Friday, October 11, 2024

রোডম্যাপ চাই ব্যবসায় খরচ কমানোর

বৈশ্বিক ও অভ্যন্তরীণ চাপে শিল্প খাতে ক্রান্তিলগ্ন অতিক্রম করছে। দিন দিন বাড়ছে জ্বালানি মূল্য। একদিকে ডলার সংকট, অন্যদিকে ঋণের সুদহারে চলছে উল্লম্পন।

অর্থভুবন : রপ্তানি খাতের প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে বাজেটে কী ধরনের পদক্ষেপ প্রত্যাশা করেন?

মোহাম্মদ আলী খোকন : বাংলাদেশের রপ্তানির বাজার একশ বিলিয়ন ডলার পেরোনোর সম্ভাবনা আছে। তবে রপ্তানি খাতের প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে শিল্প খাতে নিরবচ্ছিন্ন জ্বালানি, ব্যাংক ঋণের সুদহার সহনীয় পর্যায়ে নিয়ে আসা, ইডিএফ ফান্ড সম্প্রসারণ ও ডলার সংকট কাটাতে বাজেটে পদক্ষেপ রাখা জরুরি। পাশাপাশি ভ্যাট-ট্যাক্স হয়রানি হ্রাস ও হার কমিয়ে আনা গেলে রপ্তানি খাত বিদ্যমান সংকট কাটিয়ে আবার ঘুরে দাঁড়াবে আশা করছি।

অর্থভুবন : বাজেটে বিনিয়োগ-কর্মসংস্থান বৃদ্ধিতে কী কী পদক্ষেপ থাকা উচিত?

মোহাম্মদ আলী খোকন : বিনিয়োগের প্রথম শর্ত হচ্ছে ব্যবসা সহজীকরণ এবং ব্যবসা পরিচালনার খরচ কমিতে আনতে হবে। আমলাতান্ত্রিক জটিলতা না কমলে বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। ২০০১ সালে সরকার ক্ষমতায় এসে বিনিয়োগের স্বার্থে আয়করে একটি ধারা যুক্ত করেছিল, পরে সেটি বাতিল করা হয়। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে ৫০০ লোক, এক হাজার বা তার বেশি সংখ্যক কর্মসংস্থান করলে আলাদা আলাদ কর সুবিধা দেওয়া হয়। বাংলাদেশে কর সুবিধা দিলে ও লালফিতার দৌরাত্ম্য কমিয়ে আনলে দেশে বিনিয়োগ বাড়তে বাধ্য।

অর্থভুবন : আইএমএফ ঋণের শর্ত হিসাবে কর অব্যাহতি কমিয়ে আনার পরামর্শ দিয়েছে। এনবিআরও সেই শর্ত পূরণে কাজ করছে। এতে দেশীয় শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হবে কিনা?

মোহাম্মদ আলী খোকন : আমরা কর অব্যাহতি চাই না। আমরা চাই এনবিআর করজাল বাড়িয়ে করহার কমিয়ে আনুক। বর্তমানে যারা ট্যাক্স দেন তাদের ওপর বারবার করের বোঝা চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে। যারা ট্যাক্স দেন তাদের ওপর এক ধরনের অত্যাচার করা হচ্ছে। এতে ঘুস-দুর্নীতি অনেক বেড়ে গেছে। আয়কর-কাস্টমসে অযৌক্তিকভাবে শুধু পুরস্কারের লোভে মোটা অঙ্কের জরিমানা করা হয়। যার ট্যাক্স ৫০ লাখ টাকা হওয়ার কথা তাকে ৫ কোটি টাকার জরিমানা ধরিয়ে দেওয়া হয়। তারপর দর কষাকষি (বার্গেনিং) শুরু করে কী দেবেন বলে? কিছু দিলে ৫ কোটি টাকার জরিমানা এক কোটি টাকা করে ফিক্সড করা হয়। এতে তার (কর কর্মকর্তা) দুদিকে লাভ। একদিকে ঘুসের টাকা পাচ্ছেন, অন্যদিকে জরিমানা করায় পুরস্কার পাচ্ছেন। মোটকথা কর কর্মকর্তাদের স্বেচ্ছাচারী ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। ঔদ্ধত্য বেড়েছে কর কর্মকর্তাদের। এ কারণে ব্যবসায়ীরা ব্যবসা করেও করের খাতায় নাম লেখাতে ভয় পান। এক কোটি মানুষকে করজালে আনার মাধ্যমে করহার কমিয়ে আনলে অব্যাহতির আর প্রয়োজন পড়বে না।

