Tuesday, November 5, 2024

ইসলাম পরিমিত ব্যয়ের শিক্ষা দেয়

মধ্যপন্থাই ভারসাম্যপূর্ণ পন্থা। ইসলাম মধ্যপন্থা অবলম্বনের নির্দেশ দেয়। কৃপণতা ও অপব্যয় কোনোটিই ইসলামে জায়েজ নেই। ইসলাম সবসময়ই মধ্যপন্থা অবলম্বন বা মিতব্যয়ী হতে নির্দেশ দেয়। মধ্যপন্থা শুধু ব্যয়ের ক্ষেত্রেই নয় বরং কথাবার্তা, হাঁটাচলার ক্ষেত্রেও মধ্যপন্থা অবলম্বনের নির্দেশ দিয়েছে ইসলাম। কোরআনে বর্ণিত হয়েছে, ‘পদচারণায় মধ্যবর্তিতা অবলম্বন করো এবং কণ্ঠস্বর নিচু করো।’ (সুরা লোকমান ১৯)প্রয়োজনীয় খরচ করতে নিষেধ নেই। কিন্তু অপ্রয়োজনে খরচ করা পবিত্র কোরআনে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তোমরা পানাহার করো, অপচয় করো না। নিশ্চয়ই তিনি অপচয়কারীদের ভালোবাসেন না।’ (সুরা আরাফ ৩১)

অপব্যয়কারীকে পবিত্র কোরআনে শয়তানের ভাই হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে। কোরআনে বর্ণিত হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই অপব্যয়কারীরা শয়তানের ভাই।’ (সুরা বনি ইসরাইল ২৭)

হালাল উপার্জনের সঙ্গে খরচের ভারসাম্য না থাকলে আয়েশি জিনিসের জন্য ঋণ করতে বাধ্য হতে হয়। আজকাল দেখা যায় অভাবে নয়, বরং প্রাচুর্য ও আভিজাত্যের প্রতিযোগিতায় নতুন নতুন গয়না, গাড়ি, বাড়ি, আসবাবপত্র কেনার জন্য হাতে টাকা না থাকলেও অনেক সময় ঋণ করা হয়। পকেটে টাকা না থাকলেও সুন্দর কোনো জিনিস পেলে তা ঘরে আনার লোভ সামলাতে পারেন না অনেকে। যশ-খ্যাতি অর্জনের জন্য যে ঋণ করা হলো তা পরিশোধের জন্য বেশি উপার্জন অনিবার্য হয়ে পড়ে। ফলে সে ঋণ পরিশোধ করার জন্য অতিরিক্ত উপার্জন করার প্রয়োজন হয়। অতিরিক্ত উপার্জন করতে গিয়ে অনেক সময় হালাল-হারামের তোয়াক্কা করা হয় না। এজন্য ইসলাম সবসময় অপ্রয়োজনীয় খরচের ক্ষেত্রে সাবধান হতে বলেছে।

হজরত রাসুল (সা.) উপবাস থাকলেও দুনিয়াবি কারণে ঋণ করেননি। একান্ত প্রয়োজনে ঋণ গ্রহণকে ইসলাম বৈধতা দিয়েছে। কিন্তু বিলাসিতার জন্য ঋণ করা কিছুতেই ইসলাম সম্মত নয়।

হজরত জাবির (রা.) থেকে বর্ণিত হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘কারও ঘরে একটি বিছানা তার জন্য, অন্যটি তার স্ত্রীর জন্য, তৃতীয়টি মেহমানদের জন্য এবং চতুর্থটি শয়তানের জন্য।’ (সহিহ মুসলিম)

বিলাসিতার কোনো শেষ নেই। তাই ঊর্ধ্বতন ব্যক্তির জীবনযাত্রার প্রতি তাকালে কেউই নিজের আয় দিয়ে তার ক্রমবর্ধমান চাহিদা পূরণ করতে সক্ষম হবে না। তার আয় চাহিদার তুলনায় অপর্যাপ্ত মনে হবে। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘দুনিয়াতে এমনভাবে জীবনযাপন করো, যেন তুমি বিদেশি অথবা পথিক।’ (সহিহ বোখারি)

