► মোবাইলের কল্যাণে আপাতত অসম্ভবই হয়ে উঠেছে সম্ভব ► ফোনবিহীন জীবন এখন মনে হয় বন্ধ্যা, অস্থির ও খাঁচায় বন্দি
নিজস্ব প্রতিবেদক
শুধু কথা বলাই নয়, মোবাইল ফোন মানুষের জীবন বদলের হাতিয়ারে পরিণত হয়েছে। এর শুধু নেতিবাচক ব্যবহারই নয়, বরং এটি কোনো কোনো মানুষের বেঁচে থাকার অবলম্বন হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিকাশ, রকেটসহ নানা ব্যাংকিং কার্যক্রমও এখন মোবাইলনির্ভর। বাণিজ্যের অনেকটা অংশই এখন মোবাইলের মাধ্যমে সম্পন্ন হচ্ছে।
এখন ই-কমার্স আর বলা হয় না, বলা হয় এম কমার্স। সুতরাং মোবাইল জীবনকে সহজও করেছে। তা ছাড়া স্বল্পশিক্ষিত কিংবা প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নেই এমন মানুষেরা মোবাইল ব্যবহার করে শিখছে অনেক কিছুই। যেমন—বর্ণমালা, নতুন ভাষা ও মুখে কথা বলে মোবাইল টাইপ করা (ভয়েস টু টেক্সট) ইত্যাদি।
তাদের কাছে মোবাইল শুধু জীবনের একটি অনুষঙ্গই নয়, মোবাইল তাদের কাছে এমন একটি প্রযুক্তি, যা মানুষের জীবনের মৌলিক সত্তার জাগরণ ঘটায়। বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) এক গবেষণায় এসব বিষয় উঠে এসেছে। এর ফলাফল নিয়ে আয়োজিত সেমিনারে এসব তথ্য উপস্থাপন করা হয়। গতকাল রবিবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিআইডিএস সম্মেলনকক্ষে ‘মোবাইল ফোন : স্কিল, কমিউনিকেশন অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েশন’ শীর্ষক এই সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়।
এতে সভাপতিত্ব করেন সংস্থাটির মহাপরিচালক ড. বিনায়ক সেন। গবেষণাপত্র উপস্থাপন করেন বিআইডিএসের রিসার্স ফেলো মোহাম্মদ গোলাম নবী মজুমদার। আলোচনায় অংশ নেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক খোরশেদ আলম, ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি আব্দুস সাত্তার মণ্ডল, আইসিটি উদ্যোক্তা সৈয়দ আলমাস কবীর প্রমুখ।
গবেষণাপত্রে গোলাম নবী মজুমদার বলেন, ‘মোবাইল নামক এই ডিজিটাল মেশিন ব্যবহার করার মধ্য দিয়ে মানুষ আসলে নিজেকেই বারবার নতুন করে আবিষ্কার করে। মোবাইলের কল্যাণে আপাতত অসম্ভবই হয়ে উঠেছে সম্ভব।
ফোনবিহীন জীবন এখন মনে হয় বন্ধ্যা, অস্থির ও খাঁচায় বন্দি। অন্যদিকে এই ছোট ডিজিটাল মেশিনের কারণে মানুষ গড়ে তোলে বিভিন্ন সামাজিক সম্পর্ক। এই মোবাইলের মাধ্যমে তরুণরা ধীরে ধীরে তাদের নিজেদেরই নতুন করে ভাবতে ও চিনতে শুরু করে। এই অর্থে প্রযুক্তি মানুষের সক্ষমতাই শুধু বাড়ায় না, মানুষের মানবিক সত্তা ও সামাজিকতারও নিয়ামক হয়ে উঠেছে।’
সেমিনারে জানানো হয়, দেশের পিছিয়ে পড়া তরুণদের মধ্যে (যাদের বয়স ১৫ থেকে ৩৫ বছর ও যাদের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নেই বা নামমাত্র) মোবাইল ফোনের নিত্যদিনের ব্যবহার নিয়ে এই গবেষণা পরিচালনা করা হয়। সারা দেশের আট বিভাগের ২৪০ জনের কাছ থেকে গুণগত তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। এর মধ্যে ১৩০ জন নারী। প্রথমে ইন্টারভিউ রেকর্ড করা হয়েছে, তারপর তা ট্রান্সক্রিপ্ট করে ইংরেজিতে অনুবাদ করা হয়। একজন মোবাইল ব্যবহারকারীর গল্প বিস্তারিত জানার জন্য একাধিকবার ফলো-আপ ইন্টারভিউ নেওয়া হয়েছে।
বিনায়ক সেন বলেন, ‘মোবাইল ফোনের অপব্যবহার নিয়ে অনেক গবেষণা আছে। কিন্তু এর যে বিশাল ইতিবাচক প্রভাব মানবজীবনে আছে, সেটি নিয়ে খুব বেশি গবেষণা হয়নি। এই গবেষণায় দেখা গেছে, কিভাবে একজন সাধারণ মানুষও মোবাইল ফোন ইতিবাচকভাবে ব্যবহার করে। এই গবেষণা ধরে আগামী দিনে আরো বিস্তৃত গবেষণা করা দরকার।’