আমাদের জোনাকজ্বলা গ্রাম বিদ্যুৎ তখনও দেখেনি। সন্ধ্যার কাছে বিকেল নতজানু হতেই সবুজ পাহাড়েরা মিশকালো হয়ে যায়। ফলে- আমরা চালের ফুটো দিয়ে চাঁদ দেখি, আর অমাবস্যায় ঘুটঘুটে অন্ধকার। অগণন তারাদের মিছিল দেখে তখন আমরা ভাবতাম ঝোপের জুনিপোকাগুলো বুঝি আকাশে গিয়ে জ্বলছে। আমরা ধুলায় ল্যাপ্টা দিয়ে বসে তারা দেখি। আঙুলের কড়ে গুনতে গুনতে খেই হারাই, আবার গুনি, তারপর হেসে হেসে ধুলায় লুটোপুটি খাই। তখন দূর থেকে কারও গান ভেসে আসে ‘আমার হাড় কালা করলাম রে,/ ওরে আমার দেহ কালার লাইগা রে,/ অন্তর কালা করলাম রে দুরন্ত পরবাসে’।
চেনা-অচেনা গন্ধ বুঝে উঠবার আগেই সে কণ্ঠ রাতের তিল বেয়ে মেঠোপথ ধরে হাঁটতে হাঁটতে দূরে মিলিয়ে যায়। তখন তক্ষকের ডাক ছাড়া আমাদের কানে আর কিছুই পৌঁছায় না। গানের সঙ্গে সম্ভবত পরিচয় হয়েছে মায়ের ঘুমপাড়ানি গানের মাধ্যমে। আমাদের ছোট্ট ঘরে সারি সারি বোনেরা যখন ঘুমাতাম, মা গাইতেন ছোটবোনকে বুকে জড়িয়ে‘ঘুম যা রে দুধের বাছা, ঘুম যা রে তুই/ঘুমত্তুন উডিলে বাছা, বচ্চু দিয়ম মুই/বাছা, ঘুম যা রে তুই/দঅ দঅ, বাছা, দঅ দঅ’…
সময় মাঝে মধ্যে টেনে আনে স্মৃতির মিহিসুতো, বান্ডেল থেকে একটা অংশ টানলেই হুড়মুড় করে বেরিয়ে আসে সব। তখন শুধু চোখ বুজে থাকা আর অনুভবের ঝাঁপি খুলে বুঁদ হয়ে থাকা। শৈশবখানায় আমার লাল মাটির গ্রাম, ঝাঁঝালো দুপুর, বাঘমারা ফিল্ড, জাকির হোসেন প্রাথমিক বিদ্যালয়। তারপর সেই অহংকারী সহপাঠিনীর মুখ; টিফিন ছুটি। সুর করে আইসক্রিম বিক্রি করতে আসা সেই আইসক্রিমঅলা। সে সব ছুটিতে খালি পেটে তুমুল খিদেকে উপেক্ষা করে হেঁটে যেতাম উপজেলার আবাসিক এলাকায়। গ্রিল-আঁটা জানালায় প্রতিটি অহংকারী মুখে দেখতাম নিজের বিকৃত প্রতিবিম্ব। আর পিচঢালা পথে এলোমেলো হেঁটে যেতে যেতে চেনা কণ্ঠস্বরে ভরাট উচ্চারণ ‘বিজ্ঞাপন তরঙ্গ’। তারপর বিচিত্র সব গান, সে সব গানের অনুরোধের পাশে কত নাম! নিজেকে তখন মনে হয় পৃথিবীর দীনতম শিশু। যেদিন জানালার শিক ডিঙিয়ে চৌকাঠ পেরিয়ে ঘরের প্রবেশাধিকার পেয়েছি, তাদের মসলামাখা ঘ্রাণ ইন্দ্রিয় ভেদ করে পেয়েছিলো স্বর্গের চেরির স্বাদ। ‘বিজ্ঞাপন তরঙ্গ’ শুনতে শুনতে সেঁটে গিয়েছিল মগজে বিচিত্রসব সুর। প্রতি রাতে বাবার দুস্থ মুখ দেখে একটা রেডিওর স্বপ্ন দেখতে দেখতে ঘুমিয়ে পড়তাম, আমাদের নিকানো মাটির ঘরে সারি সারি শুয়ে থাকা বোনদের ভেতর। আর ঘুম ভাঙা রাতে টের পাই অশরীরী কেউ বিড়বিড় করছে আমার ভেতর সেই সুর ‘মরমিয়া তুমি চলে গেলে দরদি আমার কোথা পাব/কারে আমি এই ব্যথা জানাব’…
