অর্থভুবন ডেস্ক
১৩ আগস্ট ২০২৩ সৌদি আরবের মক্কায়-অনুষ্ঠিত হয়ে গেল ‘সম্পর্ক ও সংহতি’ শীর্ষক আন্তর্জাতিক ইসলামি কনফারেন্স। সৌদি ধর্ম মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে আয়োজিত এ কনফারেন্সে বিশ্বের ৮৫টি দেশের ১৫০ জন ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব অংশগ্রহণ করেন।
এতে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেছেন, দেশের সর্বজনশ্রদ্ধেয় আলেম, আল হাইয়াতুল উলিয়া লিল জামিয়াতিল কওমিয়ার সম্মানিত চেয়ারম্যান আল্লামা মাহমুদুল হাসান। তিনি মাদ্রাসা শিক্ষার মানোন্নয়ন ও আন্তর্জাতিকীকরণ এবং ইসলাম ও মুসলিম উম্মাহর স্বার্থসংশ্লিষ্ট বেশকিছু বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য প্রদান করেছেন। তার বক্তব্যের চুম্বকাংশ তুলে ধরেছেন- অর্থভুবন প্রতিবেদক
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
‘পারস্পরিক সম্পর্ক ও সংহতি’ শিরোনামটি খুবই গুরুত্বের দাবি রাখে। বর্তমান বিশ্বে যারাই মুসলিম উম্মাহর ধর্মীয় বিষয় নিয়ে কাজ করছেন, তাদের জন্য এ শিরোনাম থেকে শিক্ষণীয় বহু কিছু রয়েছে। শিরোনামটি সাম্প্রতিক সময়ে মুসলিম উম্মাহর দেহের জন্য প্রাণ সমতুল্য।
পবিত্র কুরআনের বিভিন্ন আয়াতে আজকের বিষয়বস্তুর প্রতি আলোকপাত রয়েছে, আল্লাহ বলেন, ‘মুমিনরা পরস্পর ভাই ভাই। তোমরা দুই ভায়ের মধ্যে মীমাংসা করে দাও এবং আল্লাহকে ভয় করতে থাক, যাতে তোমাদের প্রতি রহম করা হয়’ (সূরা হুজুরাত : ১০)।
আল্লাহতায়ালা আরও বলছেন, ‘আর তোমরা সবাই মিলে আল্লাহর রশি আঁকড়ে ধর এবং বিচ্ছিন্ন হয়ো না’ (সূরা আল-ইমরান : ১০৩)। আরও ইরশাদ হচ্ছে, ‘আর তোমরা সৎকর্মে ও খোদাভীরুতায় পরস্পরকে সাহায্য কর, পাপ কাজে ও জুলুমে একে অপরের সাহায্য কর না’ (সূরা মায়িদা : ২)।
রাসূলে কারিম (সা.) এ বিষয়টির প্রতি আমাদের নির্দেশনা দিয়েছেন, তিনি ইরশাদ করেন, মুমিনদের দৃষ্টান্ত পারস্পরিক ভালোবাসা, স্নেহ-মমতা ও যোগাযোগ রক্ষায় একটি দেহের মতো। যখনই তার একটি অঙ্গ আক্রান্ত হয়, অন্য সব অঙ্গ (সমবেদনায়) জরাক্রান্ত হয়ে নিশি জাগরণ করে (বুখারি ও মুসলিম)।
পারস্পরিক সম্পর্ক ও সংহতি রক্ষার কাজটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ গুরুদায়িত্ব কাঙ্ক্ষিতভাবে আদায় করতে হলে ধর্ম ও রাষ্ট্রের মাঝে সমন্বয় করতে হবে। ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব ও রাষ্ট্রের কর্ণধারদের মধ্যকার ব্যবধান ঘোচাতে হবে। অন্ধকার ঘরকে আলোকিত করতে যেমন বিদ্যুতের দুটি শক্তির সমন্বয় প্রয়োজন, তেমনি বিশ্বের উন্নয়ন-অগ্রগতি বাস্তবায়নে ধর্মীয় শ্রেণি ও শাসক শ্রেণির পারস্পরিক যোগাযোগ ও সংহতির প্রয়োজনটাও অনস্বীকার্য।
