অর্থভুবন প্রতিবেদক
রুই, কাতলা, পাবদা, সিং, মাগুর, কৈ। নাটোরের গুরুদাসপুরে সবই চাষ হচ্ছে বাণিজ্যিক পুকুরে। স্বাদ এবং পুষ্টিগুণ ভালো হওয়ায় দেশের গ-ি পেরিয়ে এখানকার মাছ রপ্তানি হচ্ছে ভারতের বাজারেও। দেশ-বিদেশের বাজারে মাছ বিক্রি করে লাভবান হওয়ায় বাড়ছে চাষির সংখ্যা।
সরকারি ও বেসরকারি জরিপ মতে, গুরুদাসপুরে বাণিজ্যিকভাবে পুকুরে চাষ করা কার্প এবং মিশ্র প্রজাতির ২০ হাজার টন মাছ বিক্রি করে গত বছর এসেছে প্রায় ৬০০ কোটি টাকার বেশি। চলতি বছর সরকারিভাবে মাছের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে সাড়ে ১৬ হাজার টন।
গুরুদাসপুর মৎস্য অফিসের তথ্যমতে- ২০২০ থেকে ২৩ সাল পর্যন্ত ৬ হাজার হেক্টর আয়তনের চাষযোগ্য বাণিজ্যিক পুকুর ছিল ১০ হাজারের বেশি। এসব পুকুর থেকে ২০২২-২৩ অর্থবছরে মাছ উৎপাদন হয়েছে প্রায় ১৪ হাজার টন। তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকারি এ হিসাবের তুলনায় বর্তমানে উপজেলায় বাণিজ্যিক পুকুরের সংখ্যা এবং উৎপাদনের পরিমাণ আরও বেশি। এ ছাড়া ৯টি প্রবাহমান নদী, ৩টি খাল, ৬টি বিল থেকে বছরে প্রায় ১শ টন এবং ৩০টি প্লাবন ভূমি থেকে ১ হাজার ১৬ টন ও অন্যান্য জলাশয় থেকে ২শ টন মাছ উৎপাদন হয়েছে। সব মিলিয়ে বছরে মাছ উৎপাদন হয়েছে ১৫ হাজার টনেরও বেশি। খাল-বিল, নদী, জলাশয়ের মাছ উপজেলার অভ্যন্তরে বাজারজাত করা হয়। এ ছাড়া চাষের উৎপাদিত সব মাছই সারাদেশের অভ্যন্তরের বিভিন্ন আড়তে বিক্রি করা হয়। চলতি বছর মাছের উৎপাদন আরও বাড়বে বলবে আশা অধিদপ্তরের।
জানা যায়, মৎস্য দপ্তর থেকে গৃহীত পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় ২০২১-২২ নাগাদ মাছের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল সাড়ে ১৬ হাজার টন। কিন্তু বেসরকারি মাঠ জরিপে ২০২১-২২ সাল নাগাদ প্রকৃত উৎপাদন ২০ হাজার টন ছাড়িয়ে গেছে।
মাছ চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়- রুই, কাতলা, মৃগেল, কালবাউশ, সিলভার কার্প, ব্রিগেড, গ্লাসকার্প, ব্লাককার্প জাতের মাছ চাষ হয়। একইসঙ্গে প্রতিটি পুকুরে নিবিড় এবং আধা নিবিড় দুই পদ্ধতিতে মিশ্র হিসেবে কই, সিং, পাবদা, গুলসা-টেংড়াসহ বেশ কয়েক প্রজাতির মাছ চাষ করা হয়। এর মধ্যে মিশ্র প্রজাতির সুস্বাদু পাবদা, সিং, পাঙ্গাস মাছ ভারতে রপ্তানি করছেন চাষিরা। বিদেশে মাছ রপ্তানি করা চাষি আবদুস সালাম বলেন, পার্শ্ববর্তী
দেশ ভারতে আমাদের অঞ্চলের মাছের কদর ব্যাপক। এ কারণে নিয়মিতই পাবদা, সিং ও পাঙ্গাস মাছ ভারতের বাজারে বিক্রি করি। এতে আমি লাভবান হচ্ছি। আগামীতে অন্যান্য প্রজাতির মাছও রপ্তানি করতে চাই।
মাছচাষি রুহুল আমিন মোল্লা জানান, তারা পোনা মাছ চাষ করেন না। ন্যূনতম এক কেজির ওপরে কার্প প্রাজাতির মাছ ছাড়া হয়। ৬ থেকে ৮ মাস মেয়াদের মধ্যেই মাছগুলো আড়াই কেজি থেকে সাড়ে ৪ কেজি পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়। আকার ভেদে এসব মাছের পাইকারি বাজার দর ১৫০ টাকা থেকে ৩৫০ টাকা কেজি।
চাপিলার মাছচাষি শিশির আলী জানান, গুরুদাসপুরের সঙ্গে সারাদেশেরই সড়ক যোগাযোগ সহজ। ফলে চৌবাচ্চা পদ্ধতিতে ট্রাকে করে জীবন্ত মাছ রাজধানীসহ দেশের অভ্যন্তরের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করেন তারা। সরাসরি দূরের আড়তে মাছ বিক্রি করতে পেরে বেশি লাভবান হচ্ছেন তারা।
চলনবিল ও জলবায়ু রক্ষা কমিটির সদস্য সহকারী অধ্যাপক সাজেদুর রহমান জানান, দখল-দূষণের ফলে চলনবিলে কমেছে প্রাকৃতিক জলাধার। ফলে আশঙ্কাশজনক হারে কমেছে মিঠাপানির মাছ। তবে সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে গড়ে উঠেছে মাছ চাষের পুকুর। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে বাণিজ্যিকভাবে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করা হচ্ছে চাষের মাছ। এমনকি বিদেশেও রপ্তানি করা হচ্ছে।
গুরুদাসপুরের উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা রতন চন্দ্র সাহা বলেন, উপজেলাজুড়ে বছরে মাছের চাহিদা সাড়ে চার হাজার টন। চাহিদার তুলনায় গুরুদাসপুরে মাছ উৎপাদন হচ্ছে প্রায় তিনগুণ বেশি। বিদেশে মাছ রপ্তানি করতে পেরে ব্যাপক লাভবান হচ্ছেন চাষিরা। এ উপজেলা থেকে আগামী বছর আরও বেশি মাছ রপ্তানি হবে বলে আমরা আশা করছি।