মো. আমিনুল ইসলাম
একজন মানুষের জীবনে যৌবনকাল হলো জীবনের শ্রেষ্ঠ সময়। এ সময়ে তার শারীরিক সক্ষমতা অনেক সবল থাকে। সব কঠিন কাজ তখন সহজ মনে হয়। তাই এ সময়ে রাতের শেষ অংশে জাগা, বেশি বেশি ইবাদত করা তার জন্য সহজ হয়। একজন মানুষ যখন বৃদ্ধ হন তখন তার জন্য বেশি বেশি ইবাদত করা কঠিন হয়ে পড়ে। মন চাইলেও তা করা যায় না। যৌবনকাল মানুষের জন্য আল্লাহর রহমত। যে ব্যক্তি তাঁর যৌবনকে আল্লাহর ইবাদতে ব্যয় করবেন, কঠিন কেয়ামতের দিন তিনি মহান আল্লাহর আরশের ছায়াতলে আশ্রয় পাবেন। রসুল (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহ রাব্বুল আলামিন সাত ব্যক্তিকে তাঁর আরশের ছায়ার নিচে আশ্রয় দেবেন, যেদিন তাঁর ছায়া ছাড়া অন্য কোনো ছায়া থাকবে না। এর মধ্যে ওই যুবক, যে তার যৌবনকাল অতিবাহিত করছে আল্লাহর ইবাদত করে’ (বুখারি ও মুসলিম)। মুসা (আ.) যখন পূর্ণ যৌবনে পৌঁছলেন তখন তাকে আল্লাহ জ্ঞান ও প্রজ্ঞা দান করেছেন। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেন, ‘যখন সে পূর্ণ যৌবনে উপনীত হলো তখন আমি তাকে জ্ঞান ও প্রজ্ঞা দান করলাম’ (সুরা আল কাসাস-১৪)। সুরা কাহাফে আল্লাহ রব্বুল আলামিন সাত ধার্মিক যুবকের বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেন, ‘হে নবী, আমিই তোমার কাছে তাঁদের বৃত্তান্ত সঠিকভাবে বর্ণনা করছি, অবশ্যই তাঁরা ছিল কতিপয় যুবক, যাঁরা তোমার মালিকের ওপর ইমান এনেছিল, আমি তাঁদের হেদায়েতের পথে এগিয়েও দিয়েছিলাম’ (আয়াত ১৩)। ইসলাম ধর্ম গ্রহণের ক্ষেত্রে সব সময় যুবকরাই আগে এগিয়ে এসেছেন। মুসা (আ.)-এর জমানায় বনি ইসরায়েলের যুবকরাই প্রথমে তাঁর ওপর ইমান আনেন। রসুল (সা.)-এর ইসলামী দাওয়াত কবুলের ক্ষেত্রে যুবকরাই প্রথম ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। হাদিসে এসেছে, আল্লাহ রব্বুল আলামিন কিয়ামতের ময়দানে প্রত্যেক বান্দাকে তিনটি প্রশ্ন করবেন। আর তা হলো, ১. বান্দা তার জীবনকাল কীভাবে অতিবাহিত করেছে ২. তার যৌবনকাল কী কাজে ব্যয় করেছে ৩. সম্পদ কীভাবে অর্জন করেছে এবং কোন কাজে তা ব্যয় করেছে। এই তিনটি প্রশ্নের যথাযথ উত্তর না দিয়ে কেউ এক কদমও কিয়ামতের ময়দান থেকে নড়তে পারবে না (তিরমিজি)। এ জন্য যৌবনকালের পরিপূর্ণ সদ্ব্যবহার প্রতিটি মুসলিম যুবক-যুবতীর জন্য অবশ্য কর্তব্য। কিন্তু আজকে আমাদের সমাজে যুবক-যুবতীরা ভিন্ন ধারার উৎসব ও সংস্কৃতি লালনের মধ্যে নিজেদের ব্যাপৃত করেছে। ইসলামী অনুশাসন ও মূল্যবোধ থেকে বিরত থাকছে। যা কাম্য নয়। রসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি অন্য জাতির সাদৃশ্য অবলম্বন করে সে তাদের দলভুক্ত বলে গণ্য হবে’ (সুনানে আবু দাউদ)। ইসলাম ধর্মের সঙ্গে সাংঘর্ষিক এ ধরনের অশ্লীল যে কোনো কাজকে আল্লাহতায়ালা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করেছেন। এমনকি এসব কর্মে যারা যুক্ত হবে কিংবা প্রচার ও প্রসার করবে তাদের জন্য কোরআনে আল্লাহ বলেন, ‘যারা মুমিনদের মাঝে অশ্লীলতার প্রসার কামনা করে তাদের জন্য রয়েছে দুনিয়াতে ও আখিরাতে মর্মন্তুদ শাস্তি’ (সুরা নূর-২৪)। রসুল (সা.) বলেছেন, ‘যেদিন আল্লাহর আরশের ছায়া ব্যতীত কোনো ছায়া থাকবে না, সেদিন আল্লাহতায়ালা সাত ধরনের মানুষকে তাঁর ছায়ায় আশ্রয় দেবেন। এরা হলেন, ১. ন্যায়পরায়ণ শাসক ২. যে যুবক আল্লাহকে ভয় করে ইবাদতে মগ্ন ছিল ৩. যার অন্তর মসজিদের সঙ্গে সম্পর্ক রেখেছিল ৪. আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য যে দুজন ব্যক্তি মহব্বতের মধ্য দিয়ে সম্পর্ককে শক্ত করে আঁকড়ে ধরেছিল ৫. সেই ব্যক্তি বা যুবক যে সুন্দরী রমণীর আহ্বান প্রত্যাখ্যান করেছে আল্লাহর ভয়ে। ৬. যে ব্যক্তি এমনভাবে দান করে যা তার ডান হাত দান করলে বাম হাত তা জানে না। ৭. যে ব্যক্তি নির্জনে আল্লাহর স্মরণে ও ভয়ে চোখের পানি ফেলেছে (বুখারি)। যৌবনকালের কিছু গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত হলো, ক. দৃষ্টিকে সংযত রাখা। কোনো সুন্দরী রমণীর দিকে চোখ পড়লে তা দ্রুত সরিয়ে নেওয়া। খ. মিষ্টভাষী ও চরিত্রবান হওয়া। গ. পরকালের জন্য প্রস্তুতি নেওয়া। ঘ. পিতা-মাতাকে সম্মান করা ও বৃদ্ধকালে তাদের সেবা করা।
লেখক : অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংকার