্রায় ২১৫ কিলোমিটার। এর মধ্যে ভাঙ্গা থেকে বরিশাল স্টেশন পর্যন্ত রেলপথ হবে ৯৫ কিলোমিটার। এ ক্ষেত্রে জমি অধিগ্রহণ করতে হবে ৫ হাজার ৬৩৮ একর। ১১টি স্টেশনও রাখা হয়েছে। সূত্রমতে, পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগের পরে সম্ভাব্যতার সমীক্ষা ২০২১ সালের জুলাইয়ে জমা দেওয়া হয়েছে।
সূত্র আরও জানায়, দক্ষিণ কোরিয়ার দোহা, স্পেনের টিপসা ও বাংলাদেশের পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ডিডিসির জয়েন্ট ভেঞ্চার প্রতিষ্ঠান দিয়ে করানো হয় সম্ভাব্যতা সমীক্ষা। এতে বাংলাদেশ রেলওয়ের ব্যয় হয় ৪৩ কোটি টাকা। সমীক্ষায় বলা হয়, অর্থনৈতিকভাবে প্রকল্পটি অনেক মূল্যবান এবং এটি হবে একটি আকাঙ্ক্ষিত বিনিয়োগ। বরিশাল চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি সাইদুর রহমান রিন্টু বলেন, ‘ভাঙ্গা থেকে বরিশাল-পায়রা বন্দর হয়ে কুয়াকাটা পর্যন্ত রেললাইন সংযোগ এখন সময়ের দাবি। রেল যোগাযোগ চালু হলে এ অঞ্চলের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ত্বরান্বিত হবে।’
এ বিষয়ে বাংলাদেশ রেলওয়ের প্রধান পরিকল্পনা কর্মকর্তা এস এম সলিমুল্লাহ বাহার বলেন, ‘আমরা বরিশালে রেলপথ চালু করার জন্য ইতিমধ্যে ফিজিবিলিটি স্টাডি, জরিপ, ভূমি অধিগ্রহণ এবং রেললাইনের নকশা তৈরি অনেকাংশই এগিয়ে রেখেছি। কিন্তু এখনো এ প্রকল্পের ফান্ড নিশ্চিত হয়নি। অর্থ পাওয়া গেলে দ্রুত বরিশালে রেললাইনের কাজ শুরু হবে।’