অর্থভুবন প্রতিবেদক
সৈয়দপুর (নীলফামারী)
এক গ্রামে ৩৫টি পুষ্টিবাগান’ শিরোনামে বিভিন্ন গণমাধ্যম যে সুসংবাদ প্রকাশ করেছিল, তার আড়ালে ঢাকা পড়েছে একটি অনিয়মের খবর। একটি গ্রামে বাগান করে বাকি গ্রামগুলোর ২৮৩টি বাগানের বরাদ্দের টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা এই অনিয়ম করেছেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর অনাবাদি পতিত জমি ও বসতবাড়ির আঙিনায় পারিবারিক পুষ্টি বাগান স্থাপনের উদ্যোগ নেয়।
এ ছাড়া ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে অনাবাদি পতিত জমি ও বসতবাড়ির আঙিনায় ৮৪টি পারিবারিক পুষ্টি বাগান স্থাপনের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে তিন লাখ ১০ হাজার ৮০০ টাকা। প্রতিটি বাগানের জন্য ব্যয় তিন হাজার ৭০০ টাকা।
গত ১৫ দিন সরেজমিনে দেখা গেছে, পারিবারিক পুষ্টি বাগান প্রদর্শনী রক্ষণাবেক্ষণ ও পুনঃস্থাপনে বরাদ্দ করা টাকা ব্যয়ের সময়সীমা পার হওয়ার দুই মাস পরও তা করা হয়নি। ফলে ২০২০-২০২১ অর্থবছরের ২৭টি এবং ২০২১-২০২২ অর্থবছরের ২৫৬টি পারিবারিক পুষ্টি বাগানে নেই কোনো শাক-সবজি।
গত মঙ্গলবার বাঙ্গালীপুর ইউনিয়নের লক্ষ্মণপুর, পাইকারপাড়া ও বালাপাড়ায় গিয়ে পুষ্টি বাগানগুলো বেহাল অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখা যায়।
লক্ষ্মণপুরে ফেন্সি বেগমের পুষ্টি বাগানে গিয়ে দেখা যায়, শুধু কয়েকটি বেগুন ও পেেঁপগাছ রয়েছে। এ ছাড়া আর কোনো শাক-সবজি নেই। ওই কিষানির স্বামী রেজাউল করিম বলেন, ‘কৃষি বিভাগ থেকে বীজ ও নেট আনার জন্য বলেছিল। কিন্তু আমি উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তার কাছে গিয়ে তাঁকে না পেয়ে ফিরে এসেছি।’
গত শনিবার কামারপুকুর ইউনিয়নের ধলাগাছ মুন্সিপাড়ায় কিষানি ওয়াহিদা বেগমের পুষ্টি বাগানে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে কোনো শাক-সবজি নেই। গত বছরের ১ জুন তাঁর বাগানটি স্থাপন করা হয়েছে। ওয়াহিদা বেগম জানান, ওই সময় কিছু বীজ দিলেও এরপর আর কৃষি বিভাগ থেকে কোনো খোঁজখবর নেয়নি। বর্তমানে তাঁর বাগানে দুটি লেবু ও একটি পেঁপেগাছ রয়েছে।
এদিকে কামারপুকুর ইউনিয়নের ব্রহ্মত্তর গ্রামে গত ২০২০-২০২১ এবং ২০২১-২০২২ বছরে ৪১টি পারিবারিক পুষ্টি বাগান স্থাপন করা হয়েছে। আর এ পুষ্টি বাগানগুলোর দিকে কৃষি বিভাগ থেকে সার্বক্ষণিক নজর রাখাসহ তদারকি করা হচ্ছে। কারণ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা কিংবা পারিবারিক পুষ্টি বাগান প্রকল্পের কর্মকর্তারা রংপুর কৃষি অঞ্চলে পরিদর্শনে এলে ব্রহ্মত্তরের এসব বাগান দেখানো হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন কর্মকর্তা জানান, এই প্রতিনিধি পুষ্টি বাগানের খোঁজখবর নেওয়া শুরু করার বিষয়টি জানতে পেরে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তৎপর হয়ে ওঠেন। তিনি পারিবারিক পুষ্টি বাগানের জন্য তড়িঘড়ি করে কিছু বীজ কেনেন। তৈরি করেন বেশ কিছু প্রদর্শনী পুনঃস্থাপন সাইনবোর্ড। আর সেসব নিজের গাড়িতে করে পাঠিয়ে দেন ১৬টি কৃষি ব্লকে। দ্রুত পুষ্টি বাগানগুলোতে শাক-সবজি বীজ বপনের জন্য তাগাদাও দেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা জানান, একটি বাগানের জন্য অফিস থেকে যে পরিমাণ বীজ সরবরাহ করা তা দিয়ে একটি বেড সংকুলান হয় না। অথচ একটি বাগানে রয়েছে পাঁচটি বেড।
সৈয়দপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ধীমান ভূষণ বলেন, ‘আমার দায়িত্বকালে গত আট মাসে বিভিন্ন ইউনিয়ন ও পৌর এলাকায় নতুনভাবে ৬৩টি বাগান স্থাপন করা হয়েছে। আর পুনঃস্থাপন ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য বরাদ্দ দেরিতে পাওয়ায় বীজ ও প্রয়োজনীয় উপকরণ প্রদানে কিছুটা বিলম্ব ঘটেছে। এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া।’ কিন্তু ইউনিয়ন কিংবা পৌরসভা এলাকা অনুযায়ী কতটি বাগান স্থাপন করা হয়েছে তার সঠিক তথ্য দিতে পারেননি তিনি।