হজরত রাসুল (সা.) অপব্যয়ের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে ছিলেন। একদা রাসুলুল্লাহ (সা.) হজরত সাদ (রা.)-কে অজুতে প্রয়োজনের অতিরিক্ত পানি ব্যয় করতে দেখে বললেন, ‘হে সাদ! অপচয় করছ কেন? হজরত সাদ (রা.) বললেন, ওজুতে কী অপচয় হয়? রাসুল (সা.) বললেন, হ্যাঁ। প্রবাহমান নদীতে বসেও যদি তুমি অতিরিক্ত পানি ব্যবহার করো তা অপচয়।’ (ইবনে মাজাহ)

অপচয় ও কৃপণতা কোনোটিই অনুমোদিত নয় ইসলামে। কোরআনে বর্ণিত হয়েছে, ‘যখন তারা ব্যয় করে তখন অপব্যয় করে না, কৃপণতাও করে না। তাদের পন্থা হয় এ দুইয়ের মধ্যবর্তী’ (সুরা ফোরকান ৬৭)। প্রাচুর্যের সময় খরচের উৎসবে মেতে না উঠে পরবর্তীকালে যেন হাত পাতার মতো পরিস্থিতির মুখোমুখি না হতে হয়, এ বিষয়েও খেয়াল রাখতে হবে। পবিত্র কোরআনের অন্যত্র বর্ণিত হয়েছে, ‘তুমি একেবারে ব্যয়কুণ্ঠ হয়ো না, আবার একেবারে মুক্তহস্তও হইয়ো না, তাহলে তুমি তিরস্কৃত ও নিঃস্ব হয়ে বসে থাকবে।’ (সুরা বনি ইসরাইল ২৯)

অন্ন, বস্ত্র, চিকিৎসা, বাসস্থান মানুষের মৌলিক অধিকার। ধনী-গরিব, নারী-পুরুষ, সাদা-কালো, ছোট-বড়, সবাই এসবের প্রয়োজন তীব্রভাবে অনুভব করলেও সামাজিক ও আর্থিক ভিন্নতার কারণে অনেকে এসবের সংস্থান করতে পারে না। কারও ভোগের পেয়ালা উপচে পড়ে আবার কারও হাঁড়ি শূন্যই থেকে যায়। কেউ অপ্রয়োজনীয় বিনোদনে খরচ করছে লাখ লাখ টাকা আর তার পাশের একজন গরিব মানুষ হয়তো টাকার অভাবে ওষুধও কিনতে পারছে না।

কোরআনে বর্ণিত হয়েছে, ‘আত্মীয়স্বজনকে তার হক দিয়ে দাও এবং অভাবগ্রস্ত ও মুসাফিরকেও। আর কিছুতেই অপব্যয় করো না। নিশ্চয়ই অপব্যয়কারীরা শয়তানের ভাই।’ (সুরা বনি ইসরাইল ২৬-২৭)

আয়াতে বর্ণিত আত্মীয়স্বজনের হক, অভাবগ্রস্তের হক এবং মুসাফিরের হক এ তিনটির উদ্দেশ্য হলো, মানুষ নিজের উপার্জন ও ধন-সম্পদ শুধু নিজের জন্যই নির্ধারিত করবে না। বরং ন্যায়সংগতভাবে ও ভারসাম্য সহকারে নিজের প্রয়োজন পূর্ণ করার পর নিজের আত্মীয়স্বজন, প্রতিবেশী ও অন্যান্য অভাবী লোকদের অধিকারও আদায় করবে।

 

spot_imgspot_img

মায়ের ঘুমপাড়ানি সুর শান্তিধারা

আমাদের জোনাকজ্বলা গ্রাম বিদ্যুৎ তখনও দেখেনি। সন্ধ্যার কাছে বিকেল নতজানু হতেই সবুজ পাহাড়েরা মিশকালো হয়ে যায়। ফলে- আমরা চালের ফুটো দিয়ে চাঁদ দেখি, আর...

মাহবুবা ফারজানা নতুন তথ্য সচিব

তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের নতুন সচিব হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন বেগম মাহবুবা ফারজানা। তিনি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) ছিলেন। তাকে সচিব পদে পদোন্নতি...

এ এস এ ফাউন্ডেশনের এডুকেশন ফেয়ার প্রতিমাসেই

উচ্চ শিক্ষার্জন, জ্ঞানগর্বের অংশ। বিশ্বব্যাপী ইহার মুক্ত পরিবেশ বিবেচিত হওয়া উচিত। বিশ্বের নাম্বার ওয়ান রাষ্ট্র, যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তির সুযোগ নিয়ে বাংলাদেশে ভর্তি মেলার আয়োজন...

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here