Monday, September 16, 2024

ডলার বিক্রিতেই সমাধান দেখছে বাংলাদেশ ব্যাংক

নিজস্ব প্রতিবেদক,অর্থভুবন 
ডলার বিক্রিতেই সমাধান দেখছে বাংলাদেশ ব্যাংক

 
 
 

নতুন অর্থবছরেও ডলারের সংকট কাটেনি। এতে দেশের বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রির লাগাম টানতে পারছে না বাংলাদেশ ব্যাংক। চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের দুই মাস (জুলাই-আগস্ট) না পেরোতেই প্রায় দুই বিলিয়ন ডলারের বেশি বিক্রি করা হয়েছে। সবশেষ গত বুধবার পর্যন্ত (২৩ আগস্ট) রিজার্ভ থেকে এই ডলার বিক্রি করা হয়েছে। রিজার্ভ কমে যাওয়ার অন্যতম কারণ এটি বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদ ও ব্যাংকাররা।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, বর্তমানে দেশের ‘গ্রস’ রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ২৯ দশমিক ৩২ বিলিয়ন ডলার। আর বিপিএম৬ পদ্ধতির হিসাবে রিজার্ভ ছিল ২৩ দশমিক ১৬ বিলিয়ন ডলার। অর্থবছরের শুরুতে দেশের গ্রস রিজার্ভ ছিল ৩১ দশমিক ২০ বা ২৫ দশমিক শূন্য ৪ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ অর্থবছরের দুই মাস না পেরোতেই রিজার্ভ কমেছে ১ দশমিক ৮৮ বিলিয়ন ডলার। যদিও এ সময় রিজার্ভ থেকে দুই বিলিয়ন ডলার বিক্রি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। গত অর্থবছর দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি ডলার বিক্রি করেছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। অর্থবছর ডলার বিক্রির পরিমাণ ছিল ১৩ দশমিক ৫৮ বিলিয়ন ডলার।

 

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জুলাই ও আগস্টের ২৩ দিনে রিজার্ভ থেকে ১৯৬ কোটি ৩০ লাখ (১ দশমিক ৯৬ বিলিয়ন) ডলার বিক্রি করা হয়েছে। এর মধ্যে জুলাইতে বিক্রি করা হয় ১১৪ কোটি ৭০ লাখ (১ দশমিক ১৫ বিলিয়ন) ডলার। আর চলতি মাস আগস্টের প্রথম ২৩ দিনে বিক্রি করা হয় ৮১ কোটি ৬০ লাখ ডলার। গত ২০২২-২৩ অর্থবছরের (জুলাই থেকে ২৩ আগস্ট) একই সময়ে ডলার বিক্রির পরিমাণ ছিল ১৭৭ কোটি ৮০ লাখ (১ দশমিক ৭৭ বিলয়ন) ডলার।

আমদানি কমায় এবং প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয় বাড়ায় ২০২১ সালের আগস্টে এই রিজার্ভ বাড়তে বাড়তে অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে ৪৮ বিলিয়ন ডলারের (গ্রস রিজার্ভ, তখন বিপিএম৬ পদ্ধতিতে হিসাব করা হতো না) মাইলফলক অতিক্রম করেছিল। এরপর আমদানি বাড়ায় এবং রপ্তানি আয় ও রেমিট্যান্স হোঁচট খাওয়ায় রিজার্ভ কমতে থাকে। চাপ বাড়তে থাকে অর্থনীতিতে। কিছুদিন ধরে আমদানি কমলেও রিজার্ভের পতন ঠেকছে না।

২০২১-২২ অর্থবছরে রিজার্ভ থেকে ৭ দশমিক ৬২ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করা হয়েছিল। আমদানি কমায় এবং রপ্তানি আয় ও প্রবাসীদের রেমিট্যান্স বাড়ায় বাজারে ডলারের সরবরাহ বেড়ে যাওয়ায় ডলারের দর ধরে রাখতে ২০২০-২১ অর্থবছরে উল্টো বাজার থেকে আট বিলিয়ন ডলার কিনেছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

