Tuesday, January 14, 2025

ছবিটা তুলে রাখুন ঐতিহাসিক হয়ে থাকবে : ড. ইউনূস

গ্রামীণ টেলিকমের শ্রমিক-কর্মচারীদের কল্যাণ তহবিলের ২৫ কোটি টাকা আত্মসাৎ এবং পাচারের অভিযোগে করা মামলায় জামিন পেয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান ও নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস। গতকাল রবিবার বেলা আড়াইটার দিকে ঢাকা মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালতে হাজির হয়ে আইনজীবীদের মাধ্যমে তিনি আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন করেন। জামিন পেয়ে আদালত প্রাঙ্গণে উপস্থিত সাংবাদিকদের উদ্দেশে ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘আজকের এই ছবিটা আপনারা তুলে রাখুন। দুর্নীতি দমন কমিশন ও বটতলার এটি একটি ঐতিহাসিক ছবি হয়ে থাকবে।’ দুদকের বিচারের কাঠগড়ায় একজন নোবেল বিজয়ীকে দাঁড়াতে হলো এটা রেকর্ডেড বলে উল্লেখ করেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেন, ‘এটা যুগ যুগ ধরে ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে থাকবে। এটা একটা ঐতিহাসিক ঘটনা যেখানে একজন নোবেল বিজয়ীর বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ, জালিয়াতির অভিযোগ, অর্থ পাচারের অভিযোগ এনেছে। আমি একা নই, আরও সাতজন যারা সারাজীবন কঠোর পরিশ্রম করেছেন গরিব মানুষের জন্য। তারা চাকরি করতে এখানে আসেননি, তারা জীবনদানের জন্য এখানে এসেছেন। তারাও অর্থ আত্মসাৎ, মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগে অভিযুক্ত। এটা গুরুত্বপূর্ণ ছবি হবে।’ ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘এটা গুরুত্বপূর্ণ এজন্য যে, আইন মানুষের শুভকামনা করে রচনা করা হয়। আইন মানুষের মনে স্বস্তি আনে, শান্তি আনে। আইন মানুষের মনে আশঙ্কাও জাগায়, ভয়ংকর শঙ্কা জাগায়। আইনটাকে আমরা কোনদিকে নিয়ে যাব, সেটা সমাজের ইচ্ছা। আপনারা ঠিক করেন, দুর্নীতি দমন কমিশন যে আজ একটা বিচারে বসল, এ বিচারটা সঠিক কারণে হয়েছে কি না, সঠিকভাবে হয়েছে কি না।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের ছেলেমেয়েরা এগুলো স্কুলে পড়বে। যখন নোবেল পুরস্কারের কথা হবে, তখন বলা হবে ওনার বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের দায়ে, জালিয়াতির দায়ে…। তারা কনফিউজড হয়ে যাবে যে, আসলটা কী। তারা বলবে, এটা কি মুখোশ, আসল মানুষটা কে? সে আবার একা না, তার সাঙ্গপাঙ্গও আছে।’ গতকাল শুনানি নিয়ে ড. ইউনূসসহ সাতজনের জামিন মঞ্জুর করেন ঢাকা মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালতের বিচারক মোহাম্মদ আস সামছ জগলুল হোসেন। পরবর্তী শুনানির জন্য আগামী ২ এপ্রিল দিন ধার্য করেছে আদালত।এর আগে শ্রম আইনের মামলায় সাজা পাওয়া ড. ইউনূসসহ চারজন তাদের জামিনের মেয়াদ বাড়াতে আবেদন করেন। আদালত তাদের আবেদন মঞ্জুর করে।এদিন অধ্যাপক ইউনূসের মামলার বিচারিক কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করতে বেশ কয়েকটি দূতাবাসের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। তাদের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, নেদারল্যান্ডস, ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধিরা কাকরাইলের শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালে আসেন। আদালতে উপস্থিত থেকে তাদের প্রায় পৌনে এক ঘণ্টার শুনানি পর্যবেক্ষণ করতে দেখা যায়। তবে গণমাধ্যমের সঙ্গে কোনো কথা বলেননি তারা।এ ছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আসিফ নজরুল, মানবাধিকারকর্মী শারমিন মুরশিদকেও আদালতে দেখা যায়।অর্থ পাচারের মামলায় ড. ইউনূস ছাড়া অন্য সাত অভিযুক্তরা হলেন গ্রামীণ টেলিকমের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. নাজমুল ইসলাম, পরিচালক মো. আশরাফুল হাসান, নাজনীন সুলতানা, পারভীন মাহমুদ, মো. শাহজাহান, নূরজাহান বেগম ও এসএম হাজ্জাতুল ইসলাম লতিফী।আদালতে ড. ইউনূসের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন ব্যারিস্টার আব্দুল্লাহ আল মামুন। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল।আব্দুল্লাহ আল মামুন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দুদকের মামলায় জামিন পেয়েছেন তিনি (ড. ইউনূস)। এরপরের তারিখেও (২ এপ্রিল) এ মামলায় তাকে হাজির হতে হবে।’গ্রামীণ টেলিকমের শ্রমিক-কর্মচারীদের কল্যাণ তহবিলের ২৫ কোটি ২২ লাখ ৬ হাজার ৭৮০ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে গত বছর ৩০ মে ড. ইউনূসসহ প্রতিষ্ঠানটির ১২ জনের নামে মামলা করে দুদক। গত ২৯ জানুয়ারি ড. ইউনূসসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে দুদক।অর্থ আত্মসাৎ ও পাচারের মামলায় আদালতে হাজির হওয়ার আগে গতকাল সকাল সাড়ে ১০টার দিকে রাজধানীর কাকরাইলে শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালে আসেন ড. ইউনূসহ চারজন। তারা জামিনের মেয়াদ বাড়াতে আবেদন করেন।পৌনে এক ঘণ্টাব্যাপী শুনানি হয় এ ট্রাইব্যুনালে। অধ্যাপক ইউনূসসহ চারজনই এজলাসে একই বেঞ্চে বসে শুনানি শোনেন। তাদের পেছনের দুই সারিতে বিদেশি কূটনীতিকরা বসে মামলার কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করেন।শুনানি শেষে আবেদন মঞ্জুর করে আদেশ দেন ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান (ভারপ্রাপ্ত) এমএ আউয়াল। জামিনে থাকা অন্য তিনজন হলেন গ্রামীণ টেলিকমের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আশরাফুল হাসান, দুই পরিচালক নুরজাহান বেগম ও মো. শাহজাহান। আদালত এ মামলায় পরবর্তী শুনানির জন্য আগামী ১৬ এপ্রিল ধার্য করেছে।আদালতে ড. ইউনূসের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী আব্দুল্লাহ আল মামুন। মামলার বাদী কল-কারাখানা প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান।গত ১ জানুয়ারি শ্রম আইন লঙ্ঘনের মামলায় ড. ইউনূসসহ চারজনকে ৬ মাস করে কারাদণ্ড ও ৩০ হাজার টাকা করে অর্থদণ্ডের আদেশ দেয় ঢাকার তৃতীয় শ্রম আদালত। পরে ২৮ জানুয়ারি এ রায়ের বিরুদ্ধে শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালে আপিল করে ওইদিন জামিন নেন তিনি।ট্রাইব্যুনাল থেকে বেরিয়ে উপস্থিত সাংবাদিকদের উদ্দেশে ড. ইউনূস বলেন, ‘আমি আশা করব, দেশের বিচারব্যবস্থা থেকে ন্যায়বিচার পাব। এটাই তো একজন নাগরিকের ইচ্ছা। আমি এটাই আশা করছি।’ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে ১৮টি মামলা চলছে। এসব মামলা স্থগিত ও ‘বিচারিক হয়রানি’ বন্ধ চেয়ে আন্তর্জাতিক মহল আহ্বান জানিয়ে আসছিল। অযথা মামলা দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে কি না তা দেখতে আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের বাংলাদেশে আসার আহ্বানও জানিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ আমন্ত্রণ গ্রহণ করে বাংলাদেশে আসতে নোবেল বিজয়ীসহ ২৪২ জন আন্তর্জাতিক ব্যক্তিত্ব খোলা চিঠিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন। পরে ড. ইউনূসের আইনজীবীরা বলেছিলেন, তাদের আসার ব্যাপারটা সরকারের অনুমতির ওপর নির্ভর করে।

spot_imgspot_img

মায়ের ঘুমপাড়ানি সুর শান্তিধারা

আমাদের জোনাকজ্বলা গ্রাম বিদ্যুৎ তখনও দেখেনি। সন্ধ্যার কাছে বিকেল নতজানু হতেই সবুজ পাহাড়েরা মিশকালো হয়ে যায়। ফলে- আমরা চালের ফুটো দিয়ে চাঁদ দেখি, আর...

মাহবুবা ফারজানা নতুন তথ্য সচিব

তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের নতুন সচিব হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন বেগম মাহবুবা ফারজানা। তিনি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) ছিলেন। তাকে সচিব পদে পদোন্নতি...

এ এস এ ফাউন্ডেশনের এডুকেশন ফেয়ার প্রতিমাসেই

উচ্চ শিক্ষার্জন, জ্ঞানগর্বের অংশ। বিশ্বব্যাপী ইহার মুক্ত পরিবেশ বিবেচিত হওয়া উচিত। বিশ্বের নাম্বার ওয়ান রাষ্ট্র, যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তির সুযোগ নিয়ে বাংলাদেশে ভর্তি মেলার আয়োজন...

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here