ইলিশের ভরা মৌসুমে মন্দাভাব থাকলেও হঠাৎ করেই বঙ্গোপসাগর খুলে দিয়েছে রুপালি ইলিশের ডালি। হাসির ঝিলিক ফুটেছে বরগুনার জেলেদের মুখে। সরবরাহ বেড়েছে চাঁদপুরের মোকাম ও বাজারগুলোতে। কিন্তু বরিশালের বাজারগুলোতে নেই পর্যাপ্ত সরবরাহ। লাখ লাখ টাকার দাদন দিয়েও মাঝিদের খুঁজে পাচ্ছে না পাইকারি বিক্রেতারা। এতে বিপাকে পড়ছেন খুচরা বিক্রেতা ও ঘাটের শ্রমিকরা। তবে দীর্ঘ সময়ের পর পটুয়াখালীর জেলেদের জালে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ ধরা পড়ছে। ইলিশ নিয়ে ঘাটে ফিরছে গভীর সমুদ্রের জেলেরা। ইলিশের দেখা পেয়ে খুশি জেলে ও মৎস্য ব্যবসায়ীরা। তবে জেলেদের জালে ইলিশ ভরপুর হলেও বাজারে দাম আগের মতোই আছে। আমাদের বরগুনা প্রতিনিধি সুমন সিকদার, চাঁদপুর প্রতিনিধি তালহা জুবায়ের, বরিশাল প্রতিনিধি সুকান্ত অপি এবং কুয়াকাটা (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি মো. বাাচ্চু খলিফা জানিয়েছেন ইলিশের চালচিত্র।
বঙ্গোপসাগর খুলে দিয়েছে রুপালি ইলিশের ডালি : ইলিশের ভরা মৌসুমে ইলিশের মন্দাভাব থাকলেও হঠাৎ করেই বঙ্গোপসাগর খুলে দিয়েছে রুপালি ইলিশের ডালি। হাসির ঝিলিক ফুটেছে জেলেদের মুখে। ইলিশের আনাগোনায় দেশের বৃহত্তম মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্যঘাট জেলে ও মৎস্যজীবীদের পদচারণা সরগরম হয়ে উঠেছে। মৎস্য বন্দরে এসে ভিড়ছে মাছবোঝাই ফিশিং ট্রলার, কেউ মাছ তুলছে তীরে, আবার কেউ দর হাঁকাচ্ছে বিক্রির উদ্দেশ্য। কারও যেন দম ফেলার ফুরসত নেই। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত এভাবেই সরগরম বাংলাদেশের বৃহত্তম মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র পাথরঘাটা বিএফডিসি মৎস্য ঘাট। পর্যাপ্ত ইলিশের দেখা মিললেও দাম আকাশছোঁয়া।
গতকাল সকালে বরগুনার পাথরঘাটা বিএফডিসি মৎস্যঘাটে গিয়ে দেখা গেছে, ঘাটের পাশের খালে নোঙর করে আছে সারি সারি ফিশিং ট্রলার। ভরা মৌসুম থাকা সত্ত্বেও যেখানে গত সপ্তাহেও ঘাটে কোনো ট্রলার ছিল না, সেখানে এখন ট্রলার নোঙর করার জায়গা পাচ্ছে না। জেলেরা বলছে, গত তিন-চার দিন ধরে বঙ্গোপসাগরে প্রচুর পরিমাণে ইলিশ ধরা পড়ছে। অন্যদিকে এসব মাছ পরিবহনের জন্য বিএফডিসি ঘাটে অপেক্ষা করছে মাছবাহী ট্রাক। ইতিমধ্যেই অনেক ট্রাক মাছ নিয়ে চলে গেছে রাজধানী শহর ঢাকাসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলাগুলোতে।
সাগর থেকে মাছবোঝাই ট্রলার নিয়ে ঘাটে এসেছে এফবি মায়ের দোয়া। মাঝি জয়নাল বলেন, সাত দিন আগে সাগরে গেছি। প্রথম দিন মাছ না পেলেও তার পরদিন থেকে পর্যাপ্ত মাছ পেয়েছি। ট্রলারবোঝাই ইলিশ নিয়ে আমরা মৎস্যঘাটে এসেছি। মাছ বিক্রি করে আমরা বাগেরহাট চলে যাব। বঙ্গোপসাগর থেকে ফিরে আসা মো. কাদের, সগির, রুস্তমসহ একাধিক জেলেরা বলেন, এখন সাগরে প্রচুর পরিমাণে মাছ ধরা পড়ছে।
