অর্থভুবন ডেস্ক
গরিব, অসহায় ও এতিম মানুষের জন্য কাজ করেন আমির হোসেন। দুর্দিনে তাদের পাশে দাঁড়ান। অনাহারীর ঘরে খাবার দেন। গরিবকে টিউবওয়েল দেন। দরিদ্র বৃদ্ধার হাতে তুলে দেন হুইলচেয়ার। অসহায় মেয়ের বিয়ের খরচ বহন করেন। অসহায়দের পাশে দাঁড়ানোর প্রত্যয়ে ২০১৩ সালে গড়ে তুলেছেন রংধনু ব্লাড ড্রাইভার্স।
কুমিল্লার চান্দিনার মেহেরপাড়ায় আমির হোসেনের জন্ম। নিমসার থেকে পড়াশোনা শেষে জাপান চলে যান। পেশাগত জীবনটা গড়ে তোলেন সেখানে। বিদেশ-বিভুঁইয়ে হলেও মন পড়ে রয় তার দেশে। তাই গড়ে তুলেছেন রংধনু ব্লাড ড্রাইভার্স সংগঠন। শুরুতে রক্ত দিয়ে সহযোগিতা করত এই ক্লাব। বর্তমানে তাদের কার্যক্রম বেড়েছে।
২০১৭ সালে উত্তরবঙ্গে বন্যার্তদের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ করেন। টিউবওয়েল দেন। মহামারী করোনায় যখন মানুষ বিধ্বস্ত, সারা দেশে অক্সিজেন শূন্যতা চলছে, তখন তারা দিন-রাত অক্সিজেন নিয়ে ছুটে চলেছেন মানুষের দোরগোড়ায়। রাত যত গভীরই হোক, একটা ফোন পেলেই অক্সিজেন নিয়ে ছুটেছে রংধনু। করোনার কঠিন দিনগুলোতে অসহায় মানুষকে খাদ্য, ওষুধ এবং নগদ অর্থও দিয়েছেন। শুধু নিজ জেলা কুমিল্লায় নয়, দেশের অন্যান্য জেলায়ও মানুষের পাশে দাঁড়াতে শুরু করেন আমির হোসেন। ‘মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারলে আমার ভালো লাগে। অসহায় মানুষের মুখের হাসি আমাকে ভিন্ন রকম তৃপ্তি দেয়। আমি আমৃত্যু মানুষের জন্য কাজ করে যেতে চাই’Ñ বললেন আমির হোসেন।
প্রতিবন্ধীদের নিয়ে কাজ শুরু করেন ২০১৯ সালে। তাদের প্রয়োজন মতো সহযোগিতা করেন। কাউকে নগদ অর্থ দেন। কাউকে এক মাসের বাজার করে দেন। এ যাবৎ ৬২ জনকে হুইলচেয়ার দিয়েছেন। টিউবওয়েল দিয়েছেন ১৭টি। অসহায় নারীকে দেন সেলাই মেশিন। কুমিল্লা চান্দিনার এক অসহায় পরিবারকে ঘর করে দিয়েছেন।
মাদ্রাসার এতিম ছাত্রদের ভরণ-পোষণের দায়িত্ব নিচ্ছেন আমির হোসেন। কাউকে প্রতি মাসে খরচের টাকা দিচ্ছেন। কারও পোশাক ও শিক্ষার উপকরণ দিচ্ছেন। আটটি মাদ্রাসায় ছাত্রদের একবেলা খাবার দিয়েছেন। সেখানে মোট ছাত্র ছিল ৯০০। খাবার দেওয়ার আগে ছাত্রদের চাহিদার কথা জিজ্ঞেস করেন। তাদের চাহিদা অনুযায়ী গরুর গোশত, বিরিয়ানি, মোরগ পোলাও ও খিচুড়ির ব্যবস্থা করেন। ছাত্ররা খুশিমতো খেয়েছেন। আমির হোসেনের এমন সেবা ধারাবাহিকভাবে চলছে।
এ পর্যন্ত ১ হাজারের বেশি কোরআন শরিফ বিতরণ করেছেন বিভিন্ন মাদ্রাসা-মসজিদে। কোরআনের কথা শুনলে কালক্ষেপণ করেন না, সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা করে দেন। বললেন, ‘কোরআন হচ্ছেÑ আমাদের পবিত্র ধর্ম গ্রন্থ। পৃথিবীর সেরা বই। কোরআনের খেদমত করতে পেরে ভালো লাগে।’
বৃদ্ধাশ্রম, এতিমখানা ও হাসপাতাল করার স্বপ্ন দেখছেন। হাসপাতালে অসহায় মানুষকে বিনামূল্যে চিকিৎসা দেবেন। এতিমখানায় বাচ্চারা পড়াশোনা করবে, থাকবে এবং তাদের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ বিনির্মাণে কাজ করবে। ‘ছেলেবেলা থেকেই মানুষের জন্য কিছু করতে চাইতাম। মানবিক টান থেকেই অসহায়ের পাশে দাঁড়াই। প্রবাসী বন্ধুরা আমাকে সহযোগিতা করেন। তাদের সহযোগিতা না পেলে এত কিছু করা সম্ভব নয়।’ বললেন আমির।
পরিবেশ বাঁচাতে ও সবুজ দেশ গড়তে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি হাতে নিয়েছেন। এ যাবৎ ১৫ হাজার গাছ লাগিয়েছেন। লক্ষাধিক গাছ লাগানোর ইচ্ছা আছে আমির হোসেনের।