অর্থভুবন: জ্বালানি খাতের ভর্তুকি কমিয়ে আনার পরামর্শ দিয়েছে আইএমএফ। এতে গ্যাস-বিদ্যুতের দাম আরও বাড়ার সম্ভাবনা আছে। শিল্পে এর কেমন প্রভাব পড়বে?

মোহাম্মদ আলী খোকন : জ্বালানি খাতে সরকার শিল্পে কোনো ভর্তুকি দিচ্ছে না। বিদ্যুৎ উৎপাদনে কুইক রেন্টাল পাওয়ার প্ল্যান্টে সরকার ১৫ টাকায় গ্যাস দিচ্ছে, সার উৎপাদনে ভর্তুকি দিচ্ছে। কিন্তু ভর্তুকির বোঝা শিল্পের ওপর চাপানো হচ্ছে। অপচয় কমিয়ে এবং দেশীয় উৎস থেকে গ্যাস উত্তোলনে মাধ্যমে ভর্তুকি কমিয়ে আনতে পারে। তিনি আরও বলেন, গৃহস্থালি ও সিএনজিতে গ্যাসের বিপুল অপচয় হয়। এ খাতে গ্যাস সরবরাহ কমিয়ে এলপিজিতে রূপান্তর করলে ভর্তুকি অনেক কমে যাবে। পাশাপাশি কম উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন সরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোকে এনার্জি অডিট করিয়ে বন্ধ করে দেওয়া উচিত। এতেও অনেক ভর্তুকি কমে যাবে। শিল্পে ৩০ টাকায় গ্যাস দেওয়ার পরে যদি ভর্তুকি হয়, তাহলে বিদ্যুৎ-সারে ১৫ টাকায় গ্যাস দেওয়াটা কী?

অর্থভুবন : ঋণের সুদহার লাগামহীনভাবে বাড়ছে। এটি সমাধানের উপায় কী?

মোহাম্মদ আলী খোকন : কোভিড মহামারিতে প্রধানমন্ত্রীর নেওয়া যুগোপযোগী সিদ্ধান্তের কারণে শিল্প খাত বড় ধরনের ক্ষতির মুখ থেকে বেঁচে গিয়েছিল। এখন স্মার্ট পদ্ধতি ঋণের হার নির্ধারণ করায় ১৩-১৪ শতাংশ সুদ দিতে হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, সুদহার সিঙ্গেল ডিজিট বা নয়-ছয় অর্থনীতির কোনো নীতির মধ্যে পড়ে না। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, তাহলে ডলারকে কেন ক্রলিং পেগ পদ্ধতিতে আটকে রাখা হয়েছে। তাহলে ডলারকেও তো মুক্ত অর্থনীতির সংজ্ঞা অনুযায়ী বাজার ব্যবস্থাপনার ওপরে ছেড়ে দেওয়া উচিত। ডলারের দাম আটকে রেখে সুদহার বাজারের ওপর ছেড়ে দিলে অর্থনীতি ভারসাম্যহীন হয়ে পড়বে।

অর্থভুবন: কালোটাকা বিনিয়োগের সুযোগকে সমর্থন করেন কিনা?

