১৯৪৮ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তানের গণপরিষদের অধিবেশনে কুমিল্লার কৃতী সন্তান অ্যাডভোকেট ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত সর্বপ্রথম রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে সোচ্চার হন। স্পিকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে তিনি বলেন, গণপরিষদে কার্যবিবরণী লেখা হয় ইংরেজি ও উর্দু ভাষায়, কিন্তু সমগ্র পাকিস্তানের ৫৬ শতাংশ মানুষ বাংলা ভাষায় কথা বলে। তাই অধিবেশনে ইংরেজি ও উর্দুর সঙ্গে বাংলা ভাষাও ব্যবহার করতে হবে।
এ ঘটনার পর ধীরেন্দ্রনাথ পাকিস্তান সরকারের রোষানলে পড়ে কয়েকবার কারাবরণও করেন।
১৯৭১ সালের ২৯ মার্চ গভীর রাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী কুমিল্লা নগরীর ঝাউতলা এলাকার ধর্মসাগরের পশ্চিম পারের বাড়ি থেকে ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত এবং তাঁর ছেলে দিলীপ কুমার দত্তকে ধরে নিয়ে যায়। কুমিল্লা সেনানিবাসে ৮৫ বছর বয়স্ক ধীরেন্দ্রনাথ দত্তর ওপর অমানবিক নির্যাতন চালানো হয়। পরে বাবা-ছেলে দুজনকেই নির্মমভাবে হত্যা করা হয়।
রাষ্ট্রভাষা বাংলা করার অন্যতম ‘ভিত রচনাকারী’ ধীরেন্দ্রনাথ দত্তর কুমিল্লার স্মৃতিবিজড়িত বাড়িটি এখন পড়ে আছে অযত্ন-অবহেলায়। ২০১০ সালে তৎকালীন তথ্য ও সংস্কৃতি মন্ত্রী আবুল কালাম আজাদ বাড়িটি পরিদর্শনে আসেন। তিনি এখানে ‘ভাষাসৈনিক ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত স্মৃতি জাদুঘর’ নির্মাণের আশ্বাস দিলেও প্রায় ১৪ বছরেও এর বাস্তবায়ন হয়নি।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, পুরো বাড়িটি স্যাঁতসেঁতে। সামনের ভাঙাচোরা টিনশেড ঘরটি যেকোনো সময় ধসে পড়ার অবস্থা। আর পেছনের ঘরটি ভেঙে পড়েছে। পুরো বাড়িটি নোংরা, আবর্জনায় ভরে গেছে।
প্রায় ২২ বছর ধরে বাড়িটিতে বাস করে কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার সুজন মিয়ার পরিবার। সুজন মিয়া মারা গেছেন প্রায় ১২ বছর আগে। এখন তাঁর স্ত্রী জাহানারা বেগম সন্তানদের নিয়ে থাকেন, কেয়ারটেকারের মতো।
কুমিল্লা জেলা প্রশাসনের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ধীরেন্দ্রনাথ দত্তর স্মৃতি সংরক্ষণে তাঁর উত্তরাধিকারীদের অনাগ্রহ রয়েছে। তারা না চাইলে সরকারিভাবে সেখানে কিছুই করা যাচ্ছে না। কারণ ওই বাড়ির সম্পত্তি তাঁদের ব্যক্তিমালিকানাধীন।’
ভাষাসৈনিক ধীরেন্দ্রনাথ দত্তর নাতনি আরমা দত্ত সাবেক সংসদ সদস্য। এ প্রসঙ্গে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘বাড়িটি সংরক্ষণে আমাদের পরিকল্পনা রয়েছে। আমরা তাঁর স্মৃতিগুলো রক্ষা করতে চেষ্টা করছি।’