কিশোরী বেলায় আমাদের দুস্থ বাবা একদিন আচানক ধনী হয়ে গেলেন। রাজার ভঙিমায় হেঁটে এলেন বুনো রাস্তা দিয়ে, আর ঘরে ঢুকে আমার হাতে একটা প্যাকেট দিয়ে বললেন এটা তোর জন্য। সে জাদুর বাক্স থেকে আলাদিনের প্রদীপের মতো হঠাৎ উদয় হলো একটা রেডিও। লাল কাভারে ঢাকা, যেভাবে আমার পুতুলের জামা পরা থাকে, ঠিক তেমন। আমরা বলতাম রেডিওর জামা। ‘প্যানাসনিক’। আমার জামাঅলা রেডিও। স্কুল ছুটির পর ঘরে ফিরে কিংবা সন্ধ্যায় কানের পাশে ধরে মব ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে শুনতাম গান। আধুনিক গান, উচ্চাঙ্গ সংগীত। রাত্রিবেলা সবাই ঘুমিয়ে গেলে শুনতাম অনুরোধের আসরে ছায়াছবির গান ‘সব সখি রে পার করিতে নেব আনা আনা/তোমার বেলায় নেব সখি, তোমার কানের সোনা/সখি গো, আমি প্রেমের ঘাটের নাইয়া/তোমার বেলায় পয়সা নেব না’…
মনে মনে এমন এক নাইয়ার অপেক্ষায় থাকি, যে পারের কড়ি নেবে না, কানের সোনা চাইবে। আমার গানবেলা, পছন্দের পরিধি বেড়ে আকাশ ছুঁয়ে দেয়। ততদিনে রবিবাবুকে ভালোবেসে ফেলি ‘আমার সকল নিয়ে বসে আছি সর্বনাশের আশায়’, ‘সখী ভাবনা কাহারে বলে’, ‘আমার হিয়ার মাঝে’ অথবা ‘না চাহিলে যারে পাওয়া যায়’। নজরুলের ‘কাবেরি নদীজলে কে গো বালিকা’, ‘দেব খোঁপায় তারার ফুল’। তারপর কত সন্ধ্যা ভরে দিয়েছে আঞ্চলিক গানগুলো! মগজ যেন ধোলাই করে গেছে, আমি সুর ছেড়ে বেরোতে পারি না।
প্রেমে পড়ার বয়সে কোথাও ধানকল জেগে থাকে। গানের ভেতর আমি জেগে থাকি, আর লিরিকগুলো প্রিয় সবুজ ডায়েরিতে লিখে রাখি। তারপর চিঠির পরতে পরতে সাজানো হয়ে গেলে যথার্থ মানুষের কাছে পৌঁছে দিয়ে যাপন করি প্রতীক্ষা। বিরহে সুর, মধুরতায় সুর, বেমালুম ভুল হয়ে যাওয়ার দিনেও গাইতে থাকি
‘চান্দের সাথে রাইতের পিরিতি হইলে জোছনা ছড়ায়/মাটির সাথে পানির পিরিতি হইলে কাদাতে জড়ায়/তোমার সাথে আমার পিরিত ওগো সে কথা শুনিয়া/সৃষ্টি হইলো শূন্যের মাঝে সুন্দর একটা দুনিয়া…’।