জেলেদের জালে পর্যাপ্ত ইলিশ ধরা পড়লেও দাম কমার কোনো লক্ষণ নেই। বরং বাড়তি মাছ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে এর দাম। বিএফডিসি মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের মৎস্য ব্যবসায়ী ও জেলেদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পাইকারি বাজারে এক কেজির ওপরে গ্রেড সাইজের প্রতিমণ সামুদ্রিক ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৪৮-৫০ হাজার টাকা, একই সাইজের নদীর ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৭২-৭৫ হাজার টাকা দরে। ৮০০ গ্রাম থেকে ১ কেজি সাইজের প্রতিমণ সামুদ্রিক মাছ বিক্রি হচ্ছে ৪২-৪৫ হাজার টাকা, একই সাইজের নদীর ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৬০-৬৫ হাজার টাকা মণ। ৭০০ গ্রাম ওজনের সামুদ্রিক মাছ বিক্রি হচ্ছে ৩৪-৩৬ হাজার টাকা দরে, একই সাইজের নদীর মাছ বিক্রি হচ্ছে ৪৫-৪৮ হাজারে। ৫০০ থেকে ৭০০ গ্রামের ছোট সাইজের সামুদ্রিক মাছ বিক্রি হচ্ছে ২৫-২৮ হাজার আর একই সাইজের নদীর মাছ বিক্রি হচ্ছে ৩৬-৪০ হাজার টাকা দরে। তবে খুচরা বাজারে এ মাছের দাম আরও বেশি।
দক্ষিণাঞ্চলের ইলিশে চাঙ্গা বড়স্টেশন মাছঘাট : দেশের দক্ষিণাঞ্চলের সরবরাহকৃত ইলিশে চাঙ্গা হয়ে উঠছে চাঁদপুর বড় স্টেশন মাছঘাট। গেল তিন-চার দিন ধরে দেড় থেকে দুই হাজার মণ ইলিশ সরবরাহ হচ্ছে বাজারে। সরবরাহ বৃদ্ধি পাওয়ায় দামও কমেছে কিছুটা। তবে ইলিশ ধরা কম পড়ায় চাঁদপুরের স্থানীয় পদ্মা-মেঘনার মাছের দাম কিছুটা বেশি।
চাঁদপুর বড়স্টেশন মাছঘাটে সকাল থেকেই কর্মব্যস্ত সময় কাটছে শ্রমিকদের। উপকূলীয় অঞ্চলের জেলা থেকে ট্রলার ও পিকআপ ভ্যানে করে নিয়ে আসা ইলিশ তোলা হচ্ছে বাজারে। পাইকারের হাঁকডাকে এসব মাছ কেনাবেচায় ব্যস্ত সময় পার করছেন ক্রেতা-বিক্রেতারা।
চাঁদপুর জেলা মৎস্য বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক শবে বরাত সরকার বলেন, এ বছর মৌসুম জুড়ে ইলিশ সংকট ছিল বাজারে। দামও ছিল অনেক বেশি। এ কারণে আমরা ব্যবসায়ীরা অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। তবে গেল তিন-চার দিন ধরে ইলিশের সরবরাহ বৃদ্ধি পাওয়ায় বাজারে কর্মচাঞ্চল্য ফিরেছে। তবে স্থানীয় পদ্মা-মেঘনায় ইলিশের খরা কাটেনি। বর্তমানে প্রতিদিন দেড় থেকে দুই হাজার মণ ইলিশ উঠছে বাজারে। আগামী মা ইলিশের অবরোধের আগপর্যন্ত যদি তা অব্যাহত থাকে, তবে ক্রেতারা অল্প দামে ইলিশ কিনতে পারবেন এবং আমরাও ক্ষতি পুষিয়ে লাভের মুখ দেখতে পাব।
চাঁদপুর সদরের আনন্দ বাজার এলাকার জেলে ইদ্রিস মিয়া বলেন, ইলিশের মৌসুম শেষ হওয়ার পথে। কিন্তু নদীতে মাছ পাচ্ছি না। মাছ বেঁচে কোনো দিন দুই-চারশো টাকা পেলেও অধিকাংশ সময়ই নৌকার জ¦ালানি খরচ তুলতে কষ্ট হয়ে যায়।
মাছ ব্যবসায়ী বিপ্লব বলেন, গত তিন-চার দিন অনেক ইলিশ বাজারে উঠেছে। তবে এখন সেই তুলনায় কিছুটা কম। এই সময়ে অন্তত দেড় থেকে দুই হাজার মণ মাছের সরবরাহ হয়েছে, যা গত সপ্তাহে ছিল ৫০০-৬০০ মণ। মাছের সরবরাহ বৃদ্ধি পাওয়ায় দামও কমেছে। তিনি বলেন, আকারভদে কেজি প্রতি ইলিশের দাম কমেছে ২০০-৩০০ টাকা। বর্তমানে এক কেজি ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ১৪০০ থেকে ১৫০০ টাকায়। ৭০০-৯০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ ১১০০ থেকে ১২৫০ দরে এবং ছোট সাইজের ইলিশ কেজি প্রতি বিক্রি হচ্ছে ৭০০-৮০০ টাকায়। তবে স্থানীয় ইলিশের দাম আকারভেদে ২০০-৩০০ টাকা বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে।
ভরা মৌসুমে মিলছে না ইলিশ : দক্ষিণাঞ্চলের স্থানীয় বাজারগুলোতে দেখা মিলছে না রুপালি ইলিশের। তাই চাহিদা অনুযায়ী ক্রেতারা বাজারে ইলিশ পাচ্ছেন না। অন্যদিকে লাখ লাখ টাকার দাদন দিয়েও মাঝিদের খুঁজে পাচ্ছে না পাইকারি বিক্রেতারা। এতে বিপাকে পড়ছেন খুচরা বিক্রেতা ও ঘাটের শ্রমিকরা।
স্থানীয় বাজারের আড়তদারদের অভিযোগ, নদী ও সাগরে ইলিশ ধরার নিষেধাজ্ঞার সময়ে চাপিলা নামে ধরা পড়ছে ব্যাপক ইলিশের পোনা। ফলে জাটকা ধরা বন্ধ থাকলেও মিলছে না কোনো সুফল। তাই দুষছেন মৎস্য কর্মকর্তারসহ সংশ্লিষ্টদের। এ ছাড়া পদ্মা সেতু হওয়ায় ঢাকার দাদনরা সরাসরি ইলিশের মাঝি, বোটমালিকের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন হয়েছে। তাই তারা স্থানীয় বাজারে ইলিশ না উঠিয়ে সরাসরি ঢাকাসহ অন্যান্য স্থানে পাঠিয়ে দিচ্ছে। এ কারণে স্থানীয় বাজারে এখন ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে না।
গতকাল সকালে বরিশাল নগরীর পোর্ট রোড মোকামে সরেজমিনে দেখা যায়, অনন্য বছরে তুলনায় অর্ধেক ইলিশও উঠছে না বাজারে। এর আগে দুপুর ২টা থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত মোকাম থাকত ইলিশে ভরপুর। কিন্তু এবারের চিত্র একেবারেই ভিন্ন। সকাল ৯ থেকে ১০টার মধ্যেই শেষ হয়ে যাচ্ছে ইলিশ বেচাকেনা। আগের মতো ব্যস্ত নেই শ্রমিকদেরও। ঘাটে ইলিশ না পাওয়ায় শ্রমিকদের সময় কাটছে হা-হুতাশ করে। তাদের মধ্যে কেউ কেউ সময় কাটাচ্ছেন চায়ের দোকানে বসে। অন্যদিকে পদ্মা সেতুর কারণে এখন বরিশাল মোকামেও আসে না আগের মতো বোট। খরচ কমাতেই এখন সড়ক পথে ইলিশ এক মোকাম থেকে অন্য মোকামে পাঠানো হয়। তেমনি ট্রাক ভরে ইলিশ নামতে দেখা যায় বরিশালের এই মোকামে।
