Saturday, December 7, 2024

আমিন শাহী বাজার মাতাল নয় আসল বিষয় ভারতের শুল্ক

অর্থভুবন প্রতিবেদক

ভারত পেঁয়াজ রপ্তানিতে শুল্ক আরোপের ঘোষণার পরপরই দেশের বাজারে পণ্যটির দাম বাড়তে শুরু করেছে। এক রাতের ব্যবধানে বাজারে কেজিপ্রতি অন্তত ২০ টাকা বেড়ে গেছে। কিন্তু শুল্কযুক্ত পেঁয়াজ এখনো আমদানি হয়নি। এর জন্য বাজার সিন্ডিকেটের প্রভাবকে দায়ী করেছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।

খবর নিয়ে জানা যায়, এতদিন ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি করতে কোনো শুল্ক দিতে হতো না বাংলাদেশকে। গতকাল হঠাৎ পেঁয়াজ রপ্তানিতে ৪০ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেয় দেশটি। ফলে এক রাতের ব্যবধানে প্রতি কেজিতে ১৫-২০ টাকা বেড়ে গেছে। সব থেকে বেশি দাম বেড়েছে ভারতীয় পেঁয়াজের। বাজারে আমদানি করা প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৭০-৭৫ টাকায়। যা একদিন আগেও বিক্রি হয়েছে ৫৫-৬০ টাকায়। দেশি পেঁয়াজের মধ্যে ফরিদপুরের পেঁয়াজের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৮৫-৯০ টাকায় ও পাবনার পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৯০-৯৫ টাকায়।

 

এদিকে আমদানিকারকরা জানান, গতকাল রবিবার পর্যন্ত শুল্কযুক্ত পেঁয়াজ দেশের বাজারে প্রবেশ করেনি। তবে ভারতের পেঁয়াজ রপ্তানিতে ৪০ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণায় পাইকার ও খুচরা ব্যবসায়ীরা পেঁয়াজের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন।

জানতে চাইলে হিলি স্থলবন্দরের পেঁয়াজ আমদানিকারক মোবারক হোসেন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ভারত থেকে বাংলাদেশে পেঁয়াজ রপ্তানিতে ৪০ ভাগ শুল্ক আরোপের নতুন সিদ্ধান্তটি কার্যকর হয়েছে। এর ফলে কেজিপ্রতি কত টাকা করে শুল্ক পড়ছে সেটি এখন পর্যন্ত নিশ্চিত না। পেঁয়াজের কেজিপ্রতি শুল্ক কাস্টমস ৫ টাকা নেবে নাকি ৬ টাকা নেবে নাকি ৯ টাকা নেবে এ বিষয়টি নিয়ে ভারতীয় কাস্টমসের সঙ্গে রপ্তানিকারকদের দেনদরবার চলছে। তবে এখন পর্যন্ত সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য ভারতের কাস্টমসে আসেনি। এ সংক্রান্ত চিঠি আসার কথা। এটি আসার পরই বন্দর দিয়ে পেঁয়াজ রপ্তানি শুরু হবে। বিকেল ৪টা নাগাদ যদি এ সংক্রান্ত মেসেজ ভারতীয় কাস্টমসে আসে তবেই বিকেল থেকে পেঁয়াজ রপ্তানি শুরু হতে পারে। আর যদি এর মধ্যে না আসে আরও দেরি হয় তাহলে রপ্তানি শুরু হতে দেরি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। নতুন সিদ্ধান্তে এখনো পেঁয়াজ আমদানি শুরু হয়নি।

