প্রকাশ : ২১ আগস্ট ২০২৩, ০৯:৫০
দীর্ঘদিনের পরিশ্রম আর একাগ্রতার ফলস্বরূপ সৃষ্টিকর্তা স্বপ্ন পূরণ করেছেন। তাই অনুভূতিটা ঐশ্বরিক। সিভিল সার্ভিসে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়ে জনগণের সেবা করার সুযোগটুকু পেতে চলেছি। সেই সঙ্গে নিজের দক্ষতা বৃদ্ধি করার সুযোগও আসবে। এসব কাজে লাগিয়ে যদি দেশমাতৃকার সেবায় ভালো কিছু করে যেতে পারি, তবেই সত্যিকারের ভালো অনুভূতি হবে।
স্বপ্ন দেখার শুরুর পথচলা
বিসিএসের স্বপ্ন কোনো দিনই ছিল না। কুয়েট থেকে পাস করে ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকরি শুরু করি। সেখানে ভালোই করছিলাম। সবকিছু বদলে যায় করোনা শুরু হলে। গ্রামে ফিরে আসি ২০২০ সালের মার্চের দিকে। তখন ক্যারিয়ারের চিন্তায় এক প্রকার হতাশায় পড়ে যাই। মাথায় অনেক ঋণের বোঝা, অর্থাভাব, পরিচয়-সংকট; সব মিলিয়ে কোনো দিশা পাচ্ছিলাম না। ২০২০ সালের অক্টোবরে এসে মনস্থির করি, এভাবে আর নয়, আমাকে ঘুরে দাঁড়াতে হবে। তখন থেকে বিসিএসের স্বপ্ন দেখা এবং স্বপ্ন বাস্তবায়নের পথে কঠোর পরিশ্রমের শুরু।
যেভাবে প্রস্তুতি নিয়েছি
অন্য সবার মতো শুরুটা আমার জন্য চ্যালেঞ্জিং ছিল না। আমাদের পাকুন্দিয়া উপজেলার পাবলিক লাইব্রেরিতে কিছু চাকরিপ্রত্যাশী ভাই-বোনের সঙ্গে পড়াশোনা শুরু করি। আমার স্মরণশক্তি ভালো, কিছু পড়লে মনে থাকে। তাই যা পড়তাম, মনে থাকত কিংবা মনে রাখার চেষ্টা করতাম। ফলে অল্প দিনেই প্রস্তুতি গুছিয়ে নিতে পেরেছিলাম। টিউশন করানোর অভ্যাস ছিল বলে ইংরেজি, গণিত, বিজ্ঞানে তেমন দুর্বলতা ছিল না। আর ছোটবেলায় পরিবার এবং স্কুল থেকে যে শক্ত ভিত আমার ছিল, ওটাও খুব কাজে দিয়েছে। প্রিলি পাস করতে আমার কোনো বেগ পেতে হয়নি। তবে লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতিতে আমাকে পরিশ্রম করতে হয়েছে প্রচুর। ইংরেজি ভার্সনে পরীক্ষা দিয়েছি বলে সতর্কতার সঙ্গে ভাষা ও ব্যাকরণের প্রয়োগ নিয়ে কাজ করতে হয়েছে। এতে অন্যান্য বিষয়ে উপকারও হয়েছে। গাইডনির্ভর প্রস্তুতি না নিয়ে মূল বই/রেফারেন্স বই প্রচুর পড়েছি। পত্র-পত্রিকা রোজ পড়তাম ২/৩টি করে। আর প্রচুর লিখতাম।
নিজের লেখা নিজেই যাচাই করতাম। একটু ভুল হলেও নিজেকে ছাড় দিতাম না। এভাবে প্রতিনিয়ত লেখার মান বেড়েছে। লিখিত পরীক্ষা একদম মনের মতো দিতে পেরেছি বলে ভাইভায় ভালো করার তেমন চাপ ছিল না। বিশ্বাস ছিল, আমার লেখা পরীক্ষককে মুগ্ধ করবেই। আমার পরিশ্রম এবং একাগ্রতাই এই আত্মবিশ্বাসের জন্ম দিয়েছিল। তবে ভাইভাও আমার খুব ভালো হয়েছে। ইংরেজিতে কথা বলায় সাবলীল ছিলাম, এটা বোর্ডকে মুগ্ধ করেছে।
যাদের অনুপ্রেরণা পেয়েছি
অনুপ্রেরণা অনেকেই দিয়েছে। কতিপয় বন্ধু, জুনিয়র, সিনিয়র যারা আমার সম্পর্কে জানতেন, নিয়মিত অনুপ্রেরণা দিতেন। তবে পর্দার আড়ালে থেকে দোয়া করেছেন আমার মা। আমি মনে-প্রাণে বিশ্বাস করি, মায়ের দোয়ার কারণেই ভালো ফল করেছি।
সীমাহীন প্রতিবন্ধকতা ছিল
আমার সামনে-পেছনে পুরোটা সময় সীমাহীন প্রতিবন্ধকতা ছিল। এটা বলতেই হবে। দীর্ঘদিন ঢাকায় চাকরি করে এরপর আইটি স্টার্ট-আপ নিয়ে কাজ করার পর সব ফেলে গ্রামেফিরে যেতে হয়েছিল ২০২০ সালের মার্চে। তখন করোনা মহামারির কারণে চারদিকে কেবল হতাশা আর স্থবিরতা। এমনই এক সময়ে
আমাকে পড়াশোনা শুরু করতে হয়েছিল। এই প্রতিবন্ধকতার সঙ্গে মানিয়ে নিতেই ২০২০ সালের মার্চ থেকে অক্টোবর পর্যন্ত আমি সবার কাছ থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে নিয়েছি। কারও সঙ্গে মিশতে চাইতাম না। এই একাকিত্বই আমাকে দৃঢ় সংকল্পের পথে এগিয়ে নিয়ে গেছে।
‘Confuse them with your silence, shock them with your results’—এটাই ছিল আমার দর্শন। আমি এর যথার্থ প্রয়োগ আমার জীবনে ঘটিয়েছি।
নতুনদের জন্য পরামর্শ
বিসিএসের কণ্টকাকীর্ণ পথে যদি আসতেই চান, তবে নিজের সঙ্গে ভালো বোঝাপড়া করে আসুন। এখানে মেধার চেয়ে অসীম ধৈর্য
আর একাগ্রতার প্রয়োজন।
নিজেকে জিজ্ঞেস করে নিন,
এই গুণ কি আপনার আছে? যদি না থাকে, তবে এই পথে না আসাই ভালো। সাধারণত অন্য কারও
কাছ থেকে অনুপ্রেরণা নিয়ে এই
পথে বেশি দূর যাওয়া যায় না। অনুপ্রেরণা আসতে হবে নিজের ভেতর থেকে।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
আমার প্রিয় শিক্ষক ভাস্কর সেনগুপ্ত রেজাল্ট প্রকাশ হওয়ার পর আমাকে বলেছেন, আমাদের হাতে যেন বাংলাদেশ নিরাপদে থাকে। আমি স্যারকে কথা দিয়েছি, আমাদের
হাতে বাংলাদেশ নিরাপদ এবং ভালো থাকবে। আমি যে সুযোগ পেয়েছি, তা কাজে লাগিয়ে ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ বিনির্মাণে একটু হলেও অবদান রাখব—এমন স্বপ্ন দেখি।