বাজারে চাহিদা অনুযায়ী ইলিশ না থাকায় অন্যান্য বছরের তুলনায় পাইকারি ও খুচরা বাজের দ্বিগুণ দাম বেড়েছে। পাইকারি বাজারে আকারভেদে ৫০০ থেকে ৬০০ গ্রামের সাইজের ইলিশের প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৯৮২ টাকায়, ৮০০ থেকে ৯০০ গ্রাম বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৩০৭ টাকায়, ১ কেজি সাইজ ১ হাজার ৫০০, ১২০০ গ্রাম থেকে ১৩০০ গ্রাম বিক্রি হয়েছে ১ হাজার ৭৫৭ এবং দেড় কেজি সাইজে ইলিশ বিক্রি হয়েছে ২ হাজার ৭ টাকায়।
পোর্ট রোডের মেসার্স মনু অ্যান্ড ব্রাদার্সের আড়তদার অঞ্জন দাস দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রতি বছরের তুলনায় আমাদের বরিশাল মোকামে অর্ধেক ইলিশও পাচ্ছি না। ইলিশের চাহিদা পূরণ করতে পারছি না। লাখ লাখ টাকা দাদন দেওয়া আছে; কিন্তু ইলিশ নেই। যেখানে এক হাজার মণের জায়গায় এখন প্রতিদিন ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে মাত্র ৪০০-৫০০ মণ। ইলিশ কম হওয়ায় এখন অনেক ব্যবসায়ী মাছ কিনতে পারছেন না। বরিশাল মোকামে প্রায় ১৬০ আড়তদার আছে। তারা অনেকেই আড়ত এখন বন্ধ করে দিয়েছে। মাছ নেই, আড়ত দিয়া কী করবে? স্থানীয় নদীগুলোতেও কোনো ইলিশ ধরা পড়ছে না। আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণে এমনটা হতে পারে।’
কলাপাড়া উপজেলা মাঝি সমিতির সভাপতি নুরু মাঝি বলেন, ‘বর্তমানে আবহাওয়ার ব্যাপক পরিবর্তন আমরা লক্ষ করছি। তাই উপকূলীয় নদী বন্দরগুলোয় এখন ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে না। গভীর সমুদ্রে প্রচুর ইলিশ আছে। কিছুদিন আগে বৃষ্টির সময়ে কিছু মাছ উপকূলীয় নদীতে ধরা পড়েছিল। কিন্তু বর্তমানে মোটেই পাওয়া যাচ্ছে না। সেজন্যও স্থানীয় বাজারে নদীর মাছগুলো উঠে না। আর গভীর সমুদ্রে বর্তমানে অনেক বড় বড় সাইজের ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে। সেগুলো বাজারে দেখা যাচ্ছে।’
মৎস্য অধিদপ্তর বরিশাল বিভাগ অফিসের সহকারী পরিচালক মুহাম্মদ নাসির উদ্দীন দেশ রূপান্তরকে বলেন, বর্তমানে ইলিশ সাগর থেকে নদীর দিকে অগ্রসর হচ্ছে। তাই ইলিশ একটু কম ধরা পড়ছে। কিন্তু চলতি মৌসুমের আগামী অক্টোবর থেকে বরিশাল অঞ্চলের নদীতে প্রচুর পরিমাণে ইলিশ ধরা পড়বে। নদীতে পানির স্রোত, বৃষ্টি এবং পানির গভীরতা যদি ঠিকমতো না থাকে, তাহলে ইলিশ চলাচলে বাধা পায়। এ ছাড়া কোথাও যদি ডুবোচর থাকে সেখানে ইলিশ চলাচলে বাধা পায়। তাই ইলিশ চলাচলে দিক পরিবর্তন করে থাকে। আর আমাদের এ অঞ্চলে চলতি বছরে আবহাওয়ার পরিবর্তনের ফলে বৃষ্টিও কম হয়েছে। ঝড়বৃষ্টির সময়ই প্রচুর পরিমাণে ইলিশ পাওয়া যায়। তখন ইলিশ চলাচলে আবহাওয়া তাদের অনুকূলে থাকে। আমাদের আশা অক্টোবরের মধ্যে প্রচুর পরিমাণ ইলিশ জেলেদের জালে ধরা পড়বে।
