অর্থভুবন ডেস্ক
অতিকষ্ট মানুষভেদে আচরণ ভিন্ন হলেও প্রত্যেকের দেহে অনেকটা একই রকম প্রভাব ফেলে বলে বিজ্ঞানীদের ধারণা। অতিকষ্টের পর মনের মধ্যে সন্দেহ ও সংশয়ের উদ্রেক হয়। পেটের ভেতরে এক ধরনের অস্বস্তিকর অনুভূতি হয়। এসব অনুভূতি বিশ্লেষণ করে এর পেছনের কারণ ব্যাখ্যা করছেন বিজ্ঞানীরা।
স্নায়ুবিজ্ঞানী (নিউরোসায়েন্টিস্ট) ড. লুসি ব্রাউন বলেন, অতিকষ্টের পর প্রায় সবাই মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন। এর প্রভাব শরীরেও পড়ে। এর পেছনে মস্তিষ্কের রাসায়নিক উপাদান দায়ী। মস্তিষ্কের রাসায়নিক উপাদান সেরেটোনিন, অক্সিটোসিন ও ডোপামিন। সেরেটোনিন সুখের অনুভূতি উদ্রেক করে। ভালো কাজে অনুপ্রাণিত হলে মস্তিষ্ক ডোপামিন নিঃসরণ করে। এই তিন উপাদানের মাত্রা বেশি হলে মানুষ ভালো বোধ করে। আর কম হলে ব্যক্তির খারাপ লাগা অনুভূত হয়। এর মধ্যে প্রধান উপাদান ডোপামিন, যাকে চূড়ান্ত প্রাকৃতিক ওষুধ বলা হয়।
অনাকাক্সিক্ষত অতিকষ্ট প্রভাব নিয়ে ব্রাউন ১৫ কিশোরের ওপর গবেষণা করেন। তাদের প্রাক্তন সঙ্গীদের ছবি দেখিয়ে মস্তিষ্কের প্রতিক্রিয়া স্ক্যান করা হয়। তাতে দেখা যায়, ডোপামিনের মাত্রা অনেক বেড়ে যায়। এই মাত্রাকে ব্রাউন কোকেন আসক্তির সঙ্গে তুলনা করেন। বিচ্ছেদের পর খুব নিকটজনের ছবি দেখার ফলে অন্য ধরনের এক প্রাপ্তির খোঁজে মস্তিষ্কের ডোপামিনের নিঃসরণ অনেক বেড়ে যায়।
ব্রাউনের গবেষণায় দেখা যায়, অতিকষ্টের পর শারীরিক ব্যথার সঙ্গে যুক্ত মস্তিষ্কের অঞ্চলগুলো সক্রিয় হয়ে ওঠে। কেউ প্রত্যাখ্যাত হলে মস্তিষ্কের একটি অংশ সক্রিয় হয়, যাকে ইনসুলার কর্টেক্স বলা হয়। এই অংশ ব্যথার সময় যন্ত্রণার প্রতিক্রিয়া জানায়, মৌমাছি হুল ফোটালে মস্তিষ্ক যে রকম সক্রিয় হয়। মানসিক উদ্বেগ, মাথাব্যথা ও মাথা ঘোরার মতো লক্ষণ প্রকাশ করে। একে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় ‘সোমাস্টেশন’ বলে।
অনেক সময় বিচ্ছেদের ফলে বুকে ব্যথা অনুভূত হয়, যাকে ‘ব্রোকেন হার্ট সিম্পটম’ বলা হয়। এই সময়ে দেহ থেকে প্রচুর পরিমাণে ক্যাটেকোলামাইন (অ্যাড্রেনালিন) নিঃসরণ হয়। শরীরে প্রচুর পরিমাণে ক্যাটেকোলামাইন থাকলে তা হৃৎপিণ্ডকে প্রভাবিত করতে পারে।