বিশেষ প্রতিনিধি অর্থভুবন
কোনো কোনো ক্যাডারে দ্রুত হচ্ছে পদোন্নতি। আবার কোনো কোনো ক্যাডারে পদোন্নতি পেতে বছরের পর বছর অপেক্ষা করতে হচ্ছে। একসঙ্গে বিসিএস দিয়ে কোনো ক্যাডারে কেউ এখনো উপসচিব পদমর্যাদার, আবার কোনো ক্যাডারে পদোন্নতি পেয়ে হয়েছেন সচিব। বিভিন্ন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের পদোন্নতির এই বৈষম্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। পুলিশ ক্যাডারে ৫২৯ জন কর্মকর্তার পদোন্নতির ফাইল জনপ্রশাসনে পড়ে আছে চার মাস ধরে। পুলিশ সদর দপ্তর থেকে প্রস্তাবনার এই ফাইল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় হয়ে জনপ্রশাসনে গেছে চার মাস আগে। এ নিয়ে পদোন্নতিবঞ্চিত পুলিশের কর্মকর্তাদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। দ্রুতই এটা নিষ্পত্তির আশা পুলিশের।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রশাসন ক্যাডারে বর্তমানে যুগ্মসচিব পদের সংখ্যা ৫০২টি। গত বছরের নভেম্বরে ১৭৫ জন উপসচিবকে পদোন্নতি দিয়ে যুগ্মসচিব করা হয়েছিল। এরপর এই সংখ্যা দাঁড়ায় ৭২৫ জনে। অনেক যুগ্মসচিবকে উপসচিবের পদে কাজ করতে হচ্ছে। এর মধ্যে গত সোমবার ২১১ জন উপসচিবকে যুগ্মসচিব পদে আবারও পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। এতে যুগ্মসচিবের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৯৩৬ জনে। পদোন্নতি পেলেও তাদের আপাতত যুগ্মসচিবের চেয়ারে বসার সুযোগ হচ্ছে না। একইভাবে প্রশাসনে অতিরিক্ত সচিবের নিয়মিত পদ আছে ২১২টি। এর সঙ্গে সমপর্যায়ের বিভিন্ন দপ্তরে প্রেষণে (নির্ধারিত পদের বাইরে অন্যান্য দপ্তর বা সংস্থায় নিয়োগ) থাকা পদ আছে আরও প্রায় ১২৫টির মতো। সব মিলিয়ে অতিরিক্ত সচিবের পদ দাঁড়ায় ৩৩৭টিতে। গত মে মাসে ১১৪ জন যুগ্মসচিবকে পদোন্নতি দিয়ে অতিরিক্ত সচিব করা হয়েছে। এতে অতিরিক্ত সচিবদের সংখ্যাটি দাঁড়িয়েছে ৪২৬ জনে। অর্থাৎ পদের চেয়ে এখন এই পদে কর্মকর্তা বেশি হয়েছেন।
অথচ দীর্ঘদিন ধরে পুলিশের পদোন্নতি আটকে রয়েছে। পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ও ঢাকা জেলার এসপি মো. আসাদুজ্জামান অর্থভুবনকে বলেন, ‘পুলিশ সদর দপ্তর থেকে যে ৫২৯ জনের পদোন্নতির তালিকাটা গেছে সেটা নির্বাচন উপলক্ষে না। বয়স, ব্যাচ ও বাস্তবতার ভিত্তিতে এই তালিকা হয়েছে। পাশাপাশি শূন্য পদ পূরণের জন্য পুলিশ তালিকা পাঠিয়েছে। আমাদের প্রস্তাবিত পদোন্নতি দেওয়া হলে এখানে জট দূর হবে। পাশাপাশি কাজের স্পৃহা বাড়বে। জনগণ এর সুফল পাবে। পুলিশে ক্ষোভ হতাশা দূর হবে। পুলিশ সার্ভিসে ১৭তম ব্যাচের মাত্র একজন অতিরিক্ত আইজিপি হিসেবে পদোন্নতি পেয়েছেন। অথচ প্রশাসন ক্যাডারে ১৭ ব্যাচের প্রায় সবাই অতিরিক্ত সচিব হিসেবে গ্রেড-২তে পদোন্নতি পেয়েছেন। আমরা কারো সঙ্গে তুলনা করছি না, নিজেদের ন্যায্য দাবি থেকে এটা করেছি। আমরা আশা করছি, সরকার দ্রুতই ইতিবাচক সিদ্ধান্ত দেবেন।’
