Saturday, December 7, 2024

বঙ্গবন্ধু শিল্পনগর অর্থনীতির ট্রাম্পকার্ড

অর্থভুবন ডেস্ক

♦ উৎপাদনে গেছে পাঁচ প্রতিষ্ঠান, চলতি বছর যাবে আরও ১২টি ♦ কর্মসংস্থান ১৫ লাখ, রপ্তানি আয় আসবে ১৫ বিলিয়ন ডলার

বাংলাদেশের অর্থনীতির ‘ট্রাম্পকার্ড’ হতে যাচ্ছে এ অঞ্চলের সর্ববৃহৎ শিল্পাঞ্চল হিসেবে প্রতিষ্ঠার অপেক্ষায় থাকা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগর (বিএসএমএসএন)। দেশের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের গেম চেঞ্জার হবে এই অর্থনৈতিক অঞ্চল। আগামী ১৫ বছরে ১৫ লাখ লোকের কর্মসংস্থান হবে এখানে। পুরোদমে উৎপাদন শুরু হলে বছরে রপ্তানি আয় আসবে ১৫ বিলিয়ন ডলার। এখন পর্যন্ত ২০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বিনিয়োগ প্রস্তাব এসেছে এ শিল্পাঞ্চলে।

এফবিসিসিআইয়ের প্রেসিডেন্ট মাহবুবুল আলম জানান, বিভিন্ন সময় দেশের ব্যবসায়িক প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকে তাঁরা এ শিল্পাঞ্চল নিয়ে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের প্রচণ্ড আগ্রহ দেখেছেন। এখানে বিপুল বিদেশি বিনিয়োগ হচ্ছে। আরও বিনিয়োগকারীকে উৎসাহিত করতে কাজ চলছে। সামনের দিনে এই অর্থনৈতিক অঞ্চলকে বাংলাদেশ বহির্বিশ্বের কাছে অর্থনীতির ট্রাম্পকার্ড হিসেবে ব্যবহার করতে পারবে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাণিজ্য অনুষদের ডিন ও অর্থনীতি-বিশ্লেষক অধ্যাপক হেলাল উদ্দিন নিজামী বলেন, ‘দারুণ গতিতে কাজ চলছে। সব ঠিক থাকলে এই দশকের শেষে এটি দক্ষিণ এশিয়ার সর্ববৃহৎ অর্থনৈতিক অঞ্চলে পরিণত হবে। তবে শিল্পাঞ্চলের সঙ্গে সমন্বয় করে বিমানবন্দর, রেলস্টেশনসহ যোগাযোগ হাব তৈরি, অবকাঠামো তৈরি, অন্য শহরের সঙ্গে সংযোগ ও সাপ্লাই চেন নেটওয়ার্ক সুদৃঢ় করতে কিছুটা সময় দরকার। এগুলো তৈরি হলে ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্টের সুফল আসা শুরু করবে।’ বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা) সূত্র জানান, এখন পর্যন্ত এই শিল্পাঞ্চলে দেশি-বিদেশি ৭২টি প্রতিষ্ঠানকে ৬ হাজার ৫০০ একর জমি বরাদ্দ দিয়েছে বেজা। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে পাঁচটি ইতোমধ্যে পণ্য উৎপাদন শুরু করেছে। আরও অন্তত ২০টি প্রতিষ্ঠান কারখানা ও অবকাঠামো তৈরি শেষে উৎপাদন শুরুর প্রক্রিয়ায় আছে। এর মধ্যে অন্তত ১২টি চলতি বছরের মধ্যে উৎপাদন শুরু করবে। বেপজা, অনন্ত গ্রুপ, কুনমিং আয়রন অ্যান্ড স্টিল হোল্ডিং কোম্পানিসহ অন্তত ৩০টির মতো প্রতিষ্ঠান কারখানার অবকাঠামো নির্মাণ করছে। পুরোদমে উৎপাদনে গেলে বছরে ১৫ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি আয় আসবে এ শিল্পাঞ্চল থেকে।

বাংলাদেশ অথনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা)-এর এক্সিকিউটিভ চেয়ারম্যান শেখ ইউসুফ হারুন বলেন, ‘সরকারের এই অগ্রাধিকার প্রকল্প দ্রুত সময়ে বাস্তবায়নের সর্বোচ্চ চেষ্টা চলছে। ইতোমধ্যে প্রথম পর্যায়ের অবকাঠামো নির্মাণ প্রায় শেষ। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তাদের কারখানা তৈরির কাজ এগিয়ে নিচ্ছে। কয়েকটি প্রতিষ্ঠান উৎপাদনে গেছে। চলতি বছরের মধ্যে আরও অন্তত ১০-১২টি প্রতিষ্ঠান উৎপাদনে যাবে।’ বেজাসূত্র জানান, বর্তমানে বিএসএমএসএনে নিপ্পন অ্যান্ড ম্যাকডোনাল্ড স্টিল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, ম্যাকডোনাল্ড স্টিল ইন্ডাট্রিজ লিমিটেড, এশিয়ান পেইন্টস বাংলাদেশ, বসুন্ধরা রেডিমিক্স অ্যান্ড কনস্ট্রাকশন, সামুদা কনস্ট্রাকশন লিমিটেড পণ্য উৎপাদন করছে। এর মধ্যে নিপ্পন ও ম্যাকডোনাল্ড জাপানের এবং এশিয়ান পেইন্টস ভারতীয় প্রতিষ্ঠান। বাকি দুটি বাংলদেশি। এসব প্রতিষ্ঠানে বর্তমানে স্থায়ী-অস্থায়ী মিলিয়ে ৪ হাজারের বেশি কর্মী কাজ করছেন।

দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পগোষ্ঠী বসুন্ধরা এই শিল্পাঞ্চলে ব্যাপক অবদান রাখছে। এখানে ৫০০ একর জমিতে ৫০০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করছে এই শিল্পগোষ্ঠী। শিল্পগ্রুপটির বসুন্ধরা অর্থনৈতিক অঞ্চলের সমন্বয়ক ফয়জুর রহমান জানান, এখানে চারটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলছে বসুন্ধরা। এগুলো হচ্ছে বসুন্ধরা রেডিমিক্স অ্যান্ড কনস্ট্রাকশন, বসুন্ধরা কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রি, বসুন্ধরা মাল্টি স্টিল মিলস ইন্ডাস্ট্রি, বসুন্ধরা প্রিফ্যাব্রিকেটেড বিল্ডিং ম্যানুফ্যাকচারিং ইন্ডাস্ট্রি। এর মধ্যে বসুন্ধরা রেডিমিক্স ইতোমধ্যে উৎপাদনে গেছে। শিগগিরই উৎপাদনে যাবে বসুন্ধরা কেমিক্যাল ও মাল্টি স্টিল ইন্ডাস্ট্রি। বেজার ডেপুটি ম্যানেজার (মনিটরিং) সেঁজুতি বড়ুয়া জানান, চলতি বছরের মধ্যে বসুন্ধরার দুটি প্রতিষ্ঠান ছাড়াও মেরিকো বাংলাদেশ লিমিটেড, এসকিউ ইলেকট্রনিকস লিমিটেডসহ অন্তত ১২টি প্রতিষ্ঠান উৎপাদনে যেতে পারে। এসব প্রতিষ্ঠানে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি চলছে।

বেজার কর্মকর্তারা জানান, মিরসরাই, সীতাকুণ্ড ও সোনাগাজীর ৩৩ হাজার ৮০৫ একর জায়গায় নির্মেয় এই শিল্পাঞ্চলের নির্মাণ শেষ হলে এটি হবে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সর্ববৃহৎ অর্থনৈতিক অঞ্চল। এখন পর্যন্ত এসব শিল্পাঞ্চলে ২০ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ এসেছে। চীন, ভারত, অস্ট্রেলিয়া, সিঙ্গাপুর, যুক্তরাজ্যসহ বিভিন্ন দেশের বেশকিছু বিনিয়োগ প্রস্তাব নিয়ে কাজ চলছে। কিছু প্রতিষ্ঠান জমি বরাদ্দ নেওয়ার প্রক্রিয়ায় আছে। জানা গেছে, এ শিল্পাঞ্চল ঘিরে সরকার ইতোমধ্যে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সঙ্গে ২০ কিলোমিটার চার লেনের সংযোগসড়ক এবং জলোচ্ছ্বাস মোকাবিলায় সাগরতীরে ১৮ কিলোমিটারের সুপার ডাইক নির্মাণ করেছে। এ ছাড়া মূল প্রশাসনিক ভবন, ২৩০ কেভিএ বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন, বৈদ্যুতিক সাবস্টেশনসহ বেশ কয়েকটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে। পানি শোধনাগার নির্মাণসহ বেশ কয়েকটি প্রকল্পের কাজ চলছে।

 

spot_imgspot_img

ছবিটা তুলে রাখুন ঐতিহাসিক হয়ে থাকবে : ড. ইউনূস

গ্রামীণ টেলিকমের শ্রমিক-কর্মচারীদের কল্যাণ তহবিলের ২৫ কোটি টাকা আত্মসাৎ এবং পাচারের অভিযোগে করা মামলায় জামিন পেয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান ও নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস।...

মায়ের ঘুমপাড়ানি সুর শান্তিধারা

আমাদের জোনাকজ্বলা গ্রাম বিদ্যুৎ তখনও দেখেনি। সন্ধ্যার কাছে বিকেল নতজানু হতেই সবুজ পাহাড়েরা মিশকালো হয়ে যায়। ফলে- আমরা চালের ফুটো দিয়ে চাঁদ দেখি, আর...

মাহবুবা ফারজানা নতুন তথ্য সচিব

তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের নতুন সচিব হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন বেগম মাহবুবা ফারজানা। তিনি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) ছিলেন। তাকে সচিব পদে পদোন্নতি...

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here