অর্থভুবন ডেস্ক :
চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের চন্দনাইশ উপজেলার কাঞ্চননগরে এলেই সকাল বেলা দেখা মিলছে লাল কাপড়ে বাঁধা সারি সারি ভার নিয়ে মহাসড়কে আসা লোকের। প্রথমে দূর থেকে কী আনছে তা নিয়ে অস্পষ্টতা থাকলেও কাছে আসতেই দেখা মিলবে সুস্বাদু পেয়ারার।
প্রতিদিন সকালে বাগান থেকে বাজারের পথে আসেন চাষিরা। চন্দনাইশের পেয়ারা চট্টগ্রাম থেকে ছড়িয়ে পড়ছে সারা দেশে। পাশাপাশি কয়েক হাত ঘুরে তা যাচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে।
উপজেলার কাঞ্চননগর, দোহাজারী, হাসিমপুর, জামিজুরী ইউনিয়নের প্রায় ৬০ থেকে ৭০ ভাগ মানুষ পেয়ারা বাগানের মালিক। বংশ পরম্পরায় এ পেশায় নিয়োজিত রয়েছেন স্থানীয় অর্ধ লাখ মানুষ। চন্দনাইশ উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার প্রায় ৭৫৫ হেক্টর পাহাড়ি জমিতে এবার পেয়ারার চাষ হয়েছে।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা আজাদ হোসেন বলেন, বিভিন্ন ব্লকের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা নিয়মিত মাঠে গেছেন। সবসময় কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। জ্যাম-জেলি উৎপাদনকারী ব্যবসায়ীরা যদি পেয়ারা চাষিদের সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি করেন তাহলে কৃষকরা ন্যায্যমূল্য পাবেন।
সরেজমিন দেখা গেছে, পেয়ারাকে স্থানীয় মানুষরা ‘গয়াম’, কেউ বা আবার ‘গোয়াছি’ বলে থাকেন। বাংলাদেশের আপেল হিসেবে খ্যাত ভিটামিন সি সমৃদ্ধ সুস্বাদু পেয়ারার একটি উন্নত জাত কাজি পেয়ারা। খেতে মিষ্টি ও দেখতে সুন্দর বলে এ পেয়ারার চাহিদাও বেশি, যা চন্দনাইশের পাহাড়ি উর্বর জমিতে প্রচুর উৎপাদন হয়ে থাকে।
চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের পটিয়া থেকে চন্দনাইশের সাত-আট জায়গায় প্রতিদিন ভোর থেকে বসছে পেয়ারার হাট। দক্ষিণ চট্টগ্রামের সবচেয়ে বড় পেয়ারার হাট বসে চন্দনাইশের রওশন হাটে। মহাসড়কের দুপাশে লালসালুতে বাঁধা পেয়ারার সারি সারি ভার নিয়ে বসে থাকেন বিক্রেতারা। ব্যবসায়ীদের হিসাবে, প্রতিদিন ৫০০ ভার পেয়ারা বিক্রি হয় এ বাজারে।
পেয়ারা চাষিরা জানান, কাঞ্চননগরের পেয়ারা আকারে ছোট হলেও স্বাদ এবং পুষ্টিতে ভরপুর। এবার পেয়ারার বাম্পার ফলন হয়েছে। এ পেয়ারা পাওয়া যাবে অক্টোবরের শেষ পর্যন্ত। লালসালুতে মোড়ানো ব্যাগের পেয়ারা বিক্রি হচ্ছে ৬০০-৮০০ টাকায়। তবে টানা বৃষ্টি আর পাহাড়ি ঢলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন পেয়ারা চাষিরা।
তারা আরও বলেন, হিমাগারের অভাবে অনেক পেয়ারা বাগানেই নষ্ট হচ্ছে। যারা আগাম লাখ টাকা নিয়ে বাগান কিনেছেন তাদের পাহাড় থেকে পেয়ারা বাজার পর্যন্ত আনতে প্রতি ভারে শ্রমিকদের খরচ দিতে হয় ২০০-৩০০ টাকা। এ পেয়ারা চাষ করে বদলে গেছে কাঞ্চননগর থেকে দোহাজারী, হাসিমপুর ও জামিজুরী ইউনিয়নের প্রায় ৬০ শতাংশ অধিবাসীর ভাগ্য।
চন্দনাইশের পাহাড়ি অঞ্চলে উৎপাদিত এ পেয়ারা বেপারিদের হাত ঘুরে দেশের গি পেরিয়ে যায় মধ্যপ্রাচ্যেও। বিশেষ করে রপ্তানি করা হয় মধ্যপ্রাচ্যের সৌদি আরব, কুয়েত, কাতার, ওমান, বাহরাইন ও দুবাইসহ কয়েকটি দেশে। বিভিন্ন দেশেও জনপ্রিয় ফল হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে চন্দনাইশের পেয়ারা। চন্দনাইশের পেয়ারা চাষে ব্যবহার করতে হয় না কোনো ওষুধ বা রাসায়নিক পদার্থ। ফলে একবার পেয়ারার স্বাদ পেলে তা ভুলার মতো নয়।