পুলিশ সদর দপ্তর থেকে পদোন্নতির যে তালিকা পাঠানো হয়েছে, তার মধ্যে ১৫ জনকে অতিরিক্ত আইজিপি হিসেবে পদোন্নতি দিয়ে গ্রেড-১ দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। পাশাপাশি ৩৪ জনকে অতিরিক্ত আইজিপি হিসেবে পদোন্নতি দিয়ে গ্রেড-২ দেওয়ার প্রস্তাব রয়েছে। এছাড়া ১৪০ জনকে ডিআইজি, ১৫০ জনকে অতিরিক্ত ডিআইজি ও ১৯০ জনকে এসপি হিসেবে পদোন্নতির প্রস্তাব বর্তমানে জনপ্রশাসনে রয়েছে।
পুলিশের সাবেক একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘কোনো ক্যাডারে যদি দ্রুত পদোন্নতি হয়, আর অন্য ক্যাডারে যদি পদোন্নতি হতে বিলম্ব হয় তাহলে মেধাবী ছাত্ররা যেখানে পদোন্নতি দ্রুত হয় সেখানেই যাবে। এতে অন্য ক্যাডারগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হবে। যেমন প্রশাসন ক্যাডারে দ্রুত পদোন্নতি হয়, অথচ দেখেন তথ্য ক্যাডারের কী অবস্থা? একই বিসিএসে ঢোকার পর কোনো ক্যাডারে কেউ সচিব, কোনো ক্যাডারে কেউ উপসচিব। এই ধরনের বৈষম্য থাকা উচিত নয়। কারো কাজ হয়তো সরকারের ঊর্ধ্বতনদের সঙ্গে সরাসরি। কেউ হয়তো ঐ পর্যন্ত পৌঁছতেই পারে না। দায়িত্বশীলদের উচিত হবে দ্রুতই এই ধরনের বৈষম্যের নিরসন করা।’
দায়িত্বশীলদের অনেকেই বলছেন, ‘সব ক্যাডারের পদোন্নতির দায়িত্ব প্রশাসন ক্যাডারের হাতে। এটা তো হওয়া উচিত না। এখানে বিচার বিভাগের নেতৃত্বে একটা পদোন্নতি কমিটি থাকতে পারে। অথবা সব ক্যাডারের সমন্বয়েও একটা কমিটি হতে পারে। তাহলে সেখানে সব ক্যাডারের কর্মকর্তাদের পক্ষে কথা বলার সুযোগ থাকবে। তা না হলে এই ধরনের বৈষম্য থেকেই যাবে। নিজেদের পদোন্নতি তো যে কেউ আগে করে নেবেন। এটা ঠিক না। তবে এখন যেটা করা হচ্ছে, সেটা অনুচিত। মহাকাশ গবেষণায় পাঠানো হচ্ছে প্রশাসন ক্যাডারের লোকজনকে। আবার যেখানে ডাক্তার থাকার কথা সেখানেও পাঠানো হচ্ছে প্রশাসন ক্যাডারকে। এটা তো ঠিক না। তাদের এত পদোন্নতি হয়েছে যে, আসলে বসানোর কোনো জায়গা নেই।’
পুলিশের মহাপরিদর্শক চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন অর্থভুবনকে বলেন, ‘আমরা প্রস্তাব দিয়েছি, সেটা মন্ত্রণালয়ে আছে। আমরা আশা করছি, দ্রুতই এটা হয়ে যাবে। তবে এ কারণে যে পুলিশের মধ্যে ক্ষোভ আছে সেটা আমার জানা নেই।’