মাত্র ১৩ প্রতিষ্ঠানের কাছে রীতিমতো জিম্মি হয়ে পড়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংক। এসব প্রতিষ্ঠান ব্যাংকটির মোট ঋণের প্রায় ৩৫ শতাংশ তুলে নিয়েছে। এদের মধ্যে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান যেমন প্রভাব-প্রতিপত্তির জোরে ঋণের দায় শোধ করছে না, তেমনি সরকারি প্রতিষ্ঠানও সমানভাবে বড় অঙ্কের ঋণের টাকা আটকে রেখে সোনালী ব্যাংকের আর্থিক সক্ষমতাকে দুর্বল করে তুলেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, এই ১৩ গ্রাহকের কাছে আটকে আছে সোনালী ব্যাংকের ২৯ হাজার ৪৩৮ কোটি টাকার ঋণ। তালিকায় বহুল আলোচিত হল-মার্ক ও থার্মেক্স গ্রুপ যেমন আছে, তেমনি আছে বেসরকারি খাতের টি অ্যান্ড ব্রাদার্স গ্রুপ ও ব্র্যাক। এ ছাড়া আছে সরকারি প্রতিষ্ঠান খাদ্য অধিদপ্তর (ডিজিএফ), বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস, পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষ, সোনালী ব্যাংক ইউকে লিমিটেড, বাংলাদেশ রাসায়নিক শিল্প করপোরেশন (বিসিআইসি), বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি), বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (বিডব্লিউডিবি), বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্যশিল্প করপোরেশনের (বিএসএফআইসি) ও ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)। এসব প্রতিষ্ঠানের নেওয়া ঋণের মধ্যে প্রায় ২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা খেলাপির খাতায় নাম লিখিয়েছে। কেলেঙ্কারি আর অনিয়মের মাধ্যমে নেওয়া বড় অঙ্কের ঋণ ফেরত পাওয়া যাবে, সে আশাও ক্ষীণ।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, দেশের শীর্ষ সরকারি সোনালী ব্যাংক বড়দের ঋণ দিয়ে এখন অনেকটাই বিপর্যয়ের মুখে। এসব ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে ঠিকমতো যাচাই-বাছাই করা হয়নি। যার ফলে বড় অঙ্কের ঋণ অনাদায়ি হয়ে পড়ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, ব্যাংকটির গত ডিসেম্বর পর্যন্ত মোট বিতরণকৃত ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৭৭ হাজার ৭৯৭ কাটি টাকা। তার মধ্যে মাত্র ১৩টি প্রতিষ্ঠানকে দেওয়া ঋণের পরিমাণ ২৯ হাজার ৪৩৮ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে, যা মোট বিতরণকৃত ঋণের পরিমাণের ৩৪ দশমিক ৮০ শতাংশ।
তার মধ্যে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ২ হাজার ৪৭২ কোটি ৫৩ লাখ ৫৪ হাজার। ঋণের অবশিষ্ট অর্থ ব্যাংকের কাছ থেকে বিশেষ ছাড়ে ও নানা কৌশলে পুনঃতফসিল করা হয়েছে, যা মূলত ব্যাংকের খাতায় অনাদায়ি অর্থ। সোনালী ব্যাংকে পুনঃতফসিলের সময় যে এককালীন পাওনা পরিশোধের কথা সেটিও আদায় হয়নি বলে ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছে।