‘বছরখানেক আগে একেকটা অর্ডারে ১৫ শতাংশের মতো লাভ থাকত। এখন ৮-১০ শতাংশও থাকছে না। এমনকি অনেক সময় লাভ ছাড়াই অর্ডার ডেলিভারি করতে হচ্ছে। কারণ, ব্যবসা তো টিকিয়ে রাখতে হবে।’
বলছিলেন ঘরে তৈরি খাবার বিক্রির ব্যবসা করা নারী উদ্যোক্তা খোদেজা বেগম আঁখি। ২০১৭ সাল থেকে ডেজার্ট, স্ন্যাকসসহ বিভিন্ন ধরনের ঘরে তৈরি খাবার সরবরাহ করে আসছেন তিনি। ‘রূপের স্বপ্ন ফুড’ অনলাইন পেজের স্বত্বাধিকারী এই নারী উদ্যোক্তা জানান, ডিম, তেল, মসলা, মাছ, মাংসসহ দ্রব্যমূল্যের অস্বাভাবিক ঊর্ধ্বগতির কারণে ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে তাঁকে হিমশিম খেতে হচ্ছে। পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় খাবারের চাহিদা কমে গেছে। লাভের পরিমাণ একেবারেই সীমিত হয়ে পড়েছে। সারা দিন ধরে খাদ্যসামগ্রী তৈরির পর নিজের শ্রমের মূল্যটুকুও পাচ্ছেন না তিনি।
সাদিয়া আফরিন নামের আরেক নারী উদ্যোক্তা জানান, কাজে সহায়তার জন্য দুজন সহকারী ছিল তাঁর। কিন্তু সব ধরনের কাঁচামালের দাম বেড়ে যাওয়ায় বাধ্য হয়ে একজনকে বাদ দিতে হয়েছে। আক্ষেপ করে এই নারী উদ্যোক্তা বলেন, ‘পুরুষেরা বা বড় প্রতিষ্ঠানগুলো লট ধরে পাইকারি দামে কাঁচামাল কেনে। আমরা তো সেটা পারি না। তাই আমাদের বেশি ক্ষতির মুখে পড়তে হচ্ছে।’
শুধু আঁখি বা সাদিয়া নন, সব ধরনের কাঁচামালের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির কারণে কঠিন সময় পার করছেন ছোট পরিসরে কাজ করা নারী উদ্যোক্তারা। তাঁরা বলছেন, কাঁচামালের দাম বেড়ে যাওয়ায় তাঁদের তৈরি পণ্যেরও দাম বাড়াতে হচ্ছে। কিন্তু সেই দামে ক্রেতা মিলছে না।
ফলে অনেকে ব্যবসা গুটিয়ে নিতে বাধ্য হচ্ছেন। এমন প্রেক্ষাপটে ১৯ নভেম্বর পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক নারী উদ্যোক্তা দিবস। বিশ্বের নারী উদ্যোক্তাদের সম্মান জানাতে এবং নতুন উদ্যোক্তাদের অনুপ্রাণিত করতে ২০১৪ সাল থেকে দিবসটি পালন করা হচ্ছে।
উইমেন অ্যান্ড ই-কমার্সের (উই) প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি নাসিমা আক্তার নিশা বলেন, আসলে যুদ্ধসহ নানা কারণে সারা বিশ্বে একটা অস্থির সময় চলছে। অস্বাভাবিকভাবে দ্রব্যমূল্য বাড়ছে। এর কারণে সবাইকে ভুগতে হচ্ছে। তবে বেশির ভাগ নারী উদ্যোক্তা যেহেতু ঘরে বসে ছোট পরিসরে কাজ করেন, সামান্য পরিমাণে কাঁচামাল কেনেন। তাই তাঁদের লভ্যাংশের পরিমাণ বেশি কমছে।
উই-এর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, দেশে প্রায় চার লাখ নারী উদ্যোক্তা রয়েছেন। তাঁদের মধ্যে খাদ্যপণ্য নিয়ে কাজ করছেন দেড় লাখ থেকে পৌনে দুই লাখ নারী উদ্যোক্তা। খাদ্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির কারণে তাঁরাই ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন বেশি।
এ বিষয়ে ই-ক্যাবের উইমেন্স এন্ট্রাপ্রেনিউরস ফোরাম-সম্পর্কিত স্ট্যান্ডিং কমিটির প্রেসিডেন্ট নাজনীন নাহার বলেন, ক্ষুদ্র নারী উদ্যোক্তাদের উচিত হবে, কয়েকজন মিলে বেশি করে কাঁচামাল কেনা। তাহলে তাঁদের কাঁচামালের খরচ কিছুটা কম পড়বে। এ বিষয়গুলো বোঝাতে এবং পণ্যের দাম নির্ধারণ ও পণ্যের মান সংরক্ষণের বিষয়ে নারী উদ্যোক্তাদের নিয়ে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে বলে জানান তিনি।