মো. নাঈমুর রহমান
মো. নাঈমুর রহমান ৪১তম বিসিএসে প্রশাসন ক্যাডারে প্রথম হয়েছেন। তাঁর জন্ম সিরাজগঞ্জ জেলায় হলেও বেড়ে ওঠা চট্টগ্রামে। তিনি চট্টগ্রামের টিকিট প্রিন্টিং প্রেস কলোনি হাইস্কুল থেকে এসএসসি এবং সরকারি কমার্স কলেজ, চট্টগ্রাম থেকে এইচএসসি পাস করেন। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস বিভাগ থেকে বিবিএ ও এমবিএ করেন। পড়াশোনা শেষে একটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে বিজনেস টিচার হিসেবে চার মাস চাকরি করেন। এরপর ম্যানেজমেন্ট ট্রেইনি হিসেবে তিন মাস চাকরি করেন একটি বেসরকারি ব্যাংকে। ২০১৯ সালের ডিসেম্বর থেকে রাষ্ট্রায়ত্ত উন্নয়ন সংস্থা পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশনে (পিকেএসএফ) সহকারী ব্যবস্থাপক হিসেবে চাকরি করেন। পাশাপাশি চলতে থাকে বিসিএসের প্রস্তুতি। সবশেষে ৪১তম বিসিএসের প্রশাসন ক্যাডারে প্রথম হয়ে পূরণ হয় তাঁর স্বপ্ন। তাঁকে নিয়ে থাকছে আজকের আলোচনা।
প্রথম হওয়ার অনুভূতি
৪১তম বিসিএসে প্রশাসন ক্যাডার ছিল আমার প্রথম পছন্দ। তাই প্রশাসন ক্যাডার পাব, সেই আশা ছিল। কিন্তু একেবারে প্রথম হব, এভাবে কখনো ভাবিনি। ফল প্রকাশের পর শুরুতে নিজের রোল দেখে তখন কিছুটা বিস্ময় কাজ করেছে! আমার একজন সহকর্মীকে রোল মিলিয়ে দেখতে বলেছিলাম। প্রথম হওয়ার পর, পরম করুণাময় আল্লাহর প্রশংসা জ্ঞাপন করেছি। প্রথম হওয়ায় অনেক আনন্দিত।
শুরুর পথচলা
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বা দ্বিতীয় বর্ষ থেকেই বিসিএস দেওয়ার স্বপ্নটা মনে স্থান পায়। আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে থাকতাম। হলের সিনিয়র ভাইয়েরা দিন-রাত লাইব্রেরিতে চাকরির পড়াশোনা করতেন। তখন হলের অনেক বড় ভাইকে বিসিএস ক্যাডার হতে দেখেছি। এর একটা প্রভাব হয়তো ছিল। তবে আমি চতুর্থ বর্ষের পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর বিসিএস ও অন্যান্য চাকরির জন্য পড়াশোনা শুরু করি।
যেভাবে প্রস্তুতি নিয়েছি
আমি ২০১৯ সালে সরকারি উন্নয়ন সংস্থায় যোগ দিই। সেখানে আমি কর্মরত ছিলাম সহকারী ব্যবস্থাপক পদে। চাকরির পাশাপাশি বিসিএসের প্রস্তুতি নিয়েছিলাম। দিনে চাকরি করে রাতে বাসায় গিয়ে পড়েছি। প্রথম দিকে পড়তে কষ্ট হলেও ধীরে ধীরে মানিয়ে নিয়েছি। যতটুকু সময় পেতাম, তা সর্বোচ্চ কাজে লাগানোর চেষ্টা করেছি। এ ছাড়া শুক্র-শনিবার কোনো কাজ না থাকলে হয়তো দিনেও কিছুটা সময় পেয়েছি পড়ার জন্য। শুক্র-শনি এবং অন্যান্য ছুটির দিনে বেশি সময় পড়তে চেষ্টা করেছি। প্রস্তুতিতে প্রতিদিনই গণিত, ভোকাবুলারি ও পত্রিকা পড়া হতো। একটা বিষয় শেষ করে আরেকটা বিষয় পড়া শুরু করতাম। পরীক্ষার আগে গুরুত্বপূর্ণ ও আলোচিত বিষয় পড়তাম। ৪১তম বিসিএস ছিল জীবনের তৃতীয় বিসিএস পরীক্ষা। এর আগে ৩৮তম বিসিএসে নন-ক্যাডারে উত্তীর্ণ হয়ে মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরে নবম গ্রেডে সহকারী পরিচালক পদে চাকরি পেয়েছিলাম। ৪০তম বিসিএসে প্রিলিমিনারিতে উত্তীর্ণ হয়েও অসুস্থতার কারণে লিখিত পরীক্ষায় অংশ নিতে পারিনি। ৪১তম বিসিএসে প্রশাসন ক্যাডারে প্রথম হলাম।
যাঁদের অনুপ্রেরণা পেয়েছি
বিসিএসের জন্য বাবা-মা, বোন, বন্ধুরা, চাকরিতে থাকা সহকর্মী এবং ব্যাচমেটরা সব সময় অনুপ্রেরণা দিয়েছেন। তাঁদের অনেক সহযোগিতা পেয়েছি।
নতুনদের বিসিএস পরামর্শ
বিসিএস পরীক্ষা একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়া। তাই নতুন যাঁরা বিসিএসে আসতে চান, ধৈর্য গুণটি তাঁদের জন্য জরুরি। বিসিএস পরীক্ষায় আপনি উত্তীর্ণ হবেন, এই স্বপ্ন থাকতে হবে। হাল না ছাড়ার মানসিকতা থাকতে হবে। পথচ্যুত হওয়া যাবে না। সব বিষয়ে কেউই সমান দক্ষ নয়। বিসিএস পরীক্ষাসম্পর্কিত কোনো বিষয়ে আপনি অপেক্ষাকৃত কম স্বচ্ছন্দ বোধ করলে, ওই বিষয়ে বিশেষ মনোযোগ দিন। প্রয়োজনে বন্ধু, সহকর্মী বা অন্যদের সহায়তা নিন। বাংলা ও ইংরেজি পত্রিকা পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন। বন্ধুদের সঙ্গে সমসাময়িক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে পারেন, ইংরেজিতে কথা বলার চর্চা করতে পারেন। বিসিএসের জন্য কীভাবে পড়ালেখা করবেন, সে বিষয়ে আপনার নিজের একটি পরিকল্পনা থাকা জরুরি। পড়ালেখার জন্য যতটুকু সময় আপনার আছে, তা কাজে লাগানোর চেষ্টা করুন। পাশাপাশি মানসিক স্বাস্থ্যকে গুরুত্ব দেবেন। এ বিষয়ে সচেতন থাকবেন।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
আসলে চাকরিতে যোগদানের পর একটা দীর্ঘ সময় তো প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণ করতে হবে। মাঠপর্যায়ে আলাদা করে কোনো দায়িত্ব পেতে বেশ সময় হয়তো লেগে যাবে। তাই চাকরিতে যোগদানের পর প্রথম লক্ষ্য থাকবে বনিয়াদি প্রশিক্ষণ এবং ওই সময়ের অন্যান্য প্রশিক্ষণ ভালোভাবে সম্পন্ন করা।
অনুলিখন: আনিসুল ইসলাম নাঈম