অর্থভুবন প্রতিবেদক
বহুমুখী চাপে আছে শেয়ারবাজার। মূল সমস্যা হলো ব্যাংকিং খাতে তারল্য সংকট। এরপর ডলারের দাম বৃদ্ধি, উচ্চ মূল্যস্ফীতি, মানুষের ক্রয়ক্ষমতা ও সঞ্চয় কমে যাওয়া, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি এবং জাতীয় নির্বাচনসহ বেশ কিছু ইস্যু বাজারের জন্য অস্বাভাবিক পরিস্থিতি তৈরি করছে। তবে এত চ্যালেঞ্জের মধ্যেও বিনিয়োগকারীদের পুঁজির নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দিচ্ছি। অস্বাভাবিক পরিস্থিতি ঠেকাতে দেওয়া হয়েছে ফ্লোর প্রাইস। বাজার সংশ্লিষ্টরা সরকারের কাছে যেসব নীতি সহায়তা চেয়েছিল, তার সবকিছুই দেওয়া হয়েছে। তবে নির্ধারিত সময়ে ফ্লোর প্রাইস তুলে নেওয়া হবে। অর্থভুবনের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান প্রফেসর শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম এসব কথা বলেন। সাক্ষাৎকারটি সংক্ষিপ্ত আকারে নিচে দেওয়া হলো-
প্রশ্ন : বাজারের বর্তমান পরিস্থিতিকে আপনি কীভাবে মূল্যায়ন করছেন?
উত্তর : বর্তমানে বাজারে মূল সমস্যা ব্যাংকিং খাতে তারল্য সংকট। যে কারণে ব্যাংকগুলোও তার মূলধনের ২৫ শতাংশ বিনিয়োগ করতে পারছে না। ব্যাংকগুলো তাদের ব্যবসায়িক কাজে কিছু তহবিল তুলে নিয়েছে। বাজারে এর প্রভাব পড়েছে। এছাড়া মার্কিন ডলারের দাম বৃদ্ধির কারণে পণ্যের উৎপাদন খরচ বেড়েছে। এতে মূল্যস্ফীতি বাড়ছে। মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমছে। সঞ্চয়ের হারও কমে যাচ্ছে। বড় ব্যবসায়ীদের টাকাও বিভিন্ন কারণে চলে যাচ্ছে অন্যদিকে। এই সুযোগে শেয়ারবাজারের বিনিয়োগকারীদের একটি অংশও ডলার কেনাবেচায় মনোযোগ দিয়েছে। এর সবকিছুই বাজারের ওপর চাপ তৈরি করেছে। আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর স্বাভাবিক সময় পাইনি। করোনার সময় অনেক যুদ্ধ করে সূচক ৭ হাজার পয়েন্টে নেওয়া হয়েছিল। এরপর শুরু হলো ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ। পরে সূচক সাড়ে ৬ হাজার উন্নীত হওয়ার পর চলে এসেছে নির্বাচনি উত্তাপ। তবে শেয়ারবাজার সংশ্লিষ্টদের যত চাহিদা ছিল, সবই পূরণ করে দেওয়া হয়েছে। এখন মার্চেন্ট ব্যাংক ও ব্রোকারেজ হাউজগুলোকে যখন জিজ্ঞাসা করি, সরকারের কাছে নীতিনির্ধারণী সাপোর্ট আর কী দরকার? তারা কিন্তু কিছুই বলতে পারে না। কারণ তাদের সব দাবিই পূরণ করা হয়েছে।
প্রশ্ন : বিভিন্ন জায়গায় বলা হচ্ছে, বাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা সংকট রয়েছে।
উত্তর : আস্থা বলতে সবাই সেকেন্ডারি মার্কেটকে বোঝাচ্ছে। এখানেই আমার আপত্তি। কারণ পুঁজিবাজার বিশাল খাত। এখানে প্রাইমারি মার্কেট, বন্ড, মিউচুয়াল ফান্ড, সরকারের ট্রেজারি বন্ড এবং ডেরিভেটিভসসহ আরও প্রডাক্ট আছে। সেখানে আস্থা সংকটের কোনো কারণ নেই। আর সেকেন্ডারি মার্কেট হলো এক্সিট রোড বা বের হওয়ার রাস্তা। অনেক কিছুর ওপর নির্ভর করে এখানে বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ারের দাম ওঠানামা করে। এর মধ্যে অর্থনৈতিক অবস্থা, যুদ্ধ, করোনা এবং যে কোনো অস্বাভাবিক পরিস্থিতি এই বাজারকে প্রভাবিত করে।
প্রশ্ন : বাজারের সম্ভাবনা নিয়ে বিনিয়োগকারীদের কী বার্তা দেবেন?
উত্তর : এই বাজারে সম্ভাবনা বিশাল। বাজারমূলধন সোয়া তিন লাখ কোটি টাকা থেকে প্রায় ৮ লাখ কোটি টাকায় চলে গেছে। লভ্যাংশের হার বাড়ছে। বাজারে বড় অস্থিতিশীলতা বন্ধ হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী আমাদের বলেছেন, মানুষের পুঁজির নিরাপত্তা দিতে হবে। এই নিরাপত্তা না দিতে পারলে আস্থা থাকে না। এর আগেও মানুষের পুঁজি চলে গিয়েছিল। এজন্য এই বাজার দেখলে মানুষ ভয় পায়। এজন্যই আমরা পুঁজির নিরাপত্তায় কাজ করছি। আমি নিশ্চিত করে বলছি, যে কোনোভাবে বিনিয়োগকারীদের পুঁজিকে বাঁচাব।
প্রশ্ন : বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ফ্লোর প্রাইস বাজারে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছে।
উত্তর : আমরাও ফ্লোর প্রাইস তুলে দিতে চাচ্ছি। কারণ এটি বাজারের জন্য স্বাভাবিক পরিস্থিতি নয়। আমরা যথাসময়ে ফ্লোর প্রাইস তুলে নেব। এটার জন্য একটি স্থিতিশীল পরিবেশ দরকার। এটি যখন নিশ্চিত তবে, তখন এক ঘণ্টার মধ্যে এটি তুলে দেব।
প্রশ্ন : আপনার বিরুদ্ধেও অভিযোগ এসেছে, বিদেশ থেকে আপনার অ্যাকাউন্টে টাকা এসেছে?
উত্তর : সাভারে আমার একটি পৈতৃক সম্পত্তি একজনের কাছে ভাড়া দিয়েছি। তিনি এখানে নির্মাণের কাজ করবে। তিন বছর আগে ওই ভাড়াটিয়া আমার অ্যাকাউন্টে ভাড়ার টাকা পাঠিয়েছেন। এই টাকা প্রোপার চ্যানেলে দেশের সব আইন মেনে অ্যাকাউন্টে এসেছে। এজন্য আমি কর পরিশোধ করেছি। এরপরও একজন মানুষকে এভাবে হয়রানির শিকার হতে হবে, যা আমি কল্পনা করিনি। যখন বুঝতে পেরেছি, এখানে কিছু সমস্যা আছে। আমি টাকাটা আদালতে জমা দিয়েছি। আদালত সিদ্ধান্ত নেবে ওই টাকা কে পাবে। আমি দুর্নীতি করলে নিশ্চয়ই টাকা আমার নিজের অ্যাকাউন্টে আসার কথা নয়। ফলে আপনারা আমাকে এভাবে অপমান করার কোনো মানে হয় না। এতে নতুন করে আর কেউ দেশে রেমিট্যান্স আনতে চাইবে না।
প্রশ্ন : ইব্রাহিম খালেদের রিপোর্টে বাজারে কারসাজির তথ্য এসেছে, এর সর্বশেষ অবস্থা কী?
উত্তর : ওই রিপোর্টের পর আমরা কাজ করছি। কিছু কোম্পানির ব্যাপারে অধিকতর তদন্ত হয়েছে। কয়েকটি মামলাও হয়েছে। এগুলো আদালতে চলমান। আমরা সাধারণ বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষা করছি। ফলে কারসাজির সুনির্দিষ্ট তথ্য পেলে আমরা কোনো আপস করব না।