অর্থভুবন ডেস্ক
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি মুক্ত ও অন্তর্ভুক্তিমূলক ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের স্বার্থে কোয়াডের গুরুত্বের ওপর জোর দিয়েছেন। ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে দুই দেশের শীর্ষ নেতার দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে এ বিষয়ে জোর দেন তারা। পরে এক যৌথ বিবৃতিতে বাইডেন বলেন, ভারত-মার্কিন সম্পর্ক ইতিহাসের যে কোনো সময়ের চেয়ে আরও শক্তিশালী, ঘনিষ্ঠ ও গতিশীল। অন্যদিকে নরেন্দ্র মোদি বলেন, তিনি ২০২৪ সালে ভারতে আয়োজিত পরবর্তী কোয়াড লিডারস সামিটে মার্কিন প্রেসিডেন্টকে স্বাগত জানাতে উন্মুখ। স্থানীয় সময় শুক্রবার রাতে নয়াদিল্লির লোককল্যাণ মার্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবনে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
এদিকে দ্বিপক্ষীয় আলোচনার পর নরেন্দ্র মোদি টুইটারে (এক্সে) এক পোস্ট করে জানিয়েছেন, আলোচনা ফলপ্রসূ হয়েছে। এ আলোচনা ভারত-মার্কিন সম্পর্ক আরও বৃদ্ধি করবে। আমাদের মধ্যে বন্ধুত্ব বৈশ্বিক কল্যাণে ভালো ভূমিকা রাখবে।
গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজি বা আইপিএস কৌশল ঘোষণা করে বাইডেন প্রশাসন। সেখানে প্রেসিডেন্ট বাইডেন এক অবাধ, মুক্ত, সংযুক্ত, সমৃদ্ধ এবং সুরক্ষিত ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের কথা ঘোষণা করেন। এই নীতি বাস্তবায়নে যুক্তরাষ্ট্র অ্যাসোসিয়েশন অব সাউথইস্ট এশিয়ান নেশনস (আসিয়ান), কোয়াড্রিল্যাটেরাল সিকিউরিটি ডায়ালগ (কোয়াড), অস্ট্রেলিয়া এবং ব্রিটেনের মতো মিত্র দেশ ও জোটকে নিয়ে এগিয়ে যেতে চায়।
জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে দিল্লি আসেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। শুক্রবার সন্ধ্যায় ইন্দিরা গান্ধী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ‘এয়ারফোর্স ওয়ান’ অবতরণ করলে বাইডেনকে স্বাগত জানান বেসামরিক বিমান পরিবহণমন্ত্রী জেনারেল (অবসরপ্রাপ্ত) ভিকে সিংহ।
নয়াদিল্লির প্রগতি ময়দানের ভারত মন্ডপম কনভেনশন সেন্টারে জি-২০ শীর্ষ সম্মেলন শুরু হচ্ছে আজ সকালে। এর আগেই শুক্রবার রাতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেন বাইডেন। তিনি মোদির ৭ লোককল্যাণ মার্গের বাসভবনে নৈশভোজেও যোগ দেন।
জো বাইডেনের সঙ্গে ভারতে এসেছেন আমেরিকার ন্যাশনাল সিকিউরিটি অ্যাডভাইজার জ্যাক সুলিভান, ডেপুটি চিফ অব স্টাফ, জেন ও মেলে ডিলন এবং ডিরেক্টর অব ওভাল অফিস অপারেশন টমাসিনি।
আমেরিকা থেকে রওয়ানার আগেই নিজের টুইটারে বাইডেন লিখেছেন, ‘যতবার আমরা (জি-২০) একত্রিত হই, ততবারই আরও উন্নতি করি। আমি জি-২০ সম্মেলনে যোগ দিতে যাচ্ছি, যা আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক সৌহার্দ্যরে প্রধানতম পরিসর। মার্কিন নাগরিকদের অগ্রগতি, উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য সহায়তা প্রদান করতে পারে এমন একটি ফোরাম হিসাবে জি-২০ এর প্রতি আমাদের দৃষ্টি নিবদ্ধ।’
এর আগে আমেরিকার জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জ্যাক সুলিভান জানিয়েছিলেন, বাইডেন-মোদি আলোচনায় প্রাধান্য পাবে প্রিডেটর ড্রোন, ফাইটার জেট ইঞ্জিন, ফাইভ জি/ছিক্স জি প্রযুক্তির মতো বিষয়। এছাড়া শান্তিপূর্ণভাবে পরমাণু শক্তি ব্যবহারসংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে প্রযুক্তি হস্তান্তরের বিষয়গুলোও উঠে আসবে আলোচনায়। তবে আরব বিশ্বের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনে ভারতের সঙ্গে বড় রেলপথ প্রকল্প নিয়ে তিনি কিছু বলেননি।
এদিকে ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে আনন্দবাজার পত্রিকা জানিয়েছে, মোদি-বাইডেন আলোচনায় উঠে আসবে ভারতে কম্পিউটার, ল্যাপটপ, ট্যাবলেট আমদানিতে সাম্প্রতিক নিষেধাজ্ঞা প্রসঙ্গ। গত জুনে মোদির আমেরিকা সফরের সময় বাইডেনের সঙ্গে বৈঠকে এ বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছিল। সামরিক ও মহাকাশ গবেষণা ক্ষেত্রে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতার পরিসর বাড়ানোর বিষয়ও দুই নেতার আলোচনায় আসতে পারে।
সম্মেলন চলাকালীন দুদিন দিল্লির আইটিসি মৌর্য শেরাটনে বিশেষ প্রেসিডেন্সিয়াল স্যুটে থাকবেন জো বাইডেন। বাইডেন এবং তার প্রতিনিধিদলের জন্য হোটেলের প্রায় ৪০০টি কক্ষ ভাড়া নেওয়া হয়েছে।