অধ্যাপক ডা. এম আলমগীর চৌধুরী
বর্তমানে মোবাইলের ব্যবহার মানবজীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। প্রতিদিনের কাজকর্ম, যোগাযোগ, ইন্টারনেট, গেমিং, মনোরঞ্জন, টিভি দেখা, গান শোনা, ভিডিও চ্যাটিং, ভয়েস কল ইত্যাদি মোবাইলেই করে থাকি। কিন্তু প্রতিনয়ত এই যন্ত্রটির ব্যবহার শিশু থেকে বয়স্ক পর্যন্ত প্রায় প্রত্যেক ব্যক্তির নেশায় পরিণত হয়েছে। তবে প্রাত্যহিক জীবনে মোবাইল ব্যবহারের ক্ষতিকর দিকও রয়েছে। সেইসব ক্ষতিকর দিক ও তা প্রতিকারে ব্যবস্থা গ্রহণ নিয়েই এই আলোচনা।
ক্ষতিকর দিক : অতিরিক্ত মোবাইল ফোন ব্যবহারে চোখের দৃষ্টিশক্তি কমে যায়। চোখের শুষ্কতা, ঝাপসা দৃষ্টি ও মাথাব্যথার মতো সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়াই এই মোবাইল ফোন। এছাড়া যারা ঘুমের আগে মোবাইল ব্যবহার করেন, তারা নিদ্রাহীনতায় ভুগে থাকেন। যুক্তরাষ্ট্রের ওহাইও বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর চালানো এক জরিপের ফলাফল অনুযায়ী, যারা ঘুমানোর আগে দীর্ঘসময় মোবাইল ব্যবহার করে থাকেন, তাদের অনেকেই অনিদ্রায় ভুগছিলেন।
যারা অতিরিক্ত মোবাইল ফোন ব্যবহারে আসক্ত, তারা নানাবিধ মানসিক সমস্যা, যেমন- বিষণ্নতা, মানসিক চাপ ও একাকিত্বে ভুগে থাকেন। অনেকের মধ্যে নিউরোডিজেনারেটিভ সমস্যা দেখা দিয়ে থাকে। মোবাইল থেকে তড়িৎ চুম্বকরশ্মি নির্গত হয় বলে তা আমাদের মস্তিষ্কের স্নায়বিক কার্যক্ষমতা কমিয়ে দেয়। আর তা থেকে পরবর্তীকালে অ্যালজেইমার, পারকিনসনসসহ নানা ধরনের জটিল রোগ দেখা দিয়ে থাকে।
অনেক মাকেই দেখা যায়, শিশুদের খাওয়ানোর সময় হাতে তুলে দেন মোবাইল ফোন। এতে খেতে খেতে মোবাইল দেখতে চাওয়ার নেশা শিশুদের পেয়ে বসে। পরবর্তীকালে মোবাইল ফোন দেখার প্রতি শিশুটি তীব্রভাবে আসক্ত হয়ে পড়ে। আর এর ফলে তারা পড়ালেখা ও কাজে অমনোযোগীতা দেখা যায়। সামাজিকভাবে মেলামেশা করার ক্ষমতাও কমে যায়।
রাস্তায় গাড়ি চালানো অথবা রাস্তা পারাপারের সময় মোবাইলে কথা বলা বা মোবাইল ফোন ব্যবহারের কারণে দুর্ঘটনায় অসংখ্য মানুষ প্রতিনিয়ত প্রাণ হারাচ্ছে।
্ইদানীং প্রযুক্তির উন্নতির ফলে আমাদের সন্তানরা মোবাইল ফোনের মাধ্যমে টিকটকসহ নানাবিধ অসামাজিক মোবাইল অ্যাপের প্রতি নেশাগ্রস্থ হয়ে পড়ছে, সামাজিক অবক্ষয়ের শিকার হচ্ছে এবং নানাবিধ অপরাধ কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে যাচ্ছে।
প্রতিকারের উপায় : শিশুদের প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার আগে তাকে মোবাইল ফোন কিনে দিয়ে কিংবা নিজস্ব মোবাইল ফোন ব্যবহার করতে দেবেন না। প্রতিদিন মোবাইল ফোন ব্যবহার সীমিত করতে পারেন, যা মানুষভেদে আলাদা হতে পারে। গবেষকদের মতে, প্রতি দুই ঘণ্টায় ১০ থেকে ১৫ মিনিট মোবাইল ব্যবহার করা উচিত। রাতে ঘুমের ১ থেকে ২ ঘণ্টা আগে মোবাইল ব্যবহার পরিহার করুন। শিশুদের হাতে মোবাইল ধরিয়ে না দিয়ে, মা-বাবাদের শিশুর সঙ্গে আরও সময় ব্যয় করা উচিত। এতে আপনার সামাজিক বন্ধন আরও দৃঢ় হবে বলে বিশ্বাস করি। টিকটকের মতো অপ্রয়োজনীয় অ্যাপগুলো নিয়ন্ত্রণের ব্যাপারে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। মোবাইল ছাড়া আধুনিক জীবন অচল। তবে অবশ্যই মোবাইল ফোন ব্যবহার সীমিত করে আমাদের নিজেদের সময় আরও কার্যকরভাবে ব্যবহার করা উচিত। আপনার শিশু আগামীর ভবিষ্যৎ। তাই সময় থাকতে বিষয়টি নিয়ে গুরুত্ব দেওয়া উচিত বলে মনে করি।
লেখক : অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান
ইএনটি, আনোয়ার খান মডার্ন মেডিক্যাল কলেজ, ঢাকা। ০১৮১৯২২২১৮২
হটলাইন : ০১৯১৯২২২১৮২