‘যে যতটুকু সাহস পাইছে ওই ধোঁয়া অতিক্রম করেই ছাদে গেছে। নাকে- মুখে কাপড় বেঁধে সবাই ছাদে গেছে। ছাদে যেতে পেরে বেঁচে গেছি।’
শুক্রবার (১ মার্চ) শেখ হাসিনার বার্ন ইউনিটের পোস্ট অপারেটিভ কক্ষের সামনে এভাবেই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার অভিজ্ঞতা জানান পাঠাও ফুডের ডেলিভারি ম্যান ফরিদুল ইসলাম।
তিনি বৃহস্পতিবার সাড়ে ৯টার দিকে খানাস রেস্টুরেন্টে খাবার সংগ্রহ করতে যান। সেখানে গিয়েই আগুনের মুখোমুখি হন।
ফরিদুল ইসলাম বলেন, ‘আমি সাড়ে ৯ টার দিকে খানাসে খাবার নিতে যাই। ঢোকার ৪-৫ মিনিট পর শুনি নিচে আগুন লাগছে।
তখন আমরা সবাই নিচে নামার চেষ্টা করছিলাম। কিন্তু ধোঁয়ার গতিবেগ দেখে নিচে নামতে পারিনি।’
তিনি আরো বলেন, ‘সিড়ি দিয়ে ধোঁয়া উপরের দিকে উঠতেছিলো। যেদিক দিয়ে মানুষ বের হবে সেই মূল গেটেই ছিল আগুন।
এজন্য ভিতরে লোক বাইর হইতে পারে নাই। যে যতটুকু সাহস পাইছে ওই ধোয়া অতিক্রম করেই ছাদে গেছে। নাকে- মুখে কাপড় বেঁধে সবাই ছাদে গেছে। ছাদে যে কজন গেছে ওই কজনই আমরা ভালো আছি।’
ফরিদুল ইসলামের মতো ছাদে গিয়ে প্রাণে বেঁচে গেছেন বেইলি রোডের ওই ভবনে অবস্থিত বিএসটি রেস্টুরেন্টের বাবুর্চি জহিরুল।
জহিরুল বলেন, ‘আমি যখন শুনলাম আগুন লাগছে তখন ভেতর থেকে বের হয়ে সিড়ির ওখানে গিয়ে দেখি ধোঁয়া। তখন আমি একেবারে নিচে নেমে দেখি ধোঁয়া। ধোঁয়ায় কিছু দেখি না। পুরোপুরি দম বন্ধ হয়ে যায়। পরে আবার সিড়ি দিয়ে আস্তে আস্তে ওপরে উঠে যাই।’
তিনি আরো বলেন, ‘ছাদে গিয়ে পরে দেখলাম ধোঁয়া কমে গেছে। এরপর একটু শান্তি পেলাম। এরপরেই আবার আগুন নিচ থেকে ওপরে উঠে আসছে। সবাই বলতেছে সামনে চলে যাওয়ার জন্য। কিন্তু আমরা পিছনে আটকা পড়ে যাওয়ায় সামনে আর যেতে পারছিলাম না। পরে ফায়ার সার্ভিসের লোকজন ছাদের ওপরে যে রেস্টুরেন্ট ছিল সেটার ভিতরে প্রবেশ করে। তার ওপরের ছাদে গিয়ে তাঁরা জানলা ভাঙে। তারপর সেখান থেকে আমাদের বের করে।’
জহিরুল ও ফরিদুল ইসলাম সহ আরো ৯ জন ভর্তি আছেন শেখ হাসিনা বার্ন ইউনিটের পোস্ট অপারেটিভ কক্ষে। এদের মধ্যে স্বামী মেহেদি হাসান ও স্ত্রী সুমাইয়াও রয়েছেন। তাঁরা খানাসে খাবার খেতে গেছিলেন। সুমাইয়ার চাচি ফারজানা বলেন, ‘তারা এখন মোটামুটি সুস্থ রয়েছেন। কিছুটা কথা বলতে পারেন।’
পোস্ট অপারেটিভে ভর্তি হওয়া রোগীরা কিছুটা সুস্থ হয়েছে বলে জানিয়েছেন অরেনজেনিকের ইউনিট প্রধান ডা. প্রদীপ চন্দ্র দাস। তিনি বলেন, ‘এখানে ১১ জন রোগী ভর্তি আছেন। তাদের অনেকেরই শারীরিক অবস্থার কিছুটা উন্নতি হয়েছে।’