বাংলাদেশ ব্যাংক আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজার দরেই রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করত। বাংলাদেশ ব্যাংক যে দামে ব্যাংকগুলোর কাছে ডলার বিক্রি করত, সেটিকে ‘ইন্টার ব্যাংক এক্সচেঞ্জ রেট’ বা ‘আন্তঃব্যাংক লেনদেন হার’ নামে অভিহিত করা হতো। ব্যাংকগুলোর কাছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক যে দরে ডলার বিক্রি করত, তখন সেই দরকেই ডলার রেট ধরা হতো। কিন্তু ডলার সংকটের নাগাম না টানতে পেরে গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে ডিলারের রেট নির্ধারণ করা বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। এ ক্ষেত্রে দায়িত্ব দেওয়া হয়, ব্যাংক নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ (এবিবি) এবং বিদেশি মুদ্রা লেনদেনকারী বিদেশি ব্যাংকগুলোর সংগঠন বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলারস অ্যাসোসিয়েশনের (বাফেদা) হাতে। এরপর থেকে সংগঠন দুটি ডলারের দর নির্ধারণ করছে।

এই দরকেই এখন আন্তঃব্যাংক রেট বলা হচ্ছে। এই রেটেই ব্যাংকগুলো নিজেদের মধ্যে ডলার কেনাবেচা করছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনার আলোকেই এই দর নির্ধারণ করছে এবিবি ও বাফেদা। রবিবার এই দর ছিল ১০৯ টাকা ৫০ পয়সা। ডলারের দর নির্ধারণের দায়িত্ব বাফেদা ও এবিবির ওপর ছেড়ে দেওয়ার আগে বাজারের চেয়ে কম দামে রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করত বাংলাদেশ ব্যাংক। কিন্তু চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম দিন (১ জুলাই) থেকে আর কম দামে ডলার বিক্রি করছে না কেন্দ্রীয় ব্যাংক। আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারের দরেই ডলার বিক্রি করা হচ্ছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক রিজার্ভ থেকে যে ডলার বিক্রি করছে, তা জ্বালানি তেল, সার, খাদ্যপণ্যসহ সরকারের অতি প্রয়োজনীয় খরচ মেটানোর জন্য রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর কাছে বিক্রি করা হয়েছে। এক বছরেরও বেশি সময় ধরে বেসরকারি ব্যাংকগুলোর কাছে রিজার্ভ থেকে কোনো ডলার বিক্রি করা হয়নি।

অর্থনীতির গবেষক পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘রিজার্ভ কিন্তু কমতে কমতে অনেক কমে গেছে। আর কমতে দেওয়া যাবে না। তাহলে কিন্তু সংকট আরও বেড়ে যাবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক চেষ্টা করছে যত কম এলসি (পণ্য আমদানির ঋণপত্র) খোলা হয়। তার সুফল পাওয়া যাচ্ছে। জুলাই মাসে এলসি কমেছে ৩১ শতাংশের বেশি। কিন্তু তার পরও রিজার্ভ কমছেই। আকুর দেনা শোধের পর সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে আরও কমে যাবে।’

spot_imgspot_img

ইউক্রেন সীমান্ত এলাকায় রাশিয়ার মালবাহী ট্রেন লাইনচ্যুত

ইউক্রেন সীমান্তবর্তী রাশিয়ার একটি এলাকায় দেশটির মালবাহী একটি ট্রেন লাইনচ্যুত হয়েছে। অনুমোদিত না এমন ব্যক্তিদের হস্তক্ষেপের পর ট্রেনটি লাইনচ্যুত হয়। বুধবার রেল অপারেটর এ...

ইসরাইলকে মৌলিক পরিবর্তনের আহ্বান ব্লিঙ্কেনের

মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রী এন্টনি ব্লিঙ্কেন ইসরাইলের প্রতি পশ্চিমতীরে তাদের কার্যক্রমে মৌলিক পরিবর্তনের আহ্বান জানিয়েছেন। পশ্চিমতীরে সম্ভবত একজন মার্কিন নাগরিককে হত্যার কথা ইসরাইলের সামরিক বাহিনীর স্বীকারের...

২০২০ সালের নির্বাচনে হার মানতে আবারো অস্বীকার ট্রাম্পের

যুক্তরাষ্ট্রে আগামী ৫ নভেম্বরে অনুষ্ঠেয় প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প ২০২০ সালের নির্বাচনে তার পরাজয় মেনে নিতে আবারো অস্বীকার করেছেন। মঙ্গলবার ডেমোক্র্যাটিক প্রতিদ্বন্দ্বী...

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here