অর্থভুবন ডেস্ক
আল্লাহর নির্ধারিত বিধানের সীমা ছাড়িয়ে যখন মানুষ নিজের নফসের প্রতি অতিরিক্ত জুলুম করে, আল্লাহ তায়ালা তখন তার বান্দাদের ওপর নানা ধরনের শাস্তি দিয়ে থাকেন। সেসব আসমানি শাস্তি ও জমিনের বিপদ থেকে নিজে পরিত্রাণ পাওয়ার উদ্দেশ্য যেসব নেক কাজ বা সৎকর্ম করে এগুলো এক ধরনের উসিলা বা মাধ্যম। যেমন নফল রোজা রাখা, নফল নামাজ পড়া, খতমে ইউনুস পড়া, বিসমিল্লাহ পড়া, দান-সাদকা করা, দুরূদ পড়া ইত্যাদি। কেউ কেউ দোয়ার আয়োজন করে, নিজে কুরআন পড়ে, অন্যকে দিয়ে কুরআন তেলাওয়াত করায়, গরিব-দুঃখী মানুষের মধ্যে খাবার বিতরণ করে, এতিমখানায় রান্না করে খাবার পাঠায় ইত্যাদি।
এগুলোর সবকিছুই আল্লাহ তায়ালাকে রাজি-খুশি করানোর উদ্দেশ্যে মানুষ আদায় করে। এর প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে কুরআনুল কারিমে ইরশাদ হয়েছে, ‘হে বিশ্বাসীগণ! আল্লাহকে ভয় করো, তাঁর নৈকট্য লাভের জন্য তোমরা মাধ্যম অনুসন্ধান করো এবং তাঁর পথে সংগ্রাম করো, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পারো।’ (সুরা মায়েদাহ, আয়াত : ৩৫)
আল্লাহ ছাড়া আমাদের দ্বিতীয় আর কোনো সাহায্যকারী নেই। তিনি আমাদের বিপদাপদে সাহায্য করেন, পরিত্রাণ দান করেন। পৃথিবীর সবকিছুই মহান আল্লাহ তায়ালার হুকুমের আজ্ঞাবহ। তাই বিপদাপদ থেকে পরিত্রাণ লাভের জন্য আল্লাহ তায়ালার কাছে সাহায্য চাইতে হবে। আর সাহায্য চাওয়ার পদ্ধতিও কুরআনে আমাদের শিখিয়ে দিয়েছেন। কুরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘ধৈর্য ও নামাজের মাধ্যমে তোমরা সাহায্য প্রার্থনা করো; নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক ধৈর্যশীল মানুষদের সঙ্গে আছেন।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৫৩)
মানুষ বিপদাপদে যখন আল্লাহ তায়ালাকে ডাকাডাকি করে, আল্লাহ তায়ালা বান্দার ডাকে সারা দিয়ে এগিয়ে আসেন। কুরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘কে আছে অসহায় ও বিপন্নের ডাকে সাড়া দেয় যখন সে ডাকে এবং কষ্ট ও বিপদ দূরীভূত করে দেয়?’ (সুরা নামল, আয়াত : ৬২)। আরও বলেন, ‘তোমরা ভয় এবং আশা নিয়ে আল্লাহকে ডাকো। নিশ্চয়ই আল্লাহর রহমত সৎকর্মশীলদের নিকটবর্তী’ (সুরা আরাফ, আয়াত : ৫৬)। আরও বলেন, ‘আমার বান্দারা যখন আপনার কাছে আমার ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করে, (আমি বলি) আমি তো কাছেই আছি; আমি দোয়াকারীর দোয়া কবুল করি- যখন সে আমার কাছে দোয়া করে।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৮৬)
আমরা সুস্থতার জন্য ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাই, কথপোকথনের জন্য ফোন ব্যবহার করি, জীবিকার প্রয়োজন মেটানোর জন্য কৃষি কাজ করি, ব্যবসা-বাণিজ্যে করি, কল-কারখানায় চাকরি করি ইত্যাদি। যে কাজ কর্মই আমরা করি না কেন আল্লাহর সাহায্য কিংবা রহমত ছাড়া সাফল্য লাভ করা অসম্ভব। হযরত আলী (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, দোয়া মুমিনের হাতিয়ার, দ্বীনের স্তম্ভ এবং আসমান জমিনের নূর। (মেশকাত)। হযরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, আল্লাহ তায়ালার কাছে দোয়া অপেক্ষা কোনো জিনিসই অধিক ফজিলত ও সম্মানের নেই। (তিরমিজি, হাদিস : ৩৩৭)। আল্লাহর দয়া ও করুণা পাওয়ার ক্ষেত্রে এসব মাধ্যম বা উসিলা গুরুত্বপূর্ণ। আল্লাহ বোঝার ও আমল করার তওফিক দান করুন। আমিন।