মানব জাতির প্রতি মহানবী (সা.)-এর যে বিপুল অবদান রয়েছে, তার স্বীকৃতি হিসেবে তাঁকে ভালোবাসা উপহার দেওয়া ইমানের দাবি। মুমিন মাত্রই এই মহামানবের অকুণ্ঠ ভালোবাসা লালন করে। পবিত্র কোরআন-হাদিসে নবীপ্রেমের গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা এসেছে।
কোরআনে নবীপ্রেম: প্রকৃত মুমিন হতে হলে রাসুল (সা.)কে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসতে হবে। এমনকি নিজের জীবনের চেয়েও বেশি। এরশাদ হয়েছে, ‘নবী মুমিনদের কাছে তাদের জীবনের চেয়েও বেশি প্রিয়।’ (সুরা আহজাব: ৬) আল্লাহ ও তার রাসুলের ভালোবাসাকে সবার ওপরে স্থান দিতে হবে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘(হে নবী) বলুন, তোমাদের কাছে যদি তোমাদের বাবা-মা, সন্তান, ভাইবোন, বংশ, অর্জিত সম্পদ, এমন ব্যবসা, যা বন্ধ হয়ে যাওয়ার ভয় করো এবং তোমাদের বাসস্থান, যা তোমরা পছন্দ করো, তা আল্লাহ ও তার রাসুল এবং তার পথে লড়াই করা থেকে অধিক প্রিয় হয়, তাহলে অপেক্ষা করো আল্লাহর বিধান আসা পর্যন্ত। আল্লাহ ফাসেক সম্প্রদায়কে হিদায়েত দান করেন না।’ (সুরা তওবা: ২৪)
হাদিসে নবীপ্রেম: রাসুলুল্লাহ (সা.) সাহাবিদের তাঁর প্রতি সর্বোচ্চ ভালোবাসা পোষণের নির্দেশনা দিয়েছেন। হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের মধ্যে কেউ প্রকৃত ইমানদার হবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত আমি তার কাছে তার বাবা-মা, সন্তানসন্ততি এবং সব মানুষ অপেক্ষা অধিক প্রিয় হব না।’ (বুখারি: ১৫) একবার ওমর (রা.) বললেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল, আপনি আমার কাছে সবকিছু থেকে প্রিয়, তবে আমার প্রাণ ছাড়া।’ তখন নবী (সা.) বললেন, ‘না ওমর, এতে হবে না। যে সত্তার হাতে আমার জান, তাঁর কসম, (ততক্ষণ পর্যন্ত তুমি পূর্ণাঙ্গ মুমিন হতে পারবে না,) যতক্ষণ আমি তোমার কাছে তোমার জানের চেয়েও প্রিয় হব না।’ পরক্ষণেই ওমর বললেন, ‘হ্যাঁ; এখন তা হয়েছে; আল্লাহর কসম, (এখন থেকে) আপনি আমার কাছে আমার প্রাণের চেয়েও প্রিয়।’ তখন নবী (সা.) বললেন, ‘হ্যাঁ; ওমর, এখন হয়েছে।’ (বুখারি: ৬৬৩২)
তিনটি গুণের অধিকারী ব্যক্তি ইমানের স্বাদ আস্বাদন করবে। এর মধ্যে প্রথম হলো, যার কাছে আল্লাহ ও তাঁর রাসুল সবচেয়ে প্রিয় হবেন। (মুসলিম: ৬৭)
নবীপ্রেম মুমিনের সম্বল: মুমিনের সবচেয়ে বড় সম্পদ হলো ইমান। এর স্বাদ যার অর্জিত হয়, সমস্ত দুঃখ, কষ্ট তার কাছে তুচ্ছ মনে হয়। আর এই স্বাদ সে-ই পায়, যার কাছে আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের ভালোবাসা সবকিছুর ঊর্ধ্বে থাকে। হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেন, ‘তিনটি গুণের অধিকারী ব্যক্তি ইমানের স্বাদ আস্বাদন করবে। এর মধ্যে প্রথম হলো, যার কাছে আল্লাহ ও তাঁর রাসুল সবচেয়ে প্রিয় হবেন।’ (মুসলিম: ৬৭) নবীপ্রেম একইভাবে আখিরাতে সাফল্য অর্জনের মাধ্যম। আখিরাতে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সঙ্গ লাভের মাধ্যমে তা পূর্ণতা পাবে। নবী (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি যাকে ভালোবাসে, তার সঙ্গেই তার হাশর হবে।’ (মুসলিম: ২৬৪০)
লেখক: মুহাদ্দিস ও খতিব