সমবায় প্রতিষ্ঠান দ্য খ্রিস্টান কো-অপারেটিভ ক্রেডিট ইউনিয়ন লিমিটেড বা ঢাকা ক্রেডিটের সভাপতি থাকার সময় ডিভাইন মার্সি হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিয়েছিলেন বাবু মার্কুজ গমেজ। এখন তিনি হাসপাতাল বাস্তবায়ন কমিটির সমন্বয়ক।
হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ কেন নিলেন?
মূলত এই পরিকল্পনা নিয়েছিলাম ২০১৪ সালে, যখন আমি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হই।
এ জন্য সদস্যদের জন্য ‘হেলথ প্রটেকশন স্কিম’ নামে একটা প্রকল্প চালু করি। এক পর্যায়ে দেখলাম, সদস্যদের একটা বড় অংশকে হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়ার জন্য সহায়তা দিতে হচ্ছে। ঐতিহাসিকভাবেই বাংলাদেশে মেডিক্যাল সার্ভিস, শিক্ষা এবং সমবায়—এই তিনটি জায়গায় খ্রিস্টান কমিউনিটির বড় অবদান আছে। চিন্তা করলাম, একটা হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করলে আমরা স্বাস্থ্য খাতে গুণগত সেবা দিতে পারব।
তবে এ জন্য একটা জটিল প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে আমাদের এগোতে হয়েছে। বার্ষিক সাধারণ সভায় সাধারণ সদস্য, গভর্নিং বডির অনুমতি নিতে হয়েছে। পরে ক্যাথলিক চার্চের সঙ্গেও যৌথ উদ্যোগের চেষ্টা করেছিলাম।
ক্যাথলিক চার্চ কর্তৃপক্ষ তো ঢাকার আসাদ গেটে হাসপাতালের জন্য জায়গা দিয়েছিল আপনাদের?
হ্যাঁ। তারা প্রথমে আসাদ গেটে ১০ কাঠার মতো জায়গাও দিয়েছিল।
আসলে আমরা সাধ্যের মধ্যে খরচে ভালোমানের স্বাস্থ্যসেবা ও শিক্ষা নিশ্চিত করতে চাচ্ছি। ঢাকার কাছাকাছি বড় জায়গা নিয়ে হাসপাতাল, নার্সিং ইনস্টিটিউট এবং মেডিক্যাল কলেজ—এই তিনটা প্রতিষ্ঠান একসঙ্গে করতে চেয়েছিলাম। প্রাইভেট মেডিক্যাল কলেজে পড়তে গেলে বহু লাখ টাকা লেগে যায়, যা সাধারণ মধ্যবিত্ত, নিম্ন মধ্যবিত্তের নাগালের বাইরে। তবে প্রথমে আমরা হাসপাতালটা করেছি। নার্সিং ইনস্টিটিউটের জন্যও আবেদন করা হয়েছে।
আপনাদের সামনে এখন চ্যালেঞ্জ কী কী?
অনেক চ্যালেঞ্জ আছে। হাসপাতাল পরিচালনার বিধি-বিধানের পাশাপাশি নৈতিকতার বিষয় আছে। নৈতিকতার বিষয়ে আমরা আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখে স্বাস্থ্যসেবা দেব। দেশের হাজারো মানুষ অনেক সাধারণ অসুখেও ভারতসহ বিভিন্ন দেশে চিকিৎসা নিতে যায়। আমাদের লক্ষ্য, এর যেন প্রয়োজন না হয়। সেই মানের সেবাটা আমরা নিশ্চিত করতে চাই সাধ্যের মধ্যে। প্রতিবেশী দেশ যদি পারে, আমরা কেন পারব না?
বিদেশি চিকিৎসক ও কর্মীদের আচরণ এবং পরীক্ষা-নিরীক্ষার নির্ভুলতার প্রশংসা করেন অনেকেই…
দেশের বাইরে চিকিৎসা নিতে গেলে মূলত ডাক্তার, নার্স তথা স্বাস্থ্যসেবা কর্মীদের আচরণগত পার্থক্যটা বড় করে চোখে পড়ে। কারণ, অসুস্থ মানুষ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ, ডাক্তার বা নার্সের কাছ থেকে প্রথমত আশ্বাস, ভালো ব্যবহার বা সান্ত্বনা পেতে চায়। এই সংস্কৃতি এলে বাংলাদেশে সেভাবে গড়ে ওঠেনি। ব্যতিক্রমধর্মী আন্তরিক চিকিৎসক, কর্মী অবশ্যই আছেন। দ্বিতীয়ত হচ্ছে, যথাযথ রোগ নির্ণয়। আমরা পরীক্ষাগুলো যেন নির্ভুল হয় সে জন্য সর্বোচ্চ জোর দিয়েছি। অনেক সময়ই আমরা দেখি, এখানকার ডাক্তার বলেছেন, ‘আপনার এটা হয়েছে।’ কিন্তু ভারতে গেলে বলে কিছুই হয়নি বা অন্য কিছু একটা হয়েছে। হয়তো ভারতেও একই মেশিনে টেস্ট হচ্ছে। কিন্তু মেশিনের পেছনে যাঁরা কাজ করছেন অর্থাৎ দক্ষ মানবসম্পদ গড়ার পেছনে এ দেশে বিনিয়োগ অনেক কম। এই জায়গাটা নিশ্চিত করতে চাই আমরা। ভালোবাসা, সেবা এবং সহমর্মিতা আমাদের মূলমন্ত্র।
আমাদের সুযোগ হয়েছে ভারতের বিখ্যাত ফাদার মুলার চ্যারিটেবল ইনস্টিটিউটের সঙ্গে কাজ করার। তাদের সঙ্গে আমাদের একটা সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে। নির্মাণকাজ থেকে শুরু করে আমাদের কর্মীদের প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রে তারা সহায়তা করছে।’
সংক্ষেপে এই হাসপাতাল নিয়ে আপনাদের স্বপ্নের কথা বলুন
বাংলাদেশে স্বাস্থ্যসেবা ক্ষেত্রে একটা গুণগত পরিবর্তন নিয়ে আসাটাই আমাদের স্বপ্ন। সম্ভাব্য সর্বোচ্চ লাভ তোলা আমাদের উদ্দেশ্য না। সে ক্ষেত্রে সেবাটা উবে যেতে থাকে। ডাক্তার কতজন রোগী দেখবেন, টেস্ট দেবেন এসব টার্গেট দিয়ে দেওয়া হয়! নিশ্চিত থাকুন, এটা ডিভাইন মার্সি হাসপাতালে হবে না।