শুল্ক আরোপের খবরে দেশের বাজারে পেঁয়াজের অস্বাভবিক মূল্যবৃদ্ধির বিষয়টি স্বীকার করে শ্যামবাজার পেঁয়াজ আমদানিকারক ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক হাজি মো. হাফিজুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, দেশের বাজারে ভারতীয় পেঁয়াজের চাহিদা রয়েছে অনেক। সেই অনুযায়ী দেশটিতে পেঁয়াজের দাম বাড়লে আমাদের দেশের বাজারে এর একটা প্রভাব পড়ে। তবে গতকাল দেশটির ৪০ শতাংশ শুল্ক আরোপের খবরে দেশের বাজারে হুট করে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে। প্রতি মণ পেঁয়াজে ৬শ টাকা বেড়েছে। গতকাল পর্যন্ত একমণ পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ২ হাজার ৪শ টাকায়। তবে এটি বেশিদিন স্থায়ী হবে না। আগামী ১ সপ্তাহের মধ্যে এটি সমন্বয় হয়ে আসবে।

পাইকার ও খুচরা ব্যবসায়ীদের ভাষ্য অনুযায়ী, সরবরাহ কম থাকায় বাড়তি দামে বাজারে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে। মূলত শনিবার রাত থেকে এই পণ্যটির দাম বেড়েছে। পাল্লাপ্রতি ২০-৩০ টাকা ও কেজি প্রতি ১০-১৫ টাকা বেড়েছে। এর মধ্যে দেশি পেঁয়াজের পাল্লা ২০ টাকা ও আমদানি করা পেঁয়াজের পাল্লায় ৪০ টাকা বেড়েছে।

কারওয়ান বাজারের নূর মোহাম্মদ নামের এক পাইকার দেশ রূপান্তরকে বলেন, প্রতিদিন ১০০ কেজির বেশি পেঁয়াজের দরকার হয়। তার জোগান আসে শ্যামবাজার থেকে। বর্তমানে বেশি দামে পেঁয়াজ কিনতে হয় বলে বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। গতকাল মণপ্রতি ৬০০ টাকা বাড়তি দামে পেঁয়াজ কিনতে হয়েছে। যা এর আগের দিনেও প্রতি মণ পেঁয়াজ কিনেছি ২ হাজার ৪শ টাকায়।

একই কারণে চট্টগ্রামের বাজারেও পেঁয়াজের দাম বেড়েছে। শনিবার যেখানে প্রতি কেজি ৪৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে, একদিনের ব্যবধানে এখন বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৬৫ টাকায়। আর তা খুচরা ব্যবসায়ীরা ৭০ থেকে ৭৫ টাকায় বিক্রি করছে।

কেবল শুল্ক আরোপের খবরে দেশের বাজারে পেঁয়াজের দাম নিয়ে অরাজকতার বিষয় কনজুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন দেশ রূপান্তরকে বলেন, আমাদের দেশের ব্যবসায়ীদের স্বভাব এমনই। তাদের অতিমুনফা লোভের জন্য দেশের মানুষের কষ্ট হচ্ছে। আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়ার খবরে তাদের স্টকের ভোগ্যপণ্যের সংকট দেখা দিতে শুরু করে। অথচ, যখন পণ্যের দাম কমে তখন দাম কমানো বিষয় তাদের খবর থাকে না। তাদের সে সময়কার অজুহাত থাকে, বাড়তি দামে পণ্য কেনায় কম দামে বিক্রি করা সম্ভব হচ্ছে না।

মুনাফাখোর ব্যবসায়ীদের হটাতে দেশের মানুষকে এগিয়ে আসতে হবে জানিয়ে তিনি বলেন, ব্যবসায়ীদের নিয়ন্ত্রণ করার সরকারের দায়িত্ব থাকলেও তারা তা করছে না। এর জন্য জনগণকে এগিয়ে আসতে হবে। দেশের বাজারে যেসব পণ্যের মূল্য অস্বাভাবিক হারে বাড়ছে তা ব্যবহার কমিয়ে আনলে অসাধু ব্যবসায়ীদের থামানো সম্ভব বলে ভোক্তাদের এই নেতা মনে করেন।