মোহাম্মদ আলী খোকন : ব্যক্তিগতভাবে কালোটাকা বিনিয়োগের পক্ষে না। ঘুস-দুর্নীতির টাকা অবশ্যই সাদা করার সুযোগ দেওয়া উচিত নয়। তবে অপ্রদর্শিত অর্থ যেটা বৈধভাবে উপার্জিত হয়েছে, হয়তো কোনো কারণে ট্যাক্স ফাইলে দেখানো হয়নি, এ ধরনের অর্থ বিশেষ ব্যবস্থায় বিনিয়োগ করার সুযোগ রাখা উচিত। এতে কর্মসংস্থান হবে। মোটাদাগে অর্থনীতিতে গতি সঞ্চারিত হবে।

অর্থভুবন: এনবিআরের সক্ষমতা বাড়াতে কি কি পদক্ষেপ নেওয়া উচিত?

মোহাম্মদ আলী খোকন : রাজস্ব আদায়ে এনবিআরের চিন্তাচেতনা আজও ঢাকাকেন্দ্রিক। অর্থনৈতিক উন্নতির কারণে বিভাগীয় পর্যায়ে, এমনিকে জেলা পর্যায়ে এখন অনেকের ট্যাক্স দেওয়ার সক্ষমতা আছে। কিন্তু সেখানে যাচ্ছে না। প্রতিটি উপজেলায় এখন ৫-১০ হাজার কোটি টাকা ডিপোজিট আছে।

এতবড় বিশাল জায়গা বাদ দিয়ে এনবিআর শুধু ঢাকা ও চট্টগ্রাম থেকে ট্যাক্স আদায়ে মরিয়া থাকে। মোট ট্যাক্সের ৭০ শতাংশের বেশি এ দুই অঞ্চল থেকে আসছে। রাজস্ব আদায় বাড়াতে এনবিআরকে দক্ষতা ও জনবল বাড়ানোর বিকল্প নেই। সাময়িক সময়ের জন্য কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোর রিটার্ন স্বনির্ধারণী পদ্ধতিতে অনলাইনে দেওয়ার ব্যবস্থা চালু করতে পারে এনবিআর। এ সময় ঢাকার জনবলকে বাইরে পাঠিয়ে দেওয়া যেতে পারে। এখন পুরো এনবিআর আগারগাঁও নিয়ে গিয়ে এসি দালানে বসে সারা দেশ থেকে ট্যাক্স আদায় করা কখনো সম্ভব নয়।

 

 
spot_imgspot_img

মানুষ তার ইচ্ছা পরিমাণ বড় হয়, সময় লাগলেও ভাঙাড়ি বেচে স্বর্ণের বাড়ি!

অর্থভুবন প্রতিবেদক ‘যেখানে দেখিবে ছাই, উড়াইয়া দেখ তাই, পাইলে পাইতে পার অমূল্য রতন’। বাস্তবেও অনেকটা ছাই কুড়িয়েই রীতিমতো নিজের ভাগ্য বদলে ফেলেছেন এক ব্যক্তি। শুনতে...

বীর প্রজন্ম একাডেমীর পথচলা শুরু

অর্থভুবন প্রতিবেদক বিশ্বের প্রতিটি নামি ফুটবল ক্লাবের হৃৎপিন্ড আসলে সেই ক্লাবটির অ্যাকাডেমি। খুদে বয়স থেকেই ফুটবলার গড়ার প্রক্রিয়া নিজেদের অ্যাকাডেমির মাধ্যমেই শুরু করে দেয় ক্লাবটি।...

ইসরাইলে হামলার ঘটনা হস্তক্ষেপ না করতে যুক্তরাষ্ট্রকে সতর্ক করেছে ইরান

 ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগশি বুধবার ইসরাইলে ইরানের হামলার ঘটনায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে হস্তক্ষেপ না করতে সতর্ক করেছেন। তেহরান থেকে বার্তা সংস্থা এএফপি জানায়, বার্তাটি তেহরানের সুইস...

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here