দীর্ঘদিন পর হলেও ঝাঁকে ঝাঁকে ধরা পড়ছে ইলিশ : দীর্ঘ সময়ের পর জেলেদের জালে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ ধরা পড়ছে। ইলিশ নিয়ে ঘাটে ফিরছে গভীর সমুদ্রের জেলেরা। দীর্ঘদিন পর ইলিশের দেখা পেয়ে খুশি জেলে ও মৎস্য ব্যবসায়ীরা। তবে গভীর সমুদ্রের জেলেরা কাক্সিক্ষত ইলিশের দেখা পেলেও উপকূলবর্তী জেলেরা হতাশ। গতকাল পটুয়াখালীর বড় দুটি মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র আলীপুর-মহিপুর ঘুরে দেখা যায়, বিভিন্ন আড়তগুলোতে স্থানীয় ছাড়াও চট্টগ্রাম, ভোলা, বাঁশখালী, কুতুবদিয়া, কক্সবাজার থেকে অনেক ট্রলার এখানে বিক্রি করতে এসেছে। ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ পাওয়ায় সরগরম পুরো মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র। বিভিন্ন সাইজের ইলিশের ক্রয়-বিক্রয় খুশি জেলেরা।
মহিপুর মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে মাছ বিক্রি করতে আসা ভোলার ট্রলার এফবি সাথীর মাঝি নুরু মিয়া বলেন, ‘অনেক মাস পরে এত মাছের দেখা পেলাম। এবার প্রায় ৮ লাখ টাকার মাছ বিক্রি করলাম। এভাবে মাছ পেলে আমরা আগের দেনা পরিশোধ করতে পারব।’
আলীপুর মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ভাই ভাই ফিশের পরিচালক মিজানুর রহমান বলেন, গভীর সমুদ্রের জেলেরা ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ নিয়ে আসছে এবং ভালো দামও পাচ্ছে। জাটকা ১৯ হাজার, ৬০০-৭০০ গ্রামের ইলিশ ২৫ হাজার, ৮০০-৯০০ গ্রামের ইলিশ ৩৩ হাজার এবং এক কেজি ওপরের ইলিশ ৪৫ থেকে ৬৫ হাজার টাকা মণ বিক্রি হচ্ছে। তবে এ দামে জেলেরা খুশি থাকলেও পাইকারি ক্রেতারা প্রায়ই লোকসান গুনছেন।
কলাপাড়া উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা অপু সাহা বলেন, গত কয়েক দিন ধরে গভীর সমুদ্রে মাছ শিকারকারী ট্রলারগুলো ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ নিয়ে ফিরছে। তবে কাক্সিক্ষত ইলিশ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে উপকূলবর্তী জেলেরা। এর প্রধান কারণ হলো আন্দারমানিক ও রামনাবাদ চ্যানেলসংলগ্ন বেশ কয়েকটি ডুবোচর সৃষ্টি হয়েছে, যে কারণে ইলিশ তার গতিপথ পরিবর্তন করেছে। ৬৫ দিনের অবরোধের সুফল পাচ্ছে জেলেরা। তাই উপকূলে জেলেদের জন্য পরামর্শ থাকবে তারা যেন গভীর সমুদ্রে মাছ শিকারের সরঞ্জামাদি তৈরি করে।