যাতায়াত সুবিধা ভালো থাকায় মসলাসহ কয়েক ধরনের কাঁচা সবজি ভারত থেকে আমদানি করে থাকে বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা। আমদানি করা পণ্যগুলোর মধ্যে অন্যতম পেঁয়াজ। ফলে প্রতি বছরই আমদানি করা পেঁয়াজের সিংহভাগ ভারত থেকে আসে। এর মধ্যে ২০২২-২৩ অর্থবছরে আমদানি করা হয় ৭ লাখ ৪৩ হাজার টন পেঁয়াজ। ২০২১-২২ অর্থবছরে আমদানি হয় ৬ লাখ ৬৫ হাজার টন। এছাড়া ২০২০-২১ অর্থবছরে ৫ লাখ ৫৩ হাজার টন, ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৫ লাখ ৭১ হাজার, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ১০ লাখ ৭ হাজার ও ২০১৭-১৮ অর্থবছরে আমদানি করা হয় ৮ লাখ ৬৩ হাজার টন পেঁয়াজ।

বর্তমানে দেশে পেঁয়াজের চাহিদা ২৮-৩০ লাখ টন। ২০২২-২৩ অর্থবছরে ২ লাখ ৪১ হাজার ৯০০ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজের আবাদ করা হয়। এতে উৎপাদন হয় ৩৪ লাখ টনের বেশি পেঁয়াজ। তবে সংগ্রহ থেকে শুরু করে ভোক্তা পর্যন্ত পৌঁছতে বিভিন্ন ধাপে পণ্যটির ২৫-৩০ শতাংশ নষ্ট হয়ে যায়। যার প্রভাবে দেশের বাজারে প্রায় তিনগুণ হারে পণ্যটির দাম বাড়ে। বাজার স্থিতিশীল করতে তাই গত ৫ জুন থেকে কৃষি মন্ত্রণালয় আবার পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দেয়।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বাদল চন্দ্র বিশ্বাস দেশ রূপান্তরকে বলেন, চাহিদার থেকে আমাদের উৎপাদন অনেক বেশি হচ্ছে। তবে প্রাকৃতিক দিক থেকে একটু বেশি বৃষ্টি হলেই আমাদের দেশের পেঁয়াজ নষ্ট হয়ে যায়। যেহেতু ছোট দেশ, সামান্য ক্ষতি হলে অনেক বেশি সমস্যায় পড়তে হয় আমাদের। কমবেশি এই সমস্যা আমাদের থাকবেই।

পেঁয়াজ আমদানির বিষয়ে কোনো বাধা নেই উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, যেহেতু ভারতের বাজারে এখন পেঁয়াজের দাম বেশি। তার প্রভাবে আমাদের দেশেও এই পণ্যটির দাম বেড়েছে। সেই ক্ষেত্রে যে কেউ চাইলে অন্য যেকোনো দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি নিতে পারবেন। সেই ক্ষেত্রে কোনো বাধা থাকবে না।

spot_imgspot_img

ছবিটা তুলে রাখুন ঐতিহাসিক হয়ে থাকবে : ড. ইউনূস

গ্রামীণ টেলিকমের শ্রমিক-কর্মচারীদের কল্যাণ তহবিলের ২৫ কোটি টাকা আত্মসাৎ এবং পাচারের অভিযোগে করা মামলায় জামিন পেয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান ও নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস।...

মায়ের ঘুমপাড়ানি সুর শান্তিধারা

আমাদের জোনাকজ্বলা গ্রাম বিদ্যুৎ তখনও দেখেনি। সন্ধ্যার কাছে বিকেল নতজানু হতেই সবুজ পাহাড়েরা মিশকালো হয়ে যায়। ফলে- আমরা চালের ফুটো দিয়ে চাঁদ দেখি, আর...

মাহবুবা ফারজানা নতুন তথ্য সচিব

তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের নতুন সচিব হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন বেগম মাহবুবা ফারজানা। তিনি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) ছিলেন। তাকে সচিব পদে পদোন্নতি...

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here