চট্টগ্রাম ব্যুরো
চট্টগ্রাম বন্দর আগামী তিন থেকে পাঁচ বছরের মধ্যে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে বড় ভূমিকা রাখবে বলে জানিয়েছেন সংস্থার প্রধান রিয়ার অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ সোহায়েল। কক্সবাজার জেলার মহেশখালীতে মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর, বে-টার্মিনালসহ চলমান উন্নয়ন প্রকল্প ও বন্দরের সক্ষমতা বাড়ানোর নানা উদ্যোগের চিত্র তুলে ধরে তিনি বলেন, এই বন্দরের মাধ্যমে দেশের সব সমস্যার সমাধান করা যাবে। বন্দরের ব্যাপক উন্নয়নে আমরা কাজ করছি।
বন্দরের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত এক মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন। বন্দরের সামগ্রিক উন্নয়ন কার্যক্রম ও সমসাময়িক বিষয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে এ সভার আয়োজন করে বন্দর কর্তৃপক্ষ।
মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দরের প্রথম টার্মিনাল নির্মাণের টেন্ডার আহ্বান করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, চলতি বছরেই প্রথম টার্মিনাল নির্মাণ কাজ শুরুর পরিকল্পনা আছে। সেখানে ১৮ মিটার গভীরতার বড় জাহাজ ভিড়তে পারবে। পুরো বিশ^ চট্টগ্রাম বন্দরের দিকে তাকিয়ে আছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিশে^র বিভিন্ন দেশ এখানে বিনিয়োগ করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। আন্তর্জাতিক অনেক পোর্ট এখানে আসতে চায়। ডেনমার্ক একটি টার্মিমাল নির্মাণের প্রস্তাব দিয়েছে। লালদিয়ার চরে আমরা হয়তো তাদের সঙ্গে একটি টার্মিনাল নির্মাণ করব। বিশে^র কাছে চট্টগ্রাম বন্দর একটি আধুনিক বন্দর হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। বন্দর ঘিরে ৫ থেকে ৭ বিলিয়ন
ডলার বিনিয়োগের সম্ভাবনা রয়েছে।
সক্ষমতার পালকে পতেঙ্গা কনটেইনার যুক্ত হয়েছে জানিয়ে বন্দর চেয়ারম্যান বলেন, সক্ষমতা বাড়ানোর পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ২০২২ সালে পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল (পিসিটি) প্রকল্পের কাজ শেষ হয়। বন্দরের এক হাজার ২২৯ কোটি টাকা ব্যয়ে টার্মিনালে তিনটি জেটি ও একটি তেল খালাসের বিশেষায়িত জেটি রয়েছে। বছরে প্রায় ৪ লাখ টিইইউএস কনটেইনার হ্যান্ডলিং করতে সক্ষম এই টার্মিনাল।
সভায় জানানো হয়, ২০২২-২০২৩ সালে দুটি ৫০ টন ক্ষমতাসম্পন্ন মোবাইল ক্রেন, দুটি ১০০ টনের মোবাইল ক্রেন, ৬টি রবার টায়ার গ্যান্ট্রি ক্রেন ও ৪টি কী গ্যান্ট্রি ক্রেন এবং দুটি কনটেইনার মোভার যুক্ত হয়েছে। প্রায় ৯১৪ কোটি টাকা ব্যয়ে ১০৪টি যন্ত্রপাতি সংগ্রহের প্রকল্প চলমান। বন্দরের সক্ষমতা বাড়াতে ৬ লাখ বর্গমিটার ইয়ার্ড নির্মাণ করা হয়েছে। ফলে ৪৯ হাজার ১৮ টিইইউসের স্থলে বর্তমানে ৫৩ হাজার ৫১৮ টিইইউস কনটেইনার রাখা যাচ্ছে। পতেঙ্গা লালদিয়ার চর থেকে উদ্ধারকৃত ৫২ একর জায়গায় কনটেইনার ইয়ার্ড নির্মাণের পরিকল্পনা, কেমিক্যাল শেড তৈরি করা হচ্ছে।
বে-টার্মিনালের কাজ এগিয়ে চলেছে জানিয়ে বন্দর চেয়ারম্যান বলেন, বে-টার্মিনালের মাস্টারপ্ল্যানের চূড়ান্ত নকশা আগামী মাসের মাঝামাঝি হাতে পাব। চ্যানেল ও ব্রেক ওয়াটারের নকশার কাজ চলছে। খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে টার্মিনাল নির্মাণের কাজ শুরু করতে পারব।
কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ে চট্টগ্রাম বন্দর প্রতিবছর নতুন নতুন রেকর্ড তৈরি করলেও করোনা ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সে ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে পারেনি। তবে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব চট্টগ্রাম বন্দরে খুব বেশি পড়েনি দাবি করে এম সোহায়েল বলেন, ‘আমাদের আমদানি-রপ্তানি স্বাভাবিক রয়েছে। বন্দর একটি জাতির জন্য বড় সম্পদ। একটি বন্দরের কারণে দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বদলে যায়। আধুনিক বন্দর হিসেবে গড়ে তুলতে আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছি। বন্দরের শ্রমিক-কর্মচারীদের দক্ষতা বেড়েছে। তাই সক্ষমতার চেয়ে আরও ৩০ শতাংশ বেশি হ্যান্ডল করতে পারছি। এই বন্দরের কার্যক্রম, জনবলের দক্ষতা ও সুমান বিশে^ ছড়িয়ে পড়েছে।’
সভায় জানানো হয়, ১০ মিটার গভীর ও ২০০ মিটার লম্বা জাহাজ বন্দরে ভিড়ছে। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে বন্দর জেটিতে ১০ মিটার গভীর ও ২০০ মিটার লম্বা জাহাজ ভেড়ানোর মধ্য দিয়ে নতুন মাইলফলক অর্জন করে। এতে অপেক্ষাকৃত বড় ও বেশি ধারণক্ষমতার জাহাজ আসার সুযোগ হয়েছে; ফলে পরিবহন ব্যয় সাশ্রয়ের পথ তৈরি হয়েছে।
পিসিটি পরিচালনার দায়িত্ব বিদেশিদের হাতে দেওয়া হবে জানিয়ে বন্দর চেয়ারম্যান বলেন, বিশে^র উন্নত দেশের বন্দরগুলো যে নিয়মে পরিচালিত হয়, আমরাও সেভাবে পরিচালনা করব। বিদেশি নিয়োগ হলে আমাদের দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন হবে। নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল (এনসিটি) বর্তমানে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করছে। সেটিও বিদেশি অপারেটরদের দেওয়া হবে। তবে এ বিষয়ে এখনো কোনো কার্যক্রম শুরু হয়নি।