আজকের এ আন্তর্জাতিক সম্মেলনের মৌলিক লক্ষ্য বাস্তবায়নে আমার কিছু প্রস্তাবনা নিম্নে উপস্থাপন করছি :
ক. বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে-দেশ ও জাতির প্রতি আলেম-ওলামার যে আত্মত্যাগ ও কুরবানি রয়েছে, তার মূল্যায়নের লক্ষ্যে আরবি ও ইংরেজি ভাষায় বিশ্বকোষ সংকলন করা।
খ. চার মাজহাবের ইমামদের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের ব্যাপারে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে সৌদি সরকারের স্বচ্ছ বার্তা প্রচার করা। প্রাচ্যবিদ ও তাদের এজেন্টদের পক্ষ থেকে ইমামদের ব্যাপারে যেসব গুজব প্রচার করা হয় ও অপবাদ আরোপ করা হয়; চূড়ান্তভাবে সেগুলো খণ্ডন করা। শরিয়তের মূলনীতি থেকে আহরিত নির্ভরযোগ্য মাজহাবের বিপক্ষে আরোপিত সব তর্কবিতর্ক নিরসনের লক্ষ্যে বাস্তবভিত্তিক পদক্ষেপ গ্রহণ করা।
কারণ, অনুসরণীয় ইমামদের অসম্মান করার প্রবণতা ক্যানসারের মতো মুসলিম উম্মাহর শরীরকে গ্রাস করে নিয়েছে এবং রাষ্ট্রের সাধারণ জনগণ থেকে শুরু করে আলেম-ওলামা ও সরকারি পর্যায়ে পারস্পরিক যোগাযোগের ভিত্তিতে পূর্ণতা বিধানের সম্ভাব্য সব পরিবেশ কলুষিত করছে।
গ. টেলিভিশনের প্রোগ্রাম ও মিডিয়ার এমন সব টকশো বন্ধ করার ব্যবস্থা গ্রহণ করা, যা সমাজে শাখাগত বিরোধ, নাস্তিকতা ও ধর্মহীনতার প্রচার-প্রসার ঘটায়।
ঘ. সন্ত্রাসবাদ ও উগ্রবাদ প্রতিরোধে মুসলিম রাষ্ট্রগুলোতে ‘বিশ্ব শান্তি’ নামে স্বতন্ত্র্র পরিষদ গঠন করা।
ঙ. সৌদিতে প্রতি বছর ‘ঐক্য ও সংহতি’ শিরোনামে আন্তর্র্র্জাতিক কনফারেন্স আয়োজন করা এবং বিশ্বের অন্যান্য মুসলিম রাষ্ট্রগুলোতেও স্থানীয় সম্মেলনের ব্যবস্থা করা।
চ. এ উম্মাহর অন্যতম বৈশিষ্ট্য মধ্যমপন্থা। এ চেতনা বাস্তবায়নের লক্ষে সব মুসলিম রাষ্ট্রে সেমিনারের ব্যবস্থা করা।
ছ. বাংলাদেশে কওমি মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের জন্য সৌদি সরকারের অর্র্থায়নে আল-হাইয়াতুল উলয়া লিল-জামিয়াতিল কওমিয়ার অধীনে একটি প্রাইভেট ইসলামি ভার্সিটি প্রতিষ্ঠা করা।
জ. পরিশেষে আল-হাইয়াতুল উলয়া বাংলাদেশের চেয়ারম্যান হিসাবে বিশেষভাবে এ প্রস্তাবনা পেশ করছি যে, বাংলাদেশ সরকার দাওরায়ে হাদিসের সনদকে মাস্টার্স সমমান স্বীকৃতি দিয়েছে। অতএব, মাননীয় ধর্মমন্ত্রী সমীপে আবেদন যে, সৌদির ভার্সিটিগুলোতে বাংলাদেশ কওমি মাদ্রাসার সনদ মূল্যায়ন করতঃ কওমি ছাত্রদের ভর্তির সুযোগদানে যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন।