তালুকদার রিফাত পাশা
ঢাকা মহানগরী প্রতিদিনই শব্দ অথবা বায়ুদূষণে বিশ্বের প্রথম পাঁচটি শহরের মাঝে থাকে। ঢাকার বায়ু ও শব্দদূষণ নিয়ে অনেক গবেষণা নিবন্ধ লেখা হয়েছে। সেসব গবেষণায় শব্দ ও বায়ুদূষণের নানা কারণ চিহ্নিত হয়েছে। তবে একটা কারণ দুটি সমস্যার ক্ষেত্রেই পাওয়া গেছে, আর সেটা হলো যান্ত্রিক যান। গবেষণা বলছে, ঢাকার তীব্র শব্দদূষণের জন্য প্রধানত দায়ী যান্ত্রিক যান। অপরদিকে বায়ুদূষণের ক্ষেত্রেও যান্ত্রিক যানের রয়েছে বড় অবদান। দূষণের ১০ শতাংশ হয়ে থাকে যান্ত্রিক যানের ধোঁয়া থেকে।
বায়ু ও শব্দদূষণের জন্য যে যান্ত্রিক যান দায়ী এটি প্রমাণিত। কিন্তু এ কারণটি নির্মূল করার জন্য কোনো কার্যকর পদক্ষেপ আজ পর্যন্ত গ্রহণ করা হয়নি। উলটো ঢাকা মহানগরীতে যান্ত্রিক যানের ব্যবহার বেড়েই চলেছে। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহণ কর্তৃপক্ষের ২০১৯ সালের হিসাব বলছে, প্রতিদিন ঢাকায় ৫৫টি করে ব্যক্তিগত গাড়ি রাস্তায় নামছে। আর রাইড শেয়ারিংয়ের সুযোগ থাকায় এবং দ্রুত কোথাও যাওয়া যায় বলে মোটরসাইকেলের ব্যবহার উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে।
শব্দ ও বায়ুদূষণ সমস্যার সমাধানের কথা যখনই ভাবা হয়, তখনই আমাদের মাথায় আসে সাধারণ মানুষকে সচেতন করার বিষয়টি। যান্ত্রিক যানসৃষ্ট শব্দ ও বায়ুদূষণ দূর করতে হলে আমাদের যথাযথ নীতি ও পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করতে হবে। ঢাকার শব্দ ও বায়ুদূষণের একটি ভালো ও টেকসই সমাধান হতে পারে বাইসাইকেলের ব্যবহার। বর্তমানে ঢাকায় কত মানুষ সাইকেল ব্যবহার করে তার কোনো হিসাব নেই। তবে বিশেষজ্ঞ ও সাইকেল ব্যবসার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের মতে, দেশে প্রতিবছর ২০ লাখ সাইকেলের চাহিদা আছে এবং প্রতিবছর গড়ে ৮ থেকে ১০ শতাংশ হারে এর চাহিদা বাড়ছে। সাইকেলের চাহিদা যতই বাড়ুক না কেন, ঢাকার রাস্তায় সাইকেল চালানোর মতো পরিবেশ নেই। সাইকেল চালকরা প্রতিনিয়ত জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলে। সাইকেল চালনা আরও বাড়ানোর জন্য কিছু পদক্ষেপ দ্রুত নিতে হবে। প্রথমত, সাইকেল চালকদের জন্য পৃথক লেন তৈরি করতে হবে। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে মানিক মিয়া এভিনিউ ও আগারগাঁয় দুটি সাইকেল লেন তৈরি করা হয়েছিল, কিন্তু তা টিকিয়ে রাখা যায়নি। এখন ওই দুটি লেনে ব্যক্তিগত গাড়ি পার্ক করে রাখা হয়। এ দুটি লেন আবার সাইকেল চালকদের জন্য উম্মুক্ত করতে হবে। পাশাপাশি আরও নতুন লেন তৈরি করতে হবে। সাধারণ মানুষ সাইকেল চালাতে চায়, কিন্তু পরিবেশবান্ধব এ বাহনটির উচ্চমূল্যের কারণে কিনতে পারে না। বর্তমানে একটি ভালো মানের সাইকেলের পেছনে ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা খরচ করতে হয়। আমাদের দেশে বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান খুব ভালো মানের বাইসাইকেল তৈরি করছে এবং তারা সেগুলো রপ্তানি করছে বিভিন্ন দেশে। কিন্তু পরিতাপের বিষয় হলো, সাইকেলের খুচরা যন্ত্রাংশের ওপর ৫৮ শতাংশ শুল্ক ধার্য করা আছে। উপরন্তু ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের বাজেটে সাইকেলের ওপর আরোপিত মূল্য সংযোজন কর ১০ থেকে ১৫ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। সাইকেলের ব্যবহার বাড়াতে হলে অবশ্যই এর দাম সাধারণ মানুষের নাগালে আনতে হবে। তাই উৎপাদন পর্যায়ে খুচরা যন্ত্রাংশের ওপর যে আমদানি কর এবং মূল্য সংযোজন কর আছে, তা কমাতে হবে। ইউরোপের বিভিন্ন দেশে ভাড়াভিত্তিক সাইকেল সেবার ব্যবস্থা আছে। ঢাকায় এরকম প্রতিটি এলাকায় সাইকেল ভাড়া নেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। এরকম উদ্যোগ সরকারি-বেসরকারি উভয় পর্যায় থেকে নেওয়া যেতে পারে।
তালুকদার রিফাত পাশা : পলিসি কর্মকর্তা, ইনস্টিটিউট অব ওয়েলবিং বাংলাদেশ
rifatir2@gmail.com