ঝিনাইদহের প্রত্যন্ত জিথোড় গ্রামে জন্ম আমার। জন্মের মাত্র এক বছরের মধ্যে বাবাকে হারিয়েছি। বাবা মারা যাওয়ার পর ১৭টি বাড়িতে কেটেছে ছোটবেলা। এর মধ্যে মাকে নিয়েও পেটে-ভাতে থেকেছি বিভিন্ন বাড়িতে।
এক পর্যায়ে মাকে নিয়ে ছোট একটা খড়ের ছাউনি দেওয়া মাটির ঘরে মাসখানেক থাকলাম। বাড়িতে শুধু একটি মাটির হাঁড়ি ছিল রান্নার জন্য, ভাত খাওয়ার েকানো থালাবাসন ছিল না। কলাপাতায় খেতে হতো। তরকারি বলতে শুধু আলু সিদ্ধ, শাক বা ডাল।
এভাবে হাজারো কষ্টের মধ্যে দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গণিত বিভাগে ভর্তির সুযোগ পেলাম। স্কুলবেলা থেকে টানা ১৮ বছর টিউশনি করেছি। টিউশনির টাকায় নিজের খরচ চালিয়ে বাকিটা পাঠিয়ে দিতাম মায়ের জন্য। তীব্র দারিদ্র্যের মধ্যে কাউকে বুঝতে দিতাম না আমার কষ্ট। টাকা থাকলে খেতাম, না থাকলে পেট ভরে জল খেতাম। তবু কারো কাছে হাত পাতিনি। একবার মাসের ২৫ তারিখেই পকেট খরচের টাকা ফুরিয়ে গেছে। এদিকে ৩০ তারিখে বা ১ তারিখের আগে টিউশনির বেতন পাওয়ার সম্ভাবনা নেই। মানে মাসের বাকি পাঁচ দিন না খেয়ে থাকতে হবে। এসব নিয়ে টেনশনে অসুস্থ হয়ে রাতে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হলাম। পরের দিন ডাক্তার ছাড়পত্র দিতে চাইলেন। অনেক অনুরোধ করে ঢাকা মেডিক্যালে আরো পাঁচ দিন থেকে গেলাম। মেডিক্যালের ফ্লোরে ঘুমিয়েছি। তিনবেলা খেয়েছি। আর সেখান থেকেই টিউশনি ও ক্লাস করেছি। চিন্তায় থাকতাম, কোনো মাসে যদি টিউশনি না থাকে তাহলে তো না খেয়ে থাকতে হবে। আমি না হয় কোনো রকমে চলতে পারব, কিন্তু মায়ের কী হবে?
মায়ের খুব শখ ছিল, একবার হলেও দালানঘরে থাকবেন। টিউশনি করে গ্রামে আমার মায়ের জন্য ইটের ঘর বানিয়ে দিয়েছি। মায়ের আরেকটি ইচ্ছা, তিনি প্রধানমন্ত্রীকে সামনাসামনি দেখবেন। এই ‘অসম্ভব’ স্বপ্ন পূরণের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনেক চিঠি পাঠিয়েছি, কিন্তু উত্তর আসেনি। তার পরও আশায় আছি, হয়তো কোনো একদিন মায়ের সেই স্বপ্নও পূরণ হবে।