একদিন সন্ধ্যায় খুলে গিয়েছিল রিকশার হুড। আঁধারের ঝাঁপ ফেলে রাত মেলে দিয়েছিল অবিচ্ছিন্ন আড়াল। কারও করতলে মেখে দিয়েছি আয়ু, আমি জীবন আঁকি ইচ্ছের তুলিতে। ওই চাঁদ জানালায় ছড়িয়ে দিচ্ছে আহ্বান। আমাদের অভিমানগুলো কংক্রিটের ভাঁজে ভাঁজে মিশে যায়। তখনো মধ্যরাতে চুলখোলা আঁধারে কেবল ছড়িয়ে থাকে সুর… আমরা ছিটকে পড়ি পরস্পর কৌণিক দূরত্বে। তারপর ‘আসা-যাওয়ার পথের ধারে গান গেয়ে মোর কেটেছে দিন…’
রামু বাইপাস ক্রস করলেই রাবারবণ, সবাই তাই-ই বলে। এই গাছগুলোকে শেখা হয়নি এখনো। সবুজ লিকলিকে শরীর, মাথার ওপরের একঝাঁক লাল লাল পাতা। আমি তাদের নাম রাখি মনে মনে ‘আগুনপাতা’। এই নাম সবাইকে জানতে হবে তা নয়, আমি নাম রাখি শুধু নিজেকে জানানোর জন্য, আর সে নামে আমিই ডাকি। তেমন নাম অনেক কিছুরই রাখা হয়, মানুষ, পাখি, গাছ, আরও আরও যত সব, যাদের নাম জানি না। নিজেকে নিজে স্বাধীনতা দিয়ে বসি নামকরণের।
সেই আগুনপাতার কাছাকাছি আসলে আমি বুঝি আমাকে কতদূর যেতে হবে আরও। আগুনপাতার কাছে আসলে বুঝে নিই ওই তো এসে গেছি, সামান্যই বাকি আছে পথ। আমি সতর্ক হই পাতার সংকেতে। অথচ তাকে পাঠ করা হয়নি, যতটা বৃষ্টিকে, রোদকে করেছি। এই পাতা সংকেত নিয়ে বেঁচে থাকে আমার জন্য, তার জন্য এবং তাদের জন্য। সে; ‘সকল হৃদয় দিয়ে ভালোবেসেছি যারে…’ । আমি ও তুমি কি কখনো কোন গাছের জন্য বাঁচি! আমার কাছে আসতে হলে আগুনপাতার সংকেত নিয়ে তোমাকে আসতে হবে। তাদের দেখে বুঝে নিতে হবে সামনেই ফটক, ব্যাগ গুছিয়ে নামা। তোমার আর আমার দূরত্বের সমঝোতা এই আগুনপাতারাই না হয় মেলে রাখুক! ‘আজি ঝড়ের রাতে তোমার অভিসার, পরানসখা বন্ধু হে আমার…’। বাবা মাঝে মাঝে ক্যাসেট প্লেয়ার আনতেন বাড়িতে, ভাড়া করে। ব্যাটারি দিয়ে সেটা চালাতে হতো। ফিতাওলা ক্যাসেটগুলো ভেতরে দিয়ে চালিয়ে দিলেই গান বাজত। যে কদিন ভাড়ায় চালিত ক্যাসেট প্লেয়ার আমাদের বাড়িতে থাকত যেন সে ক’দিন আমাদের অপার আনন্দ। হরেক রকম গান। বাবা শুনতেন আঞ্চলিক গান, দাদি জারি শুনতেন। মা ফাতেমা, হযরত আলী, বিবি কুলসুমার জারি। ক্যাসেটের ভেতর থেকে সিরাজ বয়াতি আর্দ্র কণ্ঠে টান মারে
‘দয়াল নবীজি আমার,/ এ সংসারে গরিব রে কেউ ভালোবাসে না/
সোনার মদিনা/এ সংসারে গরিব হইলে কেউ ভালোবাসে না/
গরিব ছিল আমার দ্বীনের নবী,/ আর আছিল ফাতেমা বিবি/
আছিল ভবে ইমাম দুইজনা’/… কত দুপুর চলে যায়! বিকেল ফিকে হয়ে আসে। মামার বাড়িতে কেমন সন্ধ্যার আকুতি ছায়ার মতো ছড়িয়ে যায়। খোদার আরশ ছেদ করে সে আকুতি গানের তানে বুকের ভেতর তোলপাড় করে রেডিওতে মাগরিবের আজান হয়। আজানের পর কে যেন খালি গলায় গেয়ে ওঠেন ‘এই সুন্দর ফুল, সুন্দর ফল, মিঠা নদীর পানি/খোদা, তোমার মেহেরবানি’…
তারপর আরও বহুদিন পর জানি, এই গজল লিখেছেন আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম। স্কুলের বার্ষিক প্রতিযোগিতায় এই গজল গেয়ে আমি পুরস্কারও পাই। জানি, ‘মসজিদেরই পাশে আমায় কবর দিয়ো ভাই, যেন গোরে থেকে মোয়াজ্জিনের আজান শুনতে পাই’… এটাও তার লেখা। আমরা একটু একটু করে শিখি, পাতার কাছে, পাখির কাছে, ফুলের কাছে। আর গ্রামের সরল মাটিগন্ধি মানুষগুলোর কাছে। ঠিক ভরদুপুরের রোদও যেখানে ক্লান্ত হয়ে নেতিয়ে পড়ে, সেখানে দুপুরের তেজকে হার মানিয়ে দেয় মালম মামা। আমরা তাকে কখনো মামা ডাকিনি, ডাকনামেই তার পরিচয়। রাস্তার ধার দিয়ে হেঁটে স্কুল ফেরত বালক-বালিকারা মালমের কণ্ঠের সঙ্গে পরিচিত। মিহি সুরেলা পাখির মতো মসৃণ তার স্বর। হাসি হাসি মুখ। দূর বিলে কাদামাখা আঠালো জমিতে রোয়া রোপণ করতে করতে মালম গায় ‘ওরে নীল ধরিয়া, আমায় দে রে দে ছাড়িয়া’… অথবা ‘আমার কাঙ্খের কলসি/ ওরে গিয়াছে ভাসি/ মাঝি রে নৌকার ঢেউ লাগিয়া রে’… আমাদের গানের সাথে, বাতাস ও ধুলার সাথে মালম মামা মিশে যায়। তার গানে পুষ্ট হয় ধানের চারা, সে সবুজ রোয়া গানের সরল দুপুর পেরিয়ে, অলিগলি পেরিয়ে একদিন সোনার মুকুট পরে মাথায় ও ঘাড়ে চেপে উঠানের রোদে আদর পায়। বহতা জীবন গানের আলপথ ধরে নিশানা খুঁজে নেয়।
কোনো কোনো সন্ধ্যায় যখন কিছুই করার থাকে না, আমরা বসি চুপটি করে, বড়দের গা ঘেঁষে। মাথার ওপরে, কাঁঠাল গাছের পাতার ফাঁক দিয়ে চাঁদ উঁকি দেয়। চাচি, জেঠিরা সুখ-দুঃখের আলাপে মগ্ন। আমরা যারা কিশোরীর শরীর ছাপিয়ে মনেপ্রাণে নারী হয়ে উঠছিলাম, আমরা চাচি-জেঠিদের আটপৌরে মনের নাগাল পাচ্ছিলাম যেন। ছুঁতে পাচ্ছিলাম তাদের জীর্ণ হতে থাকা বারোমাসি মনকে। আঞ্চলিক গানের অনুষ্ঠান শুরু হলে চাচি কী তৎপর হয়ে শুনতেন! গানে নিমগ্ন হয়ে যেতেন। আমার চাচির গানের গলা ছিল বেশ! চাচি হঠাৎ গেয়ে উঠতেন অন্ধকারের মুখ আড়াল করে
‘আমায় এত রাতে কেনে ডাক দিলি, প্রাণ কোকিলারে/আমায় এত রাতে কেনে ডাক দিলি’… যখন গাইতেন দরদভরা কণ্ঠে কোন অচিন বেদনা ভেসে ভেসে বাতাসে মিলিয়ে যেত! সে গানই ছিল চাচির কান্না। বড় হয়ে বুঝেছি। চাচির গাল বেয়ে টুপটাপ ঝরে পড়ে নুনমাখা গোপন পবিত্র জল, সে আর সংবরণ করে না। ঝরতে দেয়। সে ঝরা অশ্রুর সঙ্গে ঝরে পড়ে অনন্ত আকুলতা। আমরাও ভেতর ভেতর গলে যাই। চাঁদের দিকে। একদিন সে চাঁদের গানই আমার প্রেমের কাছে নশ^র হয়ে ওঠে। তখন ঊনিশে পা। প্রেমে পড়ি কি পড়ি না। তার আগে যে কৈশোরের প্রেমিক কাঁচামনে হঠাৎ পাতার বাঁশি বাজিয়ে এলো সেও শুনিয়েছিল এক মায়ার গান। স্পর্শহীন মনে দারুণ স্পর্শ নিয়ে এসেছিল। বাইরে বিকেল নিভু নিভু। লাজুক কিশোরী প্রেমিকার পাশে শুয়ে সে গেয়েছিল“শ্যামলাবরণ কন্যারে, কাইড়া নিয়া মনটারে/ বুকে প্রেমের আগুন ধরাইছে”…
গানে গানে এটুকু বাণীই শুধু না-বলা প্রেমের কথা প্রকাশ করে গেল। তারপর তুমুল প্রেমে ভেসে যেতে যেতে যখন সমস্ত ডুবে যায়, বিরহে নিমজ্জিত হয়ে আবার ভেসে ওঠার চেষ্টা চলে তখন আমাদের স্কুলের হিন্দু হেডস্যারের কথা মনে পড়ে। এক দুপুরে টিফিন ছুটিতে তিনি চেয়ারে বসে আছেন টিচার্স রুমে। আমরা কয়েকজন শিশু-কিশোর তাকে ঘিরে দাঁড়িয়ে আছি। পাশে প্রতিমা দিদিমণি। পাটকরা সিঁথিতে লালজবার মতো সিঁদুর। স্যার একটু গলা ঝেড়ে নিচু স্বরে গেয়েছিলেন, প্রতিমা দিদিমণির অনুরোধে আমাদের উৎসাহী চোখের দিকে তাকিয়ে‘শাওন রাতে যদি স্মরণে আসে মোরে/বাহিরে ঝড় বহে নয়নে বাড়ি ঝরে’… প্রেম ভেঙে যাওয়ার পর শুধু মনে হতো কোনো বৃষ্টির রাতে সে আমাকে ভেবে এই গানটা শুনবে। যদিও সে ছিল কচি মনের অবুঝ কল্পনা। বিষন্ন সন্ধ্যায় লাল হয় আসা আকাশের দিকে তাকিয়ে গানের কথাগুলো বারবার আওড়াতাম‘ভুলিও স্মৃতি মম, নিশীথ-স্বপন সম/আঁচলের গাঁথা মালা ফেলিও পথ ‘পরে।।/ঝুরিবে পূবালি বায় গহন দূর-বনে,/ রহিবে চাহি’ তুমি একেলা বাতায়নে।’… দূর কল্পনায় জীবন বয়ে যায়। যা কিছু হারিয়ে ফেলি তা আর ফেরত আসে না। শুকনো পাতার মতো সমস্ত মর্মর নিয়ে চূর্ণ হয়ে মিশে যায় প্রেম, বিরহ ও সংকল্পগুলো। আমরা এভাবেই সবুজ হারাতে হারাতে, কোমলতা হারাতে হারাতে কর্কশ করে তুলি হৃদয়কে। সেখানে যতটা আমি আছে, তার বেশি ভূমিকা রাখে ‘তুমি’। আর তখনই হয়তো লতা মঙ্গেশকরের গান ভেসে আসে‘আষাঢ় শ্রাবণ মানে না তো মন/ঝরো ঝরো ঝরো ঝরো ঝরেছে/তোমাকে আমার